ভারতের প্রভাবশালী নেতা করুণানিধি আর নেই
চলে গেলেন দক্ষিণ ভারতের প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ ও তামিলনাড়ুর সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মুথুভেল করুণানিধি। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চেন্নাইয়ের কাবেরি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর।
গত ২৮ জুলাই থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন করুণানিধি। মূত্রনালিতে সংক্রমণ, জ্বর ও একাধিক বার্ধক্যজনিত শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি।
চেন্নাইয়ের কাবেরি হাসপাতালে বিশেষ মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছিল। কয়েকদিন আগে তাঁর শারীরিক অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল হলেও গতকাল সোমবার থেকে আবার অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। চিকিৎসকেরা জানান, তাঁর শরীরের সব অঙ্গ ঠিকমতো কাজ করছে না। বিশেষ করে লিভার কাজ করছিল না। আজ দুপুর থেকেই তাঁর শারীরিক অবস্থার ক্রমশ অবনতি ঘটতে থাকে। সবরকম চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দিচ্ছিলেন না। সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটে মারা যান তিনি।
১৯২৪ সালে তামিলনাড়ুর নাগাপট্টিনাম জেলার তিরুকুভালাই গ্রামে জন্ম করুণানিধির। তিনি ভালো আঁকতেন, লিখতেন সিনেমার চিত্রনাট্য। তামিল সাহিত্য জগতে তাঁর অবদান ছিল বেশ। তাঁর লেখা গল্প, নাটক, উপন্যাস তাঁকে পৌঁছে দিয়েছিল তামিলনাড়ুর মানুষের মনে।
‘রাজাকুমারী’, ‘পরাশক্তি’, ‘অভিমন্যু’, ‘মনোহরা’, ‘পানাম’, ‘কাঞ্চি থালাইভান’সহ অনেক বিখ্যাত ও কালজয়ী সিনেমার চিত্রনাট্য লিখে তিনি জনপ্রিয় হয়েছিলেন। একসময় তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, তামিলনাড়ুর দ্রাবিড় জাতির কষ্টের কথা। ঠিক করেছিলেন কিছু একটা করতে হবে। তামিল মানুষের মন জয় করে রাজনীতিতে নামেন। ১৯৬৯ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত নানা সময়ে পাঁচবার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন তিনি। টানা ১০ বার দ্রাবিঢ় মুনেত্রা কাজাঘাম (ডিএমকে) দলের সভাপতি ছিলেন।
মাত্র ১৪ বছর বয়সে সামাজিক আন্দোলনে যুক্ত হয়ে পড়েন করুণানিধি। গঠন করেন ‘অল স্টুডেন্টস ক্লাব’। দ্রাবিড় আন্দোলনের এটাই ছিল প্রথম পদক্ষেপ। ১৯৫৩ সালে যাত্রা শুরু করে তৈরি হয় ডিএমকে। দলের মুখপাত্র ‘মুরাসোলি’ কাগজে লিখতে শুরু করেন। কাল্লাকুড়ি আন্দোলন তাঁকে তামিল রাজনীতিতে জনপ্রিয় করে তোলে। ১৯৫৭ সালে মাত্র ৩৩ বছর বয়সে কুলিথালাই বিধানসভা আসন থেকে জয়ী হয়ে তামিলনাড়ু বিধানসভায় প্রবেশ করেন তিনি।
১৯৬২ সালের বিরোধী দলনেতা এবং ১৯৬৭ সালে তাঁর হাত ধরে তামিলনাড়ুতে ক্ষমতায় আসে ডিএমকে। ১৯৬৯ সালে হন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি ৭০ সালে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর জারি করা জরুরি অবস্থার প্রতিবাদ করেছিলেন শাসকদলের নেতা হয়েও। ১৯৭০ সালে প্যারিসে তৃতীয় বিশ্ব তামিল সম্মেলনে তিনি বিশেষ বক্তব্য দেন। তার পরই ১৯৭১ সালে আন্নামালাই বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সাম্মানিক ডক্টরেট ডিগ্রি দেয়। তামিল বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ‘রাজা রাজন’ পুরস্কার দেয়। ২০০৬ সালের ১৫ ডিসেম্বর মাদুরাই কামরাজ বিশ্ববিদ্যালয়ও তাঁকে সাম্মানিক ডক্টরেট দেয়। মুসলিম সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকেও তাঁকে ‘ইয়ারান–ই–মিলাথ’ সম্মানে ভূষিত করা হয়।