স্ত্রীর মুখে ব্রণ, তাই বিচ্ছেদ!
অনেক স্বপ্ন আর প্রত্যাশা থেকে শুরু হয় দুটি মানুষের দাম্পত্য জীবনের। অনেক সময়ই দেখা যায়, প্রত্যাশার পারদের ওঠানামার কারণে আর স্বপ্নের সঙ্গে বাস্তবের অমিলের কারণে তা ভেঙে যায়। নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া না হওয়া, অত্যাচারসহ নানা কারণে ভেঙে যায় সংসার।
কিন্তু স্ত্রীর মুখে অতিরিক্ত ব্রণও যদি বিচ্ছেদের কারণ হয়, তাহলে?
শুনতে অবিশ্বাস্য শোনালেও পাশের দেশ ভারতেই ঘটছে এমন ঘটনা। শুধু ব্রণের দাগ নয়, স্ত্রীর পোশাক-পরিচ্ছদ পছন্দ না হওয়ায় তার সঙ্গে বিচ্ছেদ চেয়ে আবেদন করার ঘটনাও দেশটিতে ঘটেছে।
এখন পর্যন্ত গোটা বিশ্বের তুলনায় ভারতে বিবাহবিচ্ছেদের হার কম। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দেশটিতে বিচ্ছেদের ঘটনা ধীরে ধীরে বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের বেশির ভাগ বিচ্ছেদের মামলা করা হয় মানসিক নির্যাতন, অবমাননা কিংবা নিষ্ঠুর আচরণের কারণে। তবে এই অবমাননা বা মানসিক নির্যাতনকে কীভাবে সংজ্ঞায়িত করা হবে, তা নিয়ে লম্বা বিতর্ক রয়েছে। বিশেষ করে যখন বিবাহবিচ্ছেদের মামলায় এই ‘মানসিক নির্যাতন’কে নির্ধারণ করতে গিয়ে বিপাকে পড়ছেন খোদ বিচারকরা।
ভারতের সুপ্রিম কোর্ট বলছেন, দাম্পত্য জীবনের মানসিক অত্যাচার নির্ধারণের কোনো নির্দিষ্ট মাপকাঠি নেই। কারণ, ঠিক কী কারণে বিচ্ছেদ হতে পারে তার নির্দিষ্ট কোনো মানদণ্ড নেই। তবে বিবাহবিচ্ছেদ চাওয়ার কিছু অদ্ভুত কারণ জানিয়েছে বিবিসি। এনটিভি অনলাইনের পাঠকদের জন্য সেগুলোই তুলে ধরা হলো।
স্ত্রী পার্টিতে যায়, তাই চাই বিচ্ছেদ
২০১১ সাল থেকে পারিবারিক আদালতে চলতে থাকা একটি মামলার নিষ্পত্তি করেছেন মুম্বাইয়ের হাইকোর্ট। একজন নাবিকের করা ওই বিবাহবিচ্ছেদ মামলায় তিনি দাবি করেন, তাঁর স্ত্রী নিয়মিত পার্টিতে যান এবং এটা তাঁর ওপর এক ধরনের মানসিক নির্যাতন। আদালত পর্যবেক্ষণে দেখতে পান, ৪২ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি ১৯৯৯ সালে বিয়ে করেন। তাঁর নিজেরও পার্টিতে যাওয়ার অভ্যাস আছে। এমনকি ওই স্ত্রী তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে শারীরিক বা মানসিক অত্যাচারের অভিযোগও আনেননি।
মুম্বাই হাইকোর্টের বিচারক এম এল তাহালিয়ানি বলেন, যেহেতু ওই ব্যক্তি নিজেও পার্টিতে যান, তাই স্ত্রীর পার্টিতে যাওয়াকে তাঁর ওপর মানসিক নির্যাতন বলে গণ্য করা যাবে না।
স্ত্রীর যৌন আসক্তি বিরক্তিকর
অন্যদিকে, পুরো বিশ্বেই যৌনতাবিবর্জিত দাম্পত্যজীবন বিবাহবিচ্ছেদের একটি বড় কারণ। তবে এর উল্টো ঘটনাও আছে। গত বছর মুম্বাইয়ের এক ব্যক্তি অতিরিক্ত যৌনাসক্তির কারণে তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেন। আবেদনে তিনি বলেন, তাঁর স্ত্রীর যৌন আসক্তি খুব বেশি। ২০১২ সালে বিয়ের পর থেকে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের জন্য সব সময় জোর করেন তাঁর স্ত্রী। এমনকি ওই ব্যক্তি অসুস্থ থাকলেও শারীরিক সম্পর্ক করতে চাপ দেন তাঁর স্ত্রী। আর ব্যক্তিটি রাজি না হলে অন্য ব্যক্তির সঙ্গে থাকার ভয়ও দেখান ওই স্ত্রী।
