মিয়ানমারে বন্যায় ৫১ জনের মৃত্যু
মিয়ানমারে ভয়াবহ বন্যায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৫১ জন প্রাণ হারিয়েছে। দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা দ্য গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমারে প্রকাশিত খবরের বরাতে এএফপি জানায়, অবিরাম মৌসুমি বৃষ্টিপাতের কারণে আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসের সৃষ্টি হয়েছে। এতে কয়েক হাজার বাড়িঘর, খামার, সেতু ও রাস্তা ধ্বংস হয়েছে। বন্যার পানির তীব্র তোড়ে ত্রাণতৎপরতাও ব্যাহত হচ্ছে।
উদ্ধারকর্মীরা সোমবার দেশটির প্রত্যন্ত অঞ্চলে আটকা পড়া হাজার হাজার মানুষকে সহায়তার জন্য জোর চেষ্টা চালিয়েছে। এসব এলাকায় বাড়ির ছাদ পর্যন্ত পানিতে ডুবে গেছে।
জাতিসংঘের নিয়মিত বিবৃতিতে এশিয়ার দেশগুলোতে বন্যা পরিস্থিতির বিষয়ে বলা হয়েছে, গত কয়েক দিনে ভারি মৌসুমি বৃষ্টিপাতে সৃষ্ট বন্যা ও ভূমিধসে ভারত, নেপাল, পাকিস্তান ও ভিয়েতনামে কয়েকশ লোক প্রাণ হারিয়েছে।
মিয়ানমারের বন্যা পরিস্থিতি বিষয়ে বলা হয়, দরিদ্র এ দেশটির যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অবকাঠামো অত্যন্ত দুর্বল। জাতিসংঘ সতর্ক করে দিয়ে জানিয়েছে যে কয়েক দিনের মধ্যে দেশটিতে ভয়াবহ এই বন্যার ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত চিত্র পাওয়া সম্ভব নাও হতে পারে।
কর্তৃপক্ষ মিয়ানমারের মধ্য ও পশ্চিমাঞ্চলীয় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত চারটি এলাকাকে ‘জাতীয় দুর্যোগকবলিত এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করেছে।
উত্তরাঞ্চলীয় সাগাইং রিজিয়নের বাসিন্দারা জানান, বন্যার পানি আকস্মিকভাবে গ্রামগুলোতে ঢুকে পড়ে বাড়িঘর ও বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত করে। ৩০ বছর বয়সী আইয়ে মিয়াৎ সু বলেন, ‘বন্যার ভয়াবহতা সম্পর্কে কোনো পূর্ব সতর্কবার্তা ছিল না। আমরা ভেবেছিলাম এটা স্বাভাবিক মৌসুমি বন্যা।’ তিনি আরো বলেন, ‘কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আমাদের পুরো বাড়িই পানিতে ডুবে গেল। আমার স্বামী বাধ্য হয়ে বাড়ির ছাদে উঠে যান। সেখান থেকে বেরুবার কোনো পথ নেই।’
মিয়ানমারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা দেশব্যাপী দুর্গত এলাকাগুলোতে জীবাণুনাশক ক্লোরিন ট্যাবলেটসহ বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসাসামগ্রী বিতরণ করছে। যদিও মন্ত্রণালয়ের কর্মীরা কীভাবে বেশ কয়েকটি বন্যা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় প্রবেশ করতে পারবেন তা নিশ্চিত নয়। কারণ নৌযান ও হেলিকপ্টারের স্বল্পতা রয়েছে।
প্রচণ্ড বৃষ্টিপাতে রাখাইন রাজ্যে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সেখানে প্রায় এক লাখ ৪০ হাজার গৃহহারা মানুষ রয়েছে। এদের অধিকাংশই রোহিঙ্গা মুসলিম। ২০১২ সালে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সঙ্গে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সহিংসতার পর তারা উপকূলীয় অস্থায়ী শিবিরগুলোতে অবস্থান করছে।