এক হাজার বছর কারাদণ্ড!

মার্কিন নাগরিক ও আদিবাসী নেতা নেসতোরা সালগাদো যখন গত বছরের শেষ দিকে মার্কিন-মেক্সিকো সীমান্ত সফরে এসেছিলেন, তখন ঘুণাক্ষরেও ভাবেননি শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক বন্দী হিসেবে কারাগারে দিন কাটাতে হবে তাঁকে। অথচ এমনটাই ঘটেছে। অসংখ্য মানুষকে অপহরণের দায় মাথায় নিয়ে ১৮ মাস ধরে মেক্সিকোর একটি কারাগারে বন্দী জীবনযাপন করছেন তিনি।
নিজের দেশের বাড়ি গেরেরো প্রদেশের ওলিনালার দরিদ্র মানুষের জন্য সাহায্য নিয়ে গিয়েছিলেন নেসতোরা। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখলেন, শহরটি পুরোপুরি সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। এরা ত্রাস সৃষ্টি করছে, খুন-ধর্ষণ করছে এবং যৌন ব্যবসা ও মাদকের আসক্তিও বাড়াচ্ছে। তিনি যখন এসবের সঙ্গে মেক্সিকোর সরকারি কর্মকর্তাদের যোগসাজশের কথা প্রকাশ করলেন, তখনই অপহরণের দায়ে জেলে পুরে রাখা হলো তাঁকে।
২০১২ সালে স্থানীয় এক ট্যাক্সিচালক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে চাঁদা না দেওয়ায় তাঁকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার পর নেসতোরা একটি কমিউনিটি পুলিশ বাহিনী গড়ে তোলেন। গেরেরো প্রাদেশিক আইন ও মেক্সিকোর সংবিধানে আদিবাসী নাগরিকদের প্রয়োজনে কমিউনিটি পুলিশ বাহিনী গড়ে তোলার অনুমতি দেওয়া আছে। তারই আলোকে এই বাহিনী গড়ে তোলেন তিনি। এর পর ২০১৩ সালে এই বাহিনীর সমন্বয়কারী হিসেবেও নির্বাচিত হন নেসতোরা। তাঁর নজরদারির কারণে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ৯০ শতাংশ কমে যায়। এমনকি কোনো হত্যার ঘটনাও ঘটেনি। একই সঙ্গে তিনি নারীদের পারিবারিক সহিংসতা ও অবমাননার বিষয়েও কাজ করতেন।
ফ্রিডম সোশ্যালিস্ট পার্টির ওয়েবসাইটে নেসতোরাকে আটকের ঘটনা সম্পর্কে আরো বলা হয়েছে, কোনো বিচার ছাড়া শহরটির শেরিফসহ দোষী রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ছেড়ে দিতে অস্বীকৃতি জানালে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ তাঁর ওপর চড়াও হয়। ২০১৩ সালের ২১ আগস্ট সেনারা তাঁকে গ্রেপ্তার করে। এর পর পরিবার থেকে হাজারো মাইল দূরের কারাগারে তাঁকে বন্দী করে রাখা হয়।
তাঁর বিরুদ্ধে আনা হয় অসংখ্য মানুষকে অপহরণের অভিযোগ। এর পরিপ্রেক্ষিতে নেসতোরার এক হাজার বছরের কারাদণ্ডের সাজা দেন দেশটির একটি আদালত।
এ প্রসঙ্গে তাঁর স্বামী জোস লুইস এভিলা বলেন, ‘মেক্সিকোর সবচেয়ে ভয়ানক অপরাধীও এখন ৪৩ বছরের সাজা ভোগ করছে। অথচ নেসতোরার মতো একজন আদিবাসী নারীকে প্রায় এক হাজার বছর কারাভোগের সাজা দেওয়া হয়েছে।’
তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে দেওয়া এ রায়কে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করেন জোস লুইস। তিনি বলেন, ‘আপনি যখন জানেন যে যা করছেন তা আইন অনুযায়ী সঠিক, তার পরও সে কারণে কারাবরণ করতে হলে সেটা মেনে নেওয়া আপনার জন্য খুব কঠিন।’
ইউনাইটেড প্রেস ইন্টারন্যাশনাল (ইউপিআই) তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গেরেরোর অন্তর্বর্তী গভর্নর এ মামলায় নবনিযুক্ত রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে নেসতোরার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রত্যাহার করতে বললেও তিনি তা অস্বীকার করেন।
এরই মধ্যে ওয়াশিংটনে নেসতোরার বাড়িতে গিয়ে তাঁর শাস্তি ও বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানিয়ে এসেছেন তাঁর পক্ষের আইনজীবী লিওনেল রিভেরো রদ্রিগেজ। এই সাজা ঘোষণার পর থেকে নেসতোরার মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ করেছে বিক্ষুব্ধরা। তাঁর মুক্তির দাবিতে সংগ্রহ করা হচ্ছে গণস্বাক্ষর, খোলা হয়েছে ওয়েবসাইট।
এ মামলার কার্যক্রম শেষ হতে পাঁচ বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। শেষ পর্যন্ত মেক্সিকোর সুপ্রিম কোর্টেই বিষয়টির ফয়সালা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।