গোলান মালভূমি যে কারণে এত গুরুত্বপূর্ণ

গোলান মালভূমি নিয়ে নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দ্বন্দ্ব বেশ পুরোনো। এ ভূখণ্ডটি রাজনৈতিক ও কৌশলগত দিক দিয়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গতকাল সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ ভূখণ্ডটিতে ইসরায়েলি সার্বভৌমত্বের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছেন।
গোলান হচ্ছে দক্ষিণ পশ্চিম সিরিয়ার একটি মালভূমি। যার আয়তন এক হাজার ৮০০ বর্গকিলোমিটার। সিরিয়ার এই অঞ্চলটি ইসরাইলের উত্তর প্রান্তে অবস্থিত। ১৯৬৭ সালের ছয়দিনের আরব-ইসরাইল যুদ্ধের সময় থেকে ইসরাইল এটি দখল করে নেয়। তখন থেকে একচেটিয়া দখল ধরে রাখতে ইসরাইল এ ভূখণ্ডটিতে বিপুল সৈন্য সমাবেশ ঘটায়।
১৯৭৪ সালে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের সময় আরব রাষ্ট্রগুলো সম্মিলিতভাবে গোলান মালভূমির দখল ফেরত পেতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। তখন জাতিসংঘ এ ভূখণ্ডটির দায়িত্ব নেয়। ইসরাইল ১৯৮১ সালে আবার গোলান দখল করে নেয়। তখন থেকে জাতিসংঘসহ অন্য আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো এর স্বীকৃতি দেয়নি। এমনকি ট্রাম্প প্রশাসনও ২০১৯ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত স্বীকৃতি না দেওয়ার পক্ষে ছিল।
ইসরাইলের দখল করা গোলাম মালভূমিতে প্রায় ৩