ভারতে গরুর মাংসের উৎসব করায় বেধড়ক পিটুনি
গরুর মাংস নিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশের বিরোধিতা করে সহপাঠীদের সঙ্গে উৎসবে যোগ দিয়েছিলেন এক পিএইচডি গবেষক। আর এ জন্য তাঁকে বেধড়ক পেটালেন বিজেপির সমর্থক অন্য পড়ুয়ারা।
চেন্নাই থেকে পাওয়া খবরে জানা যায়, গত শুক্রবার ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার পশুহাটে পশুর মাংস বিক্রি করার অনুমতি বন্ধ করে দেয়। ধর্মীয় কারণে অথবা বলি দেওয়ার জন্য অথবা মাংস খাওয়ার জন্য গরু, মোষ, ষাঁড়, বাছুরের মতো পশু বাজারে বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়।
কেন্দ্রের এই নির্দেশের প্রতিবাদে গত রোববার চেন্নাইয়ের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে (আইআইটি) বিফ ফেস্টিভালের আয়োজন করা হয়। ওই আয়োজনে অংশ নেন প্রায় ৮০ জন ছাত্র। সেখানে প্রকাশ্যে গরু জবাই করা হয়।
ওই আয়োজনে অংশ নেন আইআইটির মহাকাশবিদ্যা বিষয়ক পিএইচডি গবেষক সুরজ। আর এর জেরেই গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ওই গবেষক যখন মেসে খেতে যাচ্ছিলেন, তখন তাঁর ওপর চড়াও হয় ওই ইনস্টিটিউটের একাধিক পড়ুয়া। তারপর তারা তাঁকে বেধড়ক মারধর করে।
এরপর অন্য ছাত্ররা সুরজকে উদ্ধার করে স্থানীয় এক হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। এ ঘটনায় সুরজের ডান চোখ প্রচণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
এর আগে ভারতে হত্যার উদ্দেশ্যে গরু ও মহিষ কেনাবেচার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির পর দেশটির কেরালা রাজ্যের কান্নুর জেলায় প্রকাশ্যে গো-হত্যা করে, মাংস খেয়ে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। এ ঘটনায় ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
স্থানীয় সময় গত শনিবার ভারতের রাজনৈতিক দল কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (সিপিআই) ও কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন তরুণদের দুটি সংগঠন এই প্রতিবাদ কর্মসূচি করে। তাদের বিরুদ্ধে গতকাল রোববার ‘পশুপাখির ওপর নিষ্ঠুরতা দমন’ আইনে মামলা করা হয়।
নিজ দল কংগ্রেসের কর্মীরা প্রতিবাদের এ পদ্ধতি বেছে নিয়েছে শুনে তীব্র সমালোচনা করেছেন দলটির ভাইস প্রেসিডেন্ট রাহুল গান্ধী। এ ঘটনাকে ‘নৃশংস এবং অগ্রহণযোগ্য’ বলে রোববার মন্তব্য করেন তিনি।
ঘটনাটির তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন কেরালার বিজেপিপ্রধান কুম্মানাম শেখারান। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম টুইটারে ওই প্রতিবাদ কর্মসূচির একটি ভিডিও ছাড়েন তিনি। সেখানে তিনি বলেন, ‘এটা নিষ্ঠুরতা। কোনো স্বাভাবিক মানুষ এটা করতে পারে না।’
এদিকে, প্রথম থেকেই ভারতের বর্তমান সরকারের বিভিন্ন গো-রক্ষাকারী আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে আসছে কংগ্রেসসহ বিভিন্ন বিরোধী দল। মোদি সরকার ভারতের ক্ষমতায় আসার পর দেশটির অধিকাংশ রাজ্যে গো-হত্যা নিষেধ করা হয়। কেরালাসহ হাতে গোনা কয়েকটি রাজ্যে গো-হত্যা বৈধ। তবে নতুন এই আইনের মাধ্যমে এসব রাজ্যেও গো-মাংস বিক্রির পথ বন্ধ হয়ে গেল বলে মনে করছেন সেখানকার বাসিন্দারা। আর এ নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছেন কেরালার গো-মাংসভোজীরা।