১২ বছরের রোহিঙ্গা জসিমের বাংলাদেশযাত্রা
চলমান সহিংসতার মধ্যে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে রোহিঙ্গা শিশু জসিম। কক্সবাজারের উখিয়ার উনচি প্রাঙ্ক শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে সে। ১৩ দিনে কীভাবে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে এলো, সেই কাহিনী আলজাজিরার প্রতিবেদককে জানিয়েছে জসিম। এনটিভি অনলাইনের পাঠকের জন্য তার বক্তব্যের হুবহু ভাষান্তর করে দেওয়া হলো।
‘আমার নাম জসিম। আমার বয়স ১২। মিয়ানমারে এই সহিংসতার আগে আমি স্কুলে যেতাম। আমার প্রিয় বিষয় ইংরেজি। আমি মনে করি, ইংরেজি জানলে সারাবিশ্বের মানুষকে আমার মতামত জানানো যায়। খুব শিগগিরই আমার পড়াশোনা শুরু করতে পারব এই আশা করি। আমি বড় হয়ে একজন শিক্ষক হতে চাই।
সেনাবাহিনী যখন আমাদের গ্রামে ঢুকল,আমরা ভয়ে পালিয়েছিলাম। সেনাবাহিনীর ১০০ থেকে ২০০ সদস্যের একটি দল আমাদের ওপর হামলা করে। তারা আমাদের ওপর গুলি বর্ষণ করে এবং আমাদের অনেক ঘরবাড়িতে আগুন দেয়। আমরা প্রথমে জঙ্গলের মধ্যে লুকিয়ে ছিলাম।
এরপর আমরা বাংলাদেশের দিকে হাঁটা শুরু করি। প্রায় ১৩ দিন আমরা জঙ্গলের মধ্য দিয়ে হেঁটে বাংলাদেশে আসি। এই যাত্রাটি বেশ কঠিন ছিল। কখনো বড় পাহাড় বয়ে উপরে উঠতে হয়েছে। আবার অনেক ছোট ছোট নদীও পাড়ি দিয়েছি এই সময়। আমাদের সব সময় সতর্ক থাকতে হতো। আমার মনে হচ্ছিল, সেনাবাহিনী আমাদের পিছনে পিছনে আসছে। এখনই হয়তো গুলি করবে। বাংলাদেশ সীমান্তে প্রবেশের সময় আমরা আরো বেশি সতর্ক ছিলাম। এই জন্য যে, মিয়ানমার সেনাবাহিনী মাটিতে বোমা পুতে রেখেছিল।
আমাদের গ্রামটা আর নেই। কিছুই আনতে পারিনি আমরা সেখান থেকে। আমি আমার মায়ের সঙ্গে বাংলাদেশে এসেছি। বাবা পরে আসার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত তাঁর কোনো খবর আমরা জানি না। বাবাকে যদি সেনাবাহিনী ধরে নিয়ে যায় অথবা পুতে রাখা বোমায় বাবা পা দেয়। এই নিয়ে আমি খুব চিন্তিত।
আনন্দের বিষয় হলো আমরা এই ক্যাম্পে নিরাপদ। তবে এখানে আমাদের কোনো বাড়ি নেই, রাতে আমরা মাটিতে ঘুমাচ্ছি।
আমি সারাবিশ্বকে একটি বার্তা দিতে চাই, আমরা মিয়ানমারের নাগরিক। যদি আমাদের স্বীকৃতি দেওয়া হয় তাহলে আমরা খুবই আনন্দিত হব।’