সব দলের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দিলেন টেরিজা মে
আস্থা ভোটে জিতে ব্রেক্সিট চুক্তির সম্ভাব্য বিকল্প পথ নিয়ে পার্লামেন্টের সব দলের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব রেখেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে। যদিও চুক্তিহীন বেক্সিটের জন্য টেরিজা মের আলোচনায় যোগ দিতে নারাজ লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন।
এদিকে, নতুন গণভোটের আহ্বান জানিয়ে যুক্তরাজ্যের ১৭০ ব্যবসায়ী বিবৃতি দিয়েছেন। এ ছাড়া, ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী এডোয়ার্ড ফিলিপ্পির অভিমত, চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের পথেই হাঁটছে যুক্তরাজ্য।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মের পরিকল্পনা প্রস্তাব ৬৫০ সদস্যের হাউস অব কমন্সে মঙ্গলবার ৪৩২-২০২ ভোটে বাতিল হয়। এ সুযোগে লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন টেরিজা মে সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনেন। বুধবার অনুষ্ঠিত হয় সে অনাস্থা ভোট। তাতে ৩২৫-৩০৬ ভোটে অর্থাৎ মাত্র ১৯ ভোটের ব্যবধানে টিকে যান প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে।
এদিকে লন্ডনে এক সংবাদ সম্মেলনে ব্রেক্সিট চুক্তির নতুন খসড়া তৈরিতে পার্লামেন্টের সব দলের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব রেখেছেন টেরিজা মে। তিনি চাইছেন নতুন প্রস্তাবটি সোমবারই উত্থাপন করবেন। এরই মধ্যে বিভিন্ন দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন মে।
লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন। ছবি : সংগৃহীত
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে বলেন, আস্থা ভোটে জয় পাওয়ায়, নতুন করে, সব ধরনের বিকল্প পথ অনুসন্ধানের চেষ্টা করতে চাই। সবার সঙ্গে আলোচনা করে একটি সমাধান বের করব।
যদিও লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন হেস্টিংয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, চুক্তিহীন বেক্সিট করা নিয়ে কোনো আলোচনায় বসবেন না তিনি।
জেরেমি করবিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মের বিকল্প প্রস্তাবের বিষয়টি ধাপ্পাবাজি। চুক্তিহীন ব্রেক্সিট ছাড়া প্রকৃতপক্ষে নতুন কিছু নেই তাঁর কাছে।
এদিকে, বার্লিনে বৃহস্পতিবার জার্মানির ফেডারেরেশন অব ইন্ডাস্ট্রিজ অভিযোগ করে জানায়, ব্রেক্সিট নিয়ে ব্রিটেনের নাটকে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
অন্যদিকে, ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী এডোয়ার্ড ফিলিপ্পি বৃহস্পতিবার প্যারিসে সাংবাদিকদের জানান, চুক্তি ছাড়াই ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়তে হচ্ছে যুক্তরাজ্যকে। আর এতে সম্মতি রয়েছে ফ্রান্সের।
আগামী ২৯ মার্চের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছেড়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বের হয়ে যাওয়ার কথা ব্রিটেনের।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৮টি দেশের মানুষ একে অন্যের দেশে যেতে পারে। একসঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারে। তা ছাড়া এই ইউনিয়নভুক্ত দেশের মানুষ এক দেশ থেকে অন্য দেশে গিয়ে বসবাসও করতে পারে।
২০১৬ সালের ২৩ জুন যুক্তরাজ্যের নাগরিকরা ব্রেক্সিট হবে কি হবে না, তা নিয়ে গণভোটে অংশ নেয়। ৫১ দশমিক ৯ শতাংশ ভোটার ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানায় আর ৪৮ দশমিক ১ শতাংশ ভোটার এর বিপক্ষে ভোট দেয়। এতে যুক্তরাজ্যের তিন কোটি ভোটারের ৭১ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পড়ে। এই ভোটের জেরে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান ডেভিড ক্যামেরন। তার পরই দায়িত্বে আসেন টেরিজা মে।
ব্রেক্সিটের পক্ষে যারা, তাদের দাবি ছিল- ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যান্য দরিদ্র দেশের অর্থনীতিকে টানতে গিয়ে তাদের মোটা অঙ্কের গচ্চা দিতে হচ্ছে, যা দেশের অর্থনীতিকে খারাপ অবস্থার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে, ভোটে হেরে যাওয়া পক্ষ আবারও এই ইস্যুতে গণভোটের দাবি জানিয়েছিল। যদিও সেই দাবি কার্যকর হয়নি।
আগামী ২৯ মার্চ মধ্যরাতে ইউরোপীয় জোট থেকে একযোগে বেরিয়ে যাবে ব্রিটেন। এ অবস্থার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে চুক্তির খসড়া দাঁড় করান। সোমবার রাতে পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ হাউস অব লর্ডসে ৩২১ জন চুক্তির বিপক্ষে ভোট দেন আর পক্ষে দেন মাত্র ১৫২ জন। পরের দিন নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সেও শোচনীয় পরাজয় হয় প্রধানমন্ত্রীর।