ভারতে পর্নোগ্রাফির মহামারি, বন্ধে সুপ্রিমকোর্টের উদ্যোগ
ভারতে ইন্টারনেটে পর্নোগ্রাফি দেখা মহামারি আকার ধারণ করেছে। সরকার ইন্টারনেটে পর্নোগ্রাফি দেখা বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ দাবি করে দেশটির সুপ্রিমকোর্ট উদ্যোগ নিতে যাচ্ছেন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে হাফিংটন পোস্ট জানিয়েছে, ভারতের সুপ্রিমকোর্ট সব ধরনের পর্নোগ্রাফি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, এতে ব্যক্তিগতভাবে বাড়িতে পর্নোগ্রাফি দেখাও নিষিদ্ধ হতে পারে।
ভারতের সুপ্রিমকোর্ট পর্নোগ্রাফি-বিরোধী আইন নিয়ে তোড়জোড় শুরু করলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এর প্রয়োগে দীর্ঘদিন কঠিন যুদ্ধে লড়তে হবে। বিশ্বের শীর্ষ পর্নোগ্রাফির ওয়েবসাইটের মতে, ইন্টারনেটে কম্পিউটারের মাধ্যমে পর্নোগ্রাফি দেখায় বিশ্বের মধ্যে পঞ্চম ভারত। আর মোবাইলে পর্নোগ্রাফি দেখায় ভারতীয়রা চতুর্থ। শীর্ষ ওই ওয়েবসাইটটির মতে, পর্নোগ্রাফি দেখার ক্ষেত্রে ভারতীয়দের মধ্যে বেশ দেশাত্মবোধ দেখা যায়। পর্নোগ্রাফি খোঁজায় ভারতীয়দের প্রথম পছন্দ দেশীয়। এর পরই সবচেয়ে বেশি খোঁজা হয় ‘টিন’।
২০১৩ সালের একটি পিটিশনে ইন্টারনেটে পর্নোগ্রাফি দেখা ‘জামিন অযোগ্য ধারা’ হিসেবে গণ্য করার দাবি ওঠে। অর্থাৎ এই অপরাধে অভিযুক্তকে জামিন পেতে হলে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হবে এবং একজন বিচারকের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের পক্ষে যুক্তি উত্থাপন করতে হবে। কিন্তু একান্তে পর্নোগ্রাফি দেখার কে এমন শাস্তি চাইবে। ওই পিটিশনের পক্ষে যুক্তি হলো, প্রচলিত আইন ইন্টারনেটে পর্নোগ্রাফি দেখার মহামারী বন্ধে যথেষ্ট নয় এবং পর্নোগ্রাফির বিস্তার রোধ করা না হলে নতুন প্রজন্মকে রক্ষা করা যাবে না, একই সঙ্গে নারীর ওপর যৌন নির্যাতনও বন্ধ হবে না। তাদের দাবি, ভারতের বাজারে ২০ কোটির বেশি পর্নো ভিডিও পাওয়া যায়। তবে অনেকের মতে, এই হিসেবে অনেক কম দেখানো হয়েছে।
পিটিশনের পক্ষে আরো দাবি করা হয়, পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত ব্যক্তি নিজের সমাজের মধ্যেও এমন অবস্থার বিস্তার চায়। পর্নোগ্রাফিতে মানুষকে পণ্য হিসেবে দেখানো হয়। যৌন সম্পর্কেও পণ্য হিসেবে দেখানো হয় এবং এর বিক্রি হয়। আর পর্নোগ্রাফি সমাজে স্বীকৃত হলে এর বিক্রিও স্বীকৃত হবে।
ভারতের আইনজীবী বিজয় পাঞ্চওয়ানির মতে, শিশু পর্নোগ্রাফির সহজলভ্যতা মনুষ্যত্বের চরম অবক্ষয় ডেকে আনতে পারে।
চলতি সপ্তাহে এক শুনানিতে আবার পর্নোগ্রাফির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান ব্যক্ত করেছেন সুপ্রিম কোর্ট। তাঁদের মতে, শিশু পর্নোগ্রাফি ছড়ায় এমন ওয়েবসাইটগুলো বন্ধেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ যথেষ্ট নয়। সুপ্রিমকোর্টের আইন এমন হতে পারে যে, প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রেও পর্নোগ্রাফি নিষিদ্ধ হতে পারে। এ ছাড়া নিষিদ্ধ হতে পারে চার দেয়ালের মধ্যে ব্যক্তিগতভাবে পর্নোগ্রাফি দেখাও। তবে সুপ্রিমকোর্ট ব্যক্তিগত স্বাধীনতার আইনের ব্যাপারটিও মাথায় রাখবে।
আইনজীবী পাঞ্চাওয়ানি দাবি করেন, বর্তমান সাইবার আইন অনুযায়ী পর্নোগ্রাফির ওয়েবসাইট বন্ধ করে দিতে হবে। তবে সুপ্রিমকোর্ট বেঞ্চের বক্তব্য হলো, এই বিষয়টি সরকার বুঝবে। এর মধ্যে পর্নোগ্রাফি থাকা সব ওয়েবসাইট বন্ধে তাঁরা কি নির্দেশ দিতে পারেন? একই সঙ্গে এটি মাথায় রাখতে হবে, একজন যদি প্রশ্ন করে চার দেয়ালের মধ্যে ব্যক্তিগতভাবে নিজের বাড়িতে পর্নোগ্রাফি দেখায় সে কী অপরাধ করেছে। সে কি নিজের ব্যক্তি স্বাধীনতার ব্যাপারে কথা বলতে পারে না, যখন সে চার দেয়ালের মধ্যে কোনো আইন পরিপন্থী কাজ করছে না?
শুনতে অদ্ভুত মনে হলেও শিশু পর্নোবিষয়ক আইন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের অনেকে দেশের চেয়ে ভারতে বেশ শিথিল। ভারতের ইন্টারনেট সেবা দাতা প্রতিষ্ঠানগুলো তথ্যসেবা প্রদান করে মাত্র, তারা কোনো মনুষ্যত্ব রক্ষার পুলিশ নয়। সুপ্রিমকোর্টে এই বিষয়টিও তোলা হয়।
জানা সত্ত্বেও ভারতের ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর কি উচিত শিশু পর্নোগ্রাফি ছড়াতে দেওয়া? মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রে বেশ সচেতনতা দেখা গেলেও শিশু পর্নোগ্রাফি বন্ধে তারা বেশ তৎপর। যে কোনো দেশের সংবিধান অনুযায়ী শিশু পর্নোগ্রাফি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।