জলবায়ু কর্মপরিকল্পনা জমা দিল বাংলাদেশ
দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম দেশ হিসেবে ‘জলবায়ু কর্মপরিকল্পনা’ জমা দিয়েছে বাংলাদেশ। গতকাল শুক্রবার জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক কমিটির কাছে এ পরিকল্পনা জমা দেওয়া হয়। পরিকল্পনায় ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যমান সম্পদ দিয়ে ‘বিজনেস অ্যাজ ইউজুয়াল (বিএইউ)’ মাত্রা অনুযায়ী দেশে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের মাত্রা নিঃশর্তভাবে কমিয়ে আনার অঙ্গীকার করা হয়।
তবে এই নিঃসরণের মাত্রা কমানোর লক্ষ্যের সঙ্গে কিছু শর্ত বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ। সেখানে বলা হয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে বিএইউ মাত্রা অনুযায়ী দেশে ১৫ শতাংশ গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের মাত্রা কমানো হবে, যদি অর্থ, বিনিয়োগ ও প্রযুক্তির উন্নয়নে যথাযথ আন্তর্জাতিক সহায়তা পাওয়া যায় তাহলে।
বিদ্যুৎ, পরিবহন ও শিল্প খাত থেকে এই নিঃসরণের মাত্রা কমানো হবে।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, একটি দেশের ‘জলবায়ু কর্মপরিকল্পনা’ জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত আলোচনায় সে দেশের জাতীয় নির্ধারিত অবদান বা ইনটেনডেড ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন (আইএনডিসি) হিসেবে ধরা হয়। জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত ন্যাশনস ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশনে ১৯৬টি সদস্য দেশের মধ্যে ৭৫টি দেশ তাদের আইএনডিসি জমা দিয়েছে।
এসব দেশকে আগামী ১ অক্টোবরের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে তাদের নিজেদের ‘জলবায়ু কর্মপরিকল্পনা’ জমা দিতে হবে। সব কর্মপরিকল্পনা জমা হওয়ার পর এগুলোর ভিত্তিতে চূড়ান্ত পরিকল্পনা তৈরি করা হবে। আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরে প্যারিসে হতে যাওয়া কপ টোয়েন্টিওয়ান সম্মেলনে এই পরিকল্পনার ভিত্তিতে একটি বৈশ্বিক জলবায়ু চুক্তি হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
এই জলবায়ু চুক্তি ২০২০ সালের পরে দেশগুলোর সম্মিলিত কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সাহায্য করবে।
এ জাতীয় কর্মপরিকল্পনা থেকে পিছু হটবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশগুলো। অর্থাৎ গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়বে। যা-ই হোক, দরিদ্র এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো তাদের দেশীয় বাধ্যবাধকতার ওপর নির্ভর করে কাজ করবে বলে জানিয়েছে।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যেকোনো মুহূর্তে বাংলাদেশ তার জাতীয় কর্মপরিকল্পনা পবিবর্তন বা পরিমার্জন করার অধিকার নিজের কাছে রেখেছে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া, যেটি জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা ও লক্ষ্যের সঙ্গে সমন্বয় করে এ পরিবর্তনগুলো করতে পারবে।
এখানে বলা হয়, প্রথমবারের মতো জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিঃসরণ কমাতে উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ। আর এ ক্ষেত্রে সময়ের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ।
এখন পর্যন্ত যারা আইএনডিসি জমা দিয়েছে, সেই দেশগুলো হলো : চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ২৮টি দেশ, সুইজারল্যান্ড, নরওয়ে, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও মেক্সিকো।
যুক্তরাষ্ট্র ২৬ থেকে ২৮ শতাংশ নিঃসরণ কমানোর অঙ্গীকার করেছে। অন্যদিকে ইইউর দেশগুলো ২০৩০ সালের মধ্যে অন্তত ৪০ শতাংশ নিঃসরণ কমাবে বলে কথা দিয়েছে।