নিলামে উঠছে হকিংয়ের জিনিসপত্র
কিংবদন্তি বিজ্ঞানী প্রয়াত স্টিফেন হকিংয়ের মূল্যবান বেশ কিছু ব্যক্তিগত জিনিসপত্র নিলামে উঠতে যাচ্ছে। চলতি মাসের শেষের দিকে যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের বিখ্যাত নিলামঘর ‘ক্রিস্টিস লন্ডন’ ওই নিলামের আয়োজন করবে বলে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
নিলামে তোলা জিনিসপত্রের মধ্যে থাকবে স্টিফেন হকিংয়ের পিএইচডি থিসিসের একটি কপি, তাঁর শুরুর দিকের ব্যবহার করা একটি হুইলচেয়ার, একটি জ্যাকেট, কিছু মেডেল ও তাঁকে নিয়ে বানানো বিখ্যাত আমেরিকান অ্যানিমেটেড টিভি সিরিজ ‘দ্য সিম্পসন’র এক পর্বের একটি চিত্রনাট্য।
অক্টোবরের ৩১ তারিখ থেকে নভেম্বরের ৮ তারিখ পর্যন্ত ক্রিস্টির লন্ডন কার্যালয়ে নিলামের উদ্দেশ্যে ওই সব জিনিসপত্র প্রদর্শনীতে রাখা হবে বলে সিএনএন জানায়।
নিলামে সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত আর আকর্ষণীয় হয়ে দেখা দেবে ‘প্রপার্টিজ অব এক্সপেন্ডিং ইউনিভার্স’ নামে ১৯৬৫ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে করা হকিংয়ের মূল পিএইচডি থিসিসের কপিটি। সেই সময়কার মূল কপিগুলোর অবশিষ্ট পাঁচটি থিসিস পেপারের একটি হলো এটি। এর সম্ভাব্য অর্থমূল্য এক থেকে দেড় লাখ পাউন্ড। হকিংয়ের হাতের লেখাসংবলিত থিসিস পেপারটি প্রমাণ করে, এটি সে সময়কার মূল থিসিস পেপারের কপিগুলোর একটি।
হকিং মারা যাওয়ার কয়েক মাস আগে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় নিজেদের ভার্চুয়াল সংগ্রহশালায় তাঁর থিসিস পেপারটি সংরক্ষণ করে। সেটি সবার জন্য উন্মুক্ত, এমন খবর প্রচার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এত মানুষ সেটি দেখার ও পড়ার আগ্রহ দেখায় যে ওয়েবসাইট সেই চাপ নিতে না পেরে বিকল হয়ে যায়। শুধু তাই নয়, মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে থিসিসটির ৬০ হাজার কপি ডাউনলোড করা হয়।
আসন্ন নিলামের অন্যতম আরেক আকর্ষণ হলো হকিংয়ের প্রথম দিকের ব্যবহার করা হুইলচেয়ার। ১৯৬৩ সালে মাত্র ২১ বছর বয়সে এমিওট্রপিক ল্যাটেরাল স্ক্লেরোসিস (এএলএস) নামে স্নায়ুবিধ্বংসী এক অসুখ ধরা পড়ে স্টিফেন হকিংয়ের। ওই অসুখে স্নায়ু ধীরে ধীরে ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়ায় রোগী বেশি দিন বাঁচে না। হকিংকেও ডাক্তাররা বলে দিয়েছিলেন, উনি মাত্র কয়েক বছর বাঁচবেন। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে তিনি দীর্ঘ ৭৫ বছরের আয়ুষ্কাল লাভ করেন।
অসুখটি হকিংকে ধীরে ধীরে পঙ্গুত্বের দিকে নিয়ে যায়। চলাফেরার জন্য একসময় তাঁকে হুইলচেয়ার ব্যবহার করতে হয়। ধীরে ধীরে এমন অবস্থায় চলে যান যে কেবল একটি হাতের কয়েকটি আঙুল নাড়াচাড়া করতে পারতেন তিনি। কথা বলা, গোসল, খাওয়া, পোশক পরা সবকিছুর জন্যই তিনি প্রযুক্তি বা অন্যদের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন।
হকিংকে চলাফেরায় সহায়তা করা প্রথম দিকের একটি হুইলচেয়ার তোলা হচ্ছে নিলামে। এটিকে পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি পথ পাড়ি দেওয়া হুইলচেয়ার বলে অভিহিত করেছে নিলামঘর ক্রিস্টিস। কারণ এটি ব্যবহারকালীন হকিং ছিলেন খ্যাতির চূড়ায়। সে সময় দেশে-বিদেশে প্রচুর ভ্রমণ করেছেন তিনি, তাঁর সঙ্গে ভ্রমণ করেছে হুইলচেয়ারটিও। চেয়ারটি নিয়ে তাই এভাবেই মজা করে আগ্রহীদের মনোযোগ তৈরি করেছে ক্রিস্টিস। এটির সম্ভাব্য মূল্য ১০ হাজার পাউন্ড থেকে ১৫ হাজার পাউন্ড।
হুইলচেয়ার বিক্রির অর্থ ‘স্টিফেন হকিং ফাউন্ডেশন’ ও ‘মটর নিউরন ডিজিস অ্যাসোসিয়েশন’-এ প্রদান করা হবে বলে জানিয়েছে ক্রিস্টি।
নিলামের আরেকটি দুর্দান্ত আকর্ষণ হতে যাচ্ছে আমেরিকান বিখ্যাত অ্যানিমেটেড টিভি সিরিজ ‘দ্য সিম্পসন’র এক পর্বের একটি পাণ্ডুলিপি। সিম্পসনের ওই পর্বটি টেলিভিশনে প্রচার করা হয়েছিল ২০১০ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর। নিজেদের ওয়েবসাইটে ক্রিস্টি জানায়, ‘১০ বছর সময়কালে স্টিফেন হকিং চারবার সিম্পসন টিভি সিরিজে হাজির হন। মজা করে হকিং বলতেন, বিজ্ঞানে অবদান তাঁকে যতোটুকু খ্যাতি এনে দিয়েছে, সিম্পসনে হাজির হওয়া তাঁকে তার চেয়ে বেশি খ্যাতি এনে দিয়েছে।’
নিলামে ওঠা বাকি জিনিসের মধ্যে আরো আছে হকিংয়ের টিপসই দেওয়া ‘আ ব্রিফ হিস্টরি অব টাইম’ বইয়ের একটি কপি। এটির সম্ভাব্য মূল্য দুই থেকে তিন হাজার পাউন্ড। এ ছাড়া তাঁর আর কিছু মেডেল ও স্মারক নিলামে তোলা হবে।
আসন্ন এ নিলাম উপলক্ষে এক বিবৃতিতে স্টিফেন হকিংয়ের মেয়ে লুসি হকিং বলেন, ‘আমাদের প্রাণপ্রিয় বাবার ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে ব্যবহৃত বিভিন্ন মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে ক্রিস্টি নিলামঘরের এই আয়োজনে আমরা আনন্দিত। বাবার গুণমুগ্ধদের জন্য তাঁর স্মৃতিচিহ্নবাহী দুর্দান্ত সব জিনিসপত্র সংগ্রহে রাখার জন্য এটি এক দারুণ সুযোগ।’