বাংলাদেশে বিনিয়োগে মার্কিন ব্যবসায়ীদের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
বাংলাদেশে বিনিয়োগের অপার সম্ভাবনা রয়েছে জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে সঙ্গে তাঁরা যেন বিনিয়োগ করার অর্থ ফিরে পান, তার জন্য বিনিয়োগ ব্যবস্থা সহজ করে দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
নিউইয়র্কের হোটেল ওয়ালডর্ফে বিজনেস কাউন্সিল ফর ইন্টারন্যাশনাল আন্ডারস্ট্যান্ডিং (বিসিআইইউ) আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনায় এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা। যুক্তরাষ্ট্রের ২৭টি বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তারা এতে অংশ নেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আপনাদের নিশ্চিত করতে চাই যে বাংলাদেশে ব্যবসা করা আপনাদের জন্য একটি আকর্ষণীয় সুযোগ হবে।’
সরকারি বার্তা সংস্থা বাসস জানায়, বাংলাদেশের প্রতি আগ্রহ পোষণের জন্য বিসিআইইউকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে দ্রুত বিকাশমান অর্থনীতির দেশ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ব্যবসা ও বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ একটি প্রতিযোগিতামূলক সক্রিয় পরিবেশ দেবে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের বিনিয়োগ-সংক্রান্ত নীতিমালায় সব ধরনের সামঞ্জস্য দেওয়ার নিশ্চয়তা দিচ্ছি।’
দূরদর্শী অর্থনৈতিক নীতি ও নেতৃত্ব বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান শক্তি বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এখন বাংলাদেশ বিশ্বের চতুর্থ দ্রুততম ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির দেশ। গত ছয় বছর বাংলাদেশ অর্থনীতির গড় প্রবৃদ্ধির হার ৬ দশমিক ২ শতাংশ ধরে রেখেছে। বর্তমানে এই প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।’
গত ছয় বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা আরো বলেন, বাংলাদেশে খুব দ্রুত অর্থনৈতিক রূপান্তর ঘটছে। দেশের ৯০ শতাংশ বার্ষিক চাহিদা অভ্যন্তরীণভাবেই মেটানো সম্ভব হচ্ছে। এসএমই খাতের পাশাপাশি দেশের গ্রামীণ অর্থনীতিও সমৃদ্ধ হচ্ছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দেশের শস্য, হাঁস-মুরগি, গবাদিপশু ও মৎস্য উৎপাদনের হার বাড়ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। সে সঙ্গে দেশের কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকদের জন্য উন্নত ব্যবস্থা ও নিরাপদ কর্মস্থল নিশ্চিত করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। বিশেষত, পোশাকশিল্পে পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সচেতনতা নিশ্চিত করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
গোলটেবিল আলোচনায় বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প খাতের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। স্থানীয়ভাবে বাংলাদেশের মোট চাহিদার ৯৭ শতাংশ অভ্যন্তরীণভাবেই মেটানো হচ্ছে বলে জানান তিনি। এ ছাড়া বিশ্বমানের জাহাজ তৈরি করে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অঙ্গনের মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে বলে দাবি করেন শেখ হাসিনা।
তাঁর সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশে তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক খাত দ্রুত বিকাশমান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। প্রতিবছর অন্তত ২০ হাজার তরুণ বাংলাদেশি তথ্যপ্রযুক্তি খাতে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে এই খাতে কাজ করতে আসছে বলে জানান তিনি।
আলোচনায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী নূরুল ইসলাম বিএসসি, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান ও ড. গওহর রিজভী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম জিয়াউদ্দিন, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ।