ছিটমহলে জনগণনা সময় শেষ, দিন বাড়ানো দাবি
অবশেষে শেষ হলো ছিটমহলে জনগণনার কাজ। ১০ দিনব্যাপী চলা ভারত-বাংলাদেশের ছিটমহলগুলোতে জনগণনা গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শেষ হয়। তবে এরই মধ্যে ছিটমহলে জনগণনার দিন বাড়ানোর জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন স্থানীয় নেতারা।
ছিটমহলে জনগণনা চলতি মাসের শেষ দিন পর্যন্ত চালু রাখার দাবি জানিয়ে এরই মধ্যে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের কাছে চিঠি দিয়েছেন সংসদের স্বরাষ্ট্র বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য্য।
পাশাপাশি বাংলাদেশ ভূখণ্ডে থাকা ১১টি ভারতীয় ছিটমহলে জনগণনার তারিখ বাড়ানোর জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে চিঠি দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার তৃণমূল সাংসদ রেনুকা সিনহা।
রেনুকা সিনহা বলেন, ‘বাংলাদেশি ভুখণ্ড থেকে ভারতে আসতে চাওয়া অনেক নাগরিকের জনগণনায় নাম তুলতে বাধা দিয়েছে দুষ্কৃতকারীরা। এই অভিযোগ পাওয়ার পরই বিষয়টি ভারত সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশকে জানিয়ে জনগণনার দিন বাড়ানোর দাবি জানিয়েছি আমরা।’
নির্ধারিত দিন পর্যন্ত ভারতীয় ভূখণ্ডে বাংলাদেশি ছিটমহলগুলোতে জনগণনা শান্তিপূর্ণভাবে হয়েছে দাবি করেছেন কোচবিহারের জেলাশাসক পি উলগনাথন। তিনি বলেন, জনগণনার মাধ্যমে ছিটমহলবাসীর ভারত-বাংলাদেশে বসবাসের যে সুযোগ দেওয়া হয়েছিল সেক্ষেত্রে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশি ছিটের কোনো বাসিন্দাই তাঁদের বাড়ি-ঘর, জায়গা-জমি ফেলে বাংলাদেশে যেতে রাজি হয়নি।
বৃহস্পতিবার ছিটমহলের জনগণনা শেষে সর্বোচ্চ উপস্থিতির হার সম্পর্কে কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি কোচবিহার জেলা প্রশাসন। তবে ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির পক্ষ থেকে কমিটির সহ-সম্পাদক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বলেন, জনগণনার শেষ দিনে বিকেল পর্যন্ত উপস্থিতির হার সন্তোষজনক ছিল। কিছু মানুষ কাজের তাগিদে বাইরে থাকায় উপস্থিত হতে পারেনি।
সরকারের নির্দেশিকা অনুযায়ী তালিকায় নাম উঠানো ব্যক্তিরা আগামী ১৯ জুলাই পর্যন্ত তথ্য সংশোধনের সুযোগ পাবে। এমনকি কেউ ভুখণ্ড পরিবর্তনের ইচ্ছা প্রকাশ করলে তাও সংযোজন করা হবে। এরপর আগামী ২০ জুলাই চ্যাংরাবান্দায় ভারত-বাংলাদেশ প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে চূড়ান্ত নামের তালিকা নিয়ে বৈঠক হবে। পরে সেই তালিকা প্রকাশ করা হবে।
ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সম্পন্বয় কমিটির সহ-সম্পাদক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বলেন, এবারের জনসংখ্যা গণনায় দেখা গিয়েছে, ভারত-বাংলাদেশ দুই দেশের ছিটমহলগুলোতে প্রতি বছর এক দশমিক ২৭ শতাংশ হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি ঘটেছে। গত চার বছরে এই হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ০৪ শতাংশ। দুই দেশের ১৬২টি ছিটমহলে এবারের জনগণনায় দুই হাজার ৬২৫ জন নতুন যোগ হয়েছেন। ২০১১ সালের জনগণনায় ছিটমহলের বাসিন্দার সংখ্যা ছিল ৫১ হাজার ৫৮৪ জন। যা এবারের জনগণনায় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৪ হাজার ২০৯ জন। তবে এই তথ্যে সরকারিভাবে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত কোনো সরকারি সিলমোহর দেওয়া হয়নি। কোনো সরকারি আধিকারিক এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
২০১১ সালের সর্বশেষ জনগণনা অনুযায়ী বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতীয় ১১১টি ছিটমহলে বসবাস করতেন ৩৭ হাজার ৩৬৯ জন মানুষ। আর ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলে বসবাস করতেন ১৪ হাজার ২১৫ জন মানুষ। বেসরকারি সূত্রে জানা গেছে, ছিটমহলে জন্মহারের ক্ষেত্রে কোচবিহারের মাথাভাঙ্গা অঞ্চলের ১১টি ছিটে সর্বাধিক ২২০ জন শিশু জন্ম নিয়েছে। এর শুধু মশালডাঙ্গা, দক্ষিণ ও পশ্চিম মশালডাঙ্গা, পুয়াতুরকুঠিতেই জন্ম নিয়েছে ১২৪ শিশু। তবে জনগণনার শেষ দিনে প্রায় প্রত্যেকে একবাক্যে স্বীকার করেছেন উৎসবের মেজাজেই এই কয়দিন ধরে চলেছে জনগণনার কাজ।