ওই ব্যক্তি বলেন, তাঁর স্ত্রীর একগুঁয়ে, আক্রমণাত্মক ও স্বৈরশাসকের মতো আচরণের কারণে তাঁর পক্ষে একসঙ্গে থাকা সম্ভব নয়। এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সব তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে গত বছর মুম্বাইয়ের একটি আদালতে ওই ব্যক্তির বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন মঞ্জুর করেন। শুনানি শেষে মুম্বাইয়ের একটি পারিবারিক আদালত স্বামীর আবেদন মঞ্জুর করেন।
শার্ট-ট্রাউজার পরায় বিচ্ছেদ
এদিকে, স্ত্রীর পোশাক পছন্দ না হওয়ার কারণেও ভারতে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করার ঘটনা ঘটেছে। স্ত্রীর পোশাক পরিচ্ছদ সম্পর্কিত জ্ঞান ভালো নয় এমন অভিযোগ এনে একে তাঁর প্রতি নিষ্ঠুরতা ও মানসিক নির্যাতন বলে দাবি করে বিচ্ছেদের আবেদন করেন এক ব্যক্তি। তিনি আদালতকে জানান, তাঁর স্ত্রী প্রায়ই ভারতীয় পোশাকের বদলে শার্ট আর ট্রাউজার পরে অফিস করতে চলে যান, যা তাঁকে খুবই মর্মাহত করে। এটা তাঁর জন্য এক ধরনের মানসিক নির্যাতনের শামিল। তাই স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ চান তিনি।
তিন বছর আগে এ ঘটনায় বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন মঞ্জুর করেন ভারতের একটি পারিবারিক আদালত। তবে গত বছরের মার্চ মাসে পারিবারিক আদালতের এ রায় পাল্টে দেন উচ্চ আদালত। হাইকোর্ট তাঁর রায়ে বলেন, ‘মানসিক নির্যাতনকে এত ব্যাপকভাবে দেখা যাবে না। তাহলে দুটি মানুষের মধ্যে প্রতিটি অসংগতিই তাঁদের সম্পর্ককে বিবাহবিচ্ছেদের দিকে নিয়ে যাবে।’
ব্রণ জ্বালাতন
স্ত্রীর ব্রণের সমস্যার কারণে বিরক্ত হয়ে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করার নজিরও ভারতে আছে। পারিবারিকভাবে বিয়ে ঠিক করা হয় এক ব্যক্তির। বিয়ের কিছুদিন পরেই তিনি তাঁর বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেন। সেখানে তিনি লেখেন, তাঁর স্ত্রীর মুখে ব্রণের দাগ ও ফোঁড়ার কারণে ১৯৯৮ সালে মধুচন্দ্রিমায় গিয়েই দাম্পত্য জীবনের ইতি টানার ইচ্ছা হয় তাঁর। এসব ব্রণ ও দাগের কারণে তিনি আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এই ব্রণ তাঁকে ভীষণভাবে মানসিক যন্ত্রণা দিচ্ছে।
আদালতে ওই নারীর চিকিৎসক জানান, তাঁর মুখের এই ব্রণের সমস্যা চিকিৎসা করলে ভালো হয়ে যাবে এবং এটা তাঁর যৌনজীবনে কোনো প্রভাব ফেলবে না।
কিন্তু চিকিৎসকের বক্তব্যের পরও ওই ব্যক্তির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০২ সালে মুম্বাইয়ের একটি পারিবারিক আদালত বলেন, ‘স্ত্রীটির অবস্থা নিঃসন্দেহজনকভাবে করুণ। কিন্তু এটা তাঁর স্বামীর জন্যও আতঙ্কের ব্যাপার। ওই নারী তাঁর চর্মরোগের কথা লুকিয়ে স্বামীর সঙ্গে প্রতারণা করেছেন।’
ভারতের হিন্দু বিবাহ আইন অনুযায়ী ব্রণের মতো চর্মরোগকে কারণ হিসেবে দেখিয়ে তার ভিত্তিতে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করা যায় না। তবে সংক্রামক রোগ, যেমন—এইচআইভি বা হেপাটাইটিস-বি’র ভিত্তিতে বিচ্ছেদের আবেদন করা যায়।