ইলিশ চলেছে বাংলাদেশে,পশ্চিমবঙ্গের মাথায় হাত
চলতি বর্ষায় বুঝি ইলিশে রসনাতৃপ্তি হচ্ছে না পশ্চিমবঙ্গের ভোজন রসিক বাঙালিদের। ভরা মৌসুমেও ইলিশের দেখা নেই পশ্চিমবঙ্গের নদীগুলোতে। খামখেয়ালি পূবের হাওয়ার পশ্চিমবঙ্গের নদী পেরিয়ে ইলিশ ঢুকে পড়ছে বাংলাদেশের নদীগুলোতে, এমনটাই জানাচ্ছেন মৎস্য বিশেষজ্ঞ আর মৎস্যজীবীরা। অথচ প্রতিবছর সুন্দরবনের পাশে দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জেলার নদীগুলোতেই দেখা মেলে রুপালি ইলিশের।
বেশ কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশ থেকে পদ্মার ইলিশ আমদানি বন্ধ। কয়েক বছর পদ্মার জিভে জল আনা ইলিশের আশায় থেকে সেই আশা ছেড়েছেন কলকাতার ভোজনরসিকরা। ইলশেগুড়ির এই বর্ষায় সবে ধন নীলমনি হিসেবে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন নদী থেকে ধরা পড়া রুপোর শস্যই ছিল পশ্চিমবঙ্গের বাঙালির রসনা মেটানোর একমাত্র পথ। আর এবার সেই পথেই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে আবহাওয়া।
পশ্চিমবঙ্গ মৎস্য বিভাগের পরিচালক (মেরিন) সুরজিৎ বাগ জানালেন, গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে সাগর এলাকায় বইছে পশ্চিমা বাতাস। যা মোটেও পছন্দ নয় ইলিশ মাছেদের। সে কারণেই ইলিশের ঝাঁক পূবালী হাওয়ায় ভেসে চলেছে বাংলাদেশের পথে। সে কারণেই পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন সংলগ্ন ইলিশ অধ্যুষিত নদীগুলোতে এখন আর ইলিশ মিলছে না। যদিও সুরজিৎ জানালেন, আগামী সেপ্টেম্বর অক্টোবরে পূবের হাওয়া ফিরে এলেই সাথে ফিরতে পারে ইলিশও। যদিও তত দিনে মৌসুম প্রায় শেষ হয়ে যাবে।
সুরজিৎ বাগ আরো জানান, প্রতিবার বঙ্গোপসাগরের গভীর সমুদ্রে ইলিশ পাওয়া গেলেও এবার তা পাওয়া যায়নি। উলটো ইলিশের ঝাঁক পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সুন্দরবনের খাঁড়ি থেকে এবং বাংলাদেশের সীমানার খাঁড়িগুলোতে চলে যাচ্ছে। অথচ সুন্দরবনের এই নদীগুলোই ছিল পশ্চিমবঙ্গের ইলিশ সংগ্রহের মূল ক্ষেত্র। এবারের ইলিশ আহরণ মৌসুমেও সেখানে ধরা পড়ছিল ৬০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি ওজনের ইলিশ। হঠাৎ হাওয়া বদলের সাথে হাওয়া ইলিশের ঝাঁকও। আর এর ফলে রাজ্যজুড়ে দেখা দিয়েছে ইলিশের আকাল।
রাজ্যের ইলিশপ্রেমীদের পাশাপাশি মাথায় হাত পশ্চিমবঙ্গের মৎস্যজীবীদেরও। মৎস্যজীবী সংগঠনের মুখপাত্র বিজন মাইতি জানান, প্রতি বর্ষায় ইলিশের ঝাঁক বঙ্গোপসাগর দিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের নদীর খাঁড়িগুলোতে ঢুকে পড়ে। সেখানেই ডিম পাড়ে তারা। আর এই ইলিশ ধরার জন্য মৎস্যজীবীরা সুন্দরবনের নদীগুলোতে পাড়ি জমায়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
বিজন মাইতি আরো বলেন, ‘সরকারিভাবে ১৫ এপ্রিল থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত পাঁচশো গ্রামের কম ওজনের ইলিশ ধরায় কড়াকড়ি ছিল। সময়টি পেরিয়ে যাবার পর মৎস্যজীবীদের জালে প্রচুর পরিমাণে ইলিশ উঠতেও শুরু করেছিল। কিন্তু বরাত মন্দ। পূবালী হাওয়া হঠাৎ বাংলাদেশমুখী হওয়ায় ইলিশের ঝাঁক এখন পশ্চিমবঙ্গের নদী ছেড়ে বাংলাদেশের নদীমুখী হয়েছে।
আচমকা এই ইলিশের আকাল তৈরি হওয়ায় পশ্চিমবঙ্গের মৎস্যজীবী ও আড়তদারদের মাথায় হাত উঠেছে বলেও এনটিভি অনলাইনকে জানালেন বিজন মাইতি। তিনি বলেন, একটা ট্রলার এক সপ্তাহের জন্য সমুদ্রে ইলিশ ধরতে গেলে খরচ পড়ছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। অথচ এখন পর্যাপ্ত ইলিশ ধরা না পড়ায় লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে তাঁদের।
কলকাতার প্রসিদ্ধ ইলিশ ব্যবসায়ী রামচন্দ্র দাস বলেন, সবে বাজারে ইলিশ উঠতে আরম্ভ করেছিল। দামটাও অনেকটাই কমতে শুরু করেছিল প্রথম দিকে ৭৫০ গ্রামের একটা ইলিশ ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি আমরা। এখন সেই ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকা কেজি। ফলে, একদিকে বাংলাদেশ থেকে পদ্মার ইলিশ না আসা আর অন্যদিকে আবহাওয়ার বিরূপ আচরণে আপাতত বর্ষার মৌসুমে ইলিশের স্বাদ থেকে আবার দূরত্ব বাড়ছে পশ্চিমবঙ্গের খাদ্যরসিকদের।