রোহিঙ্গা ইস্যুতে ‘ঐক্যে’র ডাক মিয়ানমার সেনাপ্রধানের
রোহিঙ্গা মুসলিম ইস্যুতে ‘এককাতারে’ দাঁড়াতে দেশের মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মিয়ানমারের সেনাপ্রধান। তিনি আরো বলেছেন, তাঁরা এই দেশের মানুষ নন।
সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইয়াংয়ের বাহিনীর বিরুদ্ধে রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গাদের ওপর নির্বিচারে হামলা-নির্যাতন আর ধর্ষণের মাধ্যমে ‘জাতিগত নিধনের’ অভিযোগ রয়েছে।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বলছে, তাঁরা ২৫ আগস্ট পুলিশ ও সেনা ক্যাম্পে হামলার জন্য দায়ী বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে এই ‘নির্মূল অভিযান’ চালাচ্ছেন।
কিন্তু এর ফলে গোটা সীমান্ত এলাকাতেই সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে এবং তার শিকার হয়ে চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছে। নিজ ভূমি থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা অভিযোগ করছে, সেনাবাহিনী তাদের পরিবারের সদস্যদের হত্যা করছে এবং গোটা গ্রাম আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিচ্ছে।
দেশহীন এই জনগোষ্ঠীকে ‘জাতিগত নিধনের’ জন্য হামলা-নির্যাতনের সব ধরনের আলামত আছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের নেতৃবৃন্দ। যদিও মিয়ানমারে সংখ্যালঘু মুসলমানদের ওপর নির্যাতন-বঞ্চনার ইতিহাস খুব পুরোনো।
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী অধ্যুষিত দেশটির অধিকাংশ মানুষই মনে করেন, এরা বিদেশি, বাংলাদেশ থেকে এসেছে। এবং তাদের ‘রোহিঙ্গা’ না বলে ‘বাঙালি’ হিসেবে অভিহিত করে।
জেনারেল মিন অং হ্লাইয়াং গত শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে লিখেন, ‘তাঁরা নিজেদের রোহিঙ্গা হিসেবে স্বীকৃতি দাবি করছে, কিন্তু এই নামে কোনো নৃগোষ্ঠী মিয়ানমারে নেই। বাঙালি ইস্যু এখন জাতীয় সমস্যা এবং এই সত্য প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’
রাখাইনে মুসলিম রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরাই বাড়িঘরে আগুন দিচ্ছে—মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে এমন দাবি করা হলেও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা জানিয়েছে, এরই মধ্যে এই সহিংসতার শিকার হয়ে প্রায় তিন হাজার রোহিঙ্গা প্রাণ হারিয়েছেন।
এই অবস্থার মধ্যে মিয়ানমারের নোবেল বিজয়ী ও ডি ফেক্টো লিডার অং সান সু চির ভূমিকা সারা বিশ্বের বিবেকবান মানুষের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। শান্তিতে নোবেল বিজয়ী বিশ্বের অন্য অনেক নেতাও ‘নীরবতা ভেঙে’ সু চি কে রোহিঙ্গাদের রক্ষায় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েও ব্যর্থ হন।
রাখাইন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য মিয়ানমারে একটি প্রতিনিধিদল পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এ দলের নেতৃত্ব দেবেন মার্কিন উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্যাট্রিক মারফি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মারফি ব্যক্তিগতভাবে সু চির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন এবং রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিতুতে যাবেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারে গণতন্ত্রের পথে দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করে যাচ্ছে।
২০১৫ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে সু চির দল ক্ষমতায় এলেও মিয়ানমারে এখনো প্রভূত ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত রয়েছে সেনাবাহিনীর হাতে।