মর্যাদা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিটমহলের শিক্ষার্থীরা
আর মাত্র ছয়দিন পরেই আসবে সেই প্রতীক্ষিত শুভক্ষণ। যেই সময়ের প্রত্যাশায় হাজারো স্বপ্নের ঝিলিক এখন ভারত-বাংলাদেশের ছিটমহলবাসীর চোখেমুখে। আগামী ৩১ জুলাই ছিটমহলবাসীর তকমা ঘুচিয়ে এর বাসিন্দারা হয়ে যাবেন রাষ্ট্রের নাগরিক। তাই দারুণ আনন্দে সময় পার করছেন ছিটমহলের বাসিন্দারা। তবে এই খুশির মধ্যেও দুশ্চিন্তার কালো মেঘ জমেছে ছিটমহলে লেখাপড়া করা শিক্ষার্থীদের মনে। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ছিটমহল বিনিময় হয়ে যাওয়ার পর তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতার মর্যাদা একই থাকবে তো? না থাকলে ভবিষ্যৎ জীবনে চাকরি আর সামাজিক মর্যাদা নিয়ে সমস্যায় পড়তে হবে তাদের।
অবশ্য ভারতের কোচবিহারের জেলা প্রশাসনের একটি সূত্রে জানা গেছে, ছিটমহলের শিক্ষার্থীদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই। তবে বিষয়টি নিয়ে এখন পর্যন্ত বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিতে পারেননি কেউই।
কোচবিহারের জেলা শাসক পি উলগনাথন অনেক আগেই জানিয়ে রেখেছেন, ছিটমহলবাসীকে প্রশাসনিকভাবে সব রকমের সহযোগিতা করা হবে। তাঁদের যাতে কোনো রকম অসুবিধার মধ্যে পড়তে না হয়, সে ব্যাপারে প্রশাসনিক সব ধরনের সহযোগিতা পাবেন তাঁরা।
তবে এত আশ্বাসের পরেও দুশ্চিন্তামুক্ত হতে পারছে না ছিটের শিক্ষার্থীরা।
আগামী ৩১ জুলাই রাতে দুই দেশের মধ্যে ছিটমহল বিনিময় হয়ে গেলে ভারতের মধ্যে থাকা ৫১টি বাংলাদেশি ছিটের বাসিন্দারা যেমন ভারতের নাগরিকত্ব পাবেন, তেমনি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা ১১১টি ছিটের বাসিন্দারা পাবেন বাংলাদেশি নাগরিকত্ব। যদিও দুই দেশের সরকারই ছিটের বাসিন্দাদের ইচ্ছামতো দেশবদলের সুবিধা দিয়েছে। সেখানে বাংলাদেশ ভূখণ্ডের ভারতীয় ছিটমহল থেকে প্রায় ৯৯৭ জন মানুষ ভারত ভুখণ্ডে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
শিক্ষার্থীদের অনেকেই জানান, ছিটমহলগুলোতে এতদিন ধরে কোনো দেশের নাগরিকত্ব না থাকায় তাঁরা স্থায়ী ভূখণ্ডের কাউকে বাবা-মা কিংবা আত্মীয় বানিয়ে তাঁদের ঠিকানা ব্যবহার করে স্কুল-কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছেন। কিন্তু এবার তাঁরা নাগরিকত্ব পাওয়ায় ছিটমহলের ঠিকানাই তাঁদের আসল ঠিকানা হয়ে যাবে। এই অবস্থার মধ্যে দাঁড়িয়ে শিক্ষাগত যোগ্যতার ক্ষেত্রে সমস্যা হবে কি না তা নিয়ে তাঁরা উদ্বেগে রয়েছেন।
দুই দেশেই এই ধরনের শেকড়হীন পড়ুয়ার সংখ্যা শতাধিক। যাদের একটা অংশ আবার উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত। সেখানে দাঁড়িয়ে শিক্ষার মানদণ্ড এক না থাকলে চূড়ান্ত অসুবিধার মধ্যে পড়বেন তাঁরা।
বিষয়টি নিয়ে ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সহসম্পাদক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত জানান, ‘সরকারের পক্ষ থেকেই যেহেতু দুই দেশের ছিটমহলের বাসিন্দাদের ভুখণ্ড বেছে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল, সেহেতু শিক্ষাগত যোগ্যতার মান দুই দেশের একই রাখা হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। আর সেটা না হলেই চাকরি-বাকরির ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে পড়বে ছিটমহলগুলোর ছাত্রছাত্রীরা।’
তবে ছিটমহলের ছাত্রছাত্রীদের এই বিষয় নিয়ে ভারত-বাংলাদেশের কোথাও কোনো সমস্যা দেখা দিলে আবারও আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন দীপ্তিমান সেনগুপ্ত।