কলকাতার ঈদবাজার মাতাচ্ছে ‘দিদি নম্বর ওয়ান’
রোজার শেষে খুশির ঈদ আসতে আর এক সপ্তাহও বাকি নেই। কলকাতা ও শহরতলীর বাজারগুলোতে এখন কেনাকাটার ধুম। আগামী শনি ও রবিবারের মধ্যে যেদিন চাঁদ দেখা যাবে, সেদিনই ঘোষিত হবে খুশির ঈদ। তাই ঈদ উৎসবের আয়োজনে এখন মাতোয়ারা কলকাতা।
রমজানের শেষ লগ্নে এসে কলকাতার নিউমার্কেট, রাজাবাজার, মল্লিকবাজার, খিদিরপুর, গার্ডেনরিচের বাজারগুলোতে প্রতিদিনই বাড়ছে মানুষের ঢল। কলকাতার পাশাপাশি শহরতলী এবং দূর-দূরান্তের জেলাগুলো থেকেও দলবেঁধে মানুষ আসছে কেনাকাটা সারতে। হরেক রকমের জামা-কাপড়, সালোয়ার-কামিজ, প্যান্ট-শার্টসহ আরো নানাবিধ সামগ্রীর সম্ভারে কলকাতার রাস্তাঘাট অলিগলি রঙিন হতে শুরু করেছে। তবে এবারের ঈদ বাজারে রীতিমতো টেক্কা দিচ্ছে ‘দিদি নম্বর ওয়ান’। প্রতিটি দোকানে এখন ঈদ স্পেশ্যাল এই শাড়ির চাহিদা তুঙ্গে।
প্রত্যন্ত গ্রাম থেকেও ক্রেতারা এসে সবার আগে খোঁজ করছেন ‘দিদি নম্বর ওয়ান’ শাড়ি। ‘দিদি নম্বর ওয়ান’-এর দাপটে এবার অন্যান্য শাড়ি অনেকটাই ব্যাকফুটে । মূলত সিল্ক, শিফন, জর্জেট ও কোটা শাড়ির উপরে নানা রং আর স্পেশাল ডিজাইনের মাধ্যমে তৈরি হয়েছে এই শাড়ি।
এক হাজার ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে এই ‘দিদি নাম্বার ওয়ান’ শাড়ির সর্বোচ্চ মূল্য রয়েছে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত। কলকাতার একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে (জি বাংলা) সম্প্রচারিত ‘দিদি নাম্বার ওয়ান’ প্রোগ্রামের দৌলতে শাড়িটির এই নাম।
টিভি প্রোগ্রামে এই ‘দিদি নাম্বার ওয়ান’ শাড়ির স্পনসর কলকাতার একটি বড়ো বস্ত্র প্রতিষ্ঠান (প্রিয় গোপাল বিষয়ী)। তবে ‘দিদি নাম্বার ওয়ান’ এখন মিলছে খোলা বাজারেও ।
‘দিদি নম্বর ওয়ানের’ সঙ্গে পাল্লা দিতে না পারলেও ক্রেতা চাহিদার দ্বিতীয়, তৃতীয় সারিতে পরপর রয়েছে কিরণমালা শাড়ি, সুমন শাড়ি, হিজাব শাড়িও। ঈদ বাজারে রকমারি এসব শাড়ির পাশাপাশি বিকোচ্ছে সালোয়ার-কামিজ ও চুড়িদার। চিরাচরিত আনারকলি চুড়িদারের সঙ্গে এবারের ঈদে পাল্লা দিচ্ছে বড়দের জন্য মধুবালা চুড়িদার এবং বাচ্চাদের জন্য কিরণমালা চুড়িদার। এ ছাড়া ঈদ কেনাকাটার অন্যতম চাহিদায় রয়েছে বিভিন্ন হ্যান্ডলুম শাড়ি, চান্দেরী সিল্ক, লেহেঙ্গা শাড়ি। সেইসঙ্গে রকমারি সালোয়ার-কামিজ, শেরোয়ানি, কুর্তা, শার্ট, বাবাস্যুট, ট-শার্ট, জিন্স তো রয়েছেই।
হিজাবেরও ব্যাপক চাহিদা রয়েছে এ বছর। মূলত ২৫০ টাকা থেকে শুরু করে পাঁচ হাজার টাকা অবধি দামের পোশাক সব থেকে বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে জানালেন কলকাতার নিউমার্কেট এলাকার এক বিপণন সংস্থার কর্মী মানিক দাস। বললেন, এবারে এই রাজ্যের পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকেও বহু ক্রেতা এসেছেন। তবে মাঝেমধ্যে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির কারণে এত দিন ধরে ঈদের বাজার ওঠাপড়া করলেও এখন কিন্তু দিনরাত এক হয়ে যাচ্ছে ক্রেতা সামলাতে।
একই অভিজ্ঞতার কথা শোনালেন রাজাবাজারের এক বস্ত্র ব্যবসায়ী জাকির আহমেদ, ঈদ যত এগিয়ে আসছে বিক্রি ততই বাড়ছে।
এই রাজাবাজারেই ঈদ উপলক্ষে শতাধিক জামা-কাপড়ের অস্থায়ী দোকান বসেছে। প্রতিটি দোকানেই উপচে পড়া ভিড়। এ ছাড়া ঈদের কেনাকাটার পসরা বসেছে কলকাতার শিয়ালদহ, গড়িয়াহাট, ধর্মতলা চত্বর, হাতিবাগানসহ বিভিন্ন অঞ্চলেও।
ঈদের এই কেনাকাটার মধ্যেই মুসলিম সম্প্রদায়ের ঈদ স্পেশ্যাল রকমারি পোশাক কিনতে আবার ঢুঁ দিতে আরম্ভ করেছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজনও। কারণ সামনেই শারদোৎসব দুর্গাপূজা। তাই পূজার অগ্রিম কেনাকাটা সারতে অনেকেই এই ঈদ মৌসুমেই নেমে পড়েছেন মার্কেটিংয়ে। সব মিলিয়ে উৎসবের কেনাকাটার এখন মাতোয়ারা কলকাতা।