দিল্লির চা-ওয়ালার উপন্যাস বিক্রি হয় অ্যামাজনে
দিল্লির ফুটপাতের একজন চা-ওয়ালা তিনি। অন্য সব চায়ের দোকানির মতো ফুটপাতে চা বিক্রির সরঞ্জামের সাজানো পসরা তাঁর। নিত্য হাজারো লোক পান করছে তাঁর হাতের বানানো চা। কিন্তু এদের অনেকেরই হয়তো জানা নেই, যে হাত দিয়ে তিনি চা বানাচ্ছেন- সেই হাতেই লিখেছেন ২৪টি উপন্যাস। আর তাঁর উপন্যাস বিক্রি হচ্ছে বিশ্বখ্যাত অনলাইন বুকস্টোর অ্যামাজান ডটকমেও।
দিল্লির ফুটপাতের চা-ওয়ালা লক্ষ্মণ রাওয়ের দোকানটিও একটু আলাদা। খোলা আকাশের নিচে ইটের ওপর বসে চা বানিয়ে বিক্রি করেন তিনি। তবে তাঁর দোকানের পাশেই সাজানো থাকে তাঁর লেখা উপন্যাসগুলো। বইপ্রেমীদের অনেকেই চা খাওয়ার পাশাপাশি তাঁর বইগুলো নাড়াচাড়া করে দেখেন। কেনেনও কেউ কেউ।
পশ্চিম ভারতের মহারাষ্ট্রে এক কৃষক পরিবারে লক্ষ্মণ রাওয়ের জন্ম। লেখক হওয়ার স্বপ্ন বুকে নিয়ে ১৯৭৫ সালে তিনি দিল্লিতে আসেন। সেখানে জীবন সংগ্রামে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করেছেন,রেস্টুরেন্টে থালা-গ্লাস পরিষ্কার করেছেন। সেই আয়ের অর্থ জমিয়ে প্রথমে তিনি পান-সিগারেটের দোকান দেন এবং পরে এই চায়ের দোকান খোলেন।
শিক্ষার দিকে দিয়েও লক্ষ্মণ রাও কিন্তু পিছিয়ে নেই। তিনি হিন্দি ভাষায় স্নাতক ডিগ্রি নিয়েছেন। দূরশিক্ষণের মাধ্যমে স্নাতকোত্তর ডিগ্রির পরীক্ষাতেও বসেছেন।
প্রথম বইটি প্রকাশের জন্য লক্ষ্মণ রাও প্রকাশকদের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেছেন। কিন্তু ফুটপাতের এক চা দোকানির বই প্রকাশের জন্য অর্থ বিনিয়োগ করতে রাজি হননি কেউই। শেষে ১৯৭৯ সালে টাকা জমিয়ে নিজেই প্রকাশ করেন প্রথম উপন্যাসটি।
এরপর নিজের একটি প্রকাশনী খোলেন তিনি। সেখান থেকেই ১৯৯২ সালে প্রকাশিত হয় তার বেস্ট সেলার উপন্যাস ‘রামদাস’। তৃতীয় সংস্করণে এসে বইটি বিক্রি হয়েছে মোট চার হাজার কপি। পাওয়া যাচ্ছে অ্যামাজন ও ফ্লিপকার্টের মতো অনলাইন বুকস্টোরেও। অনলাইনে এই বই বিক্রির দিকটা দেখাশোনা করেন লক্ষণ রাওয়ের ছেলে হিতেশ । সাহিত্যিক বাবার নামে একটি ফেসবুক পেজ খুলে সেটিরও দেখাশোনা করছেন হিতেশ।
অ্যামাজন ইন্ডিয়ার এক মুখপাত্র বিবিসিকে বলেন,‘আমাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তাঁর বইগুলো ভালো বিক্রি হচ্ছে। লক্ষ্মণ রাওয়ের মতো লেখককে খুঁজে পেয়ে আমরা খুবই খুশি।’
অনলাইনে বই বিক্রি হওয়া সত্ত্বেও বহু বছরের অভ্যাসটি ছাড়তে পারেননি লক্ষ্মণ রাও। তিনি এখনো সাইকেলে করে বিভিন্ন স্থানে তার বই বিক্রি করেন।
লেখালেখির এই স্বীকৃতিস্বরূপ বেশ কয়েকটি পুরস্কার পেয়েছেন এই সাহিত্যিক। ১৯৮৪ সালে জাতীয় কংগ্রেসের এক শীর্ষ সদস্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্ধিরা গান্ধীকে লক্ষ্মণের বই সম্পর্কে জানান। এর কয়েকদিনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী দপ্তর থেকে আমন্ত্রণ পেয়ে লক্ষ্মণ ইন্ধিরা গান্ধীর সঙ্গে দেখা করেন এবং তাঁর লেখা কয়েকটি বই উপহার দেন। এরপর দেখা করেছেন দেশটির সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাতিলের সঙ্গেও। কিন্তু তাঁর আক্ষেপ, দেশের কোনো সাহিত্য উৎসবে এখনো তাঁকে ডাকেনি কেউ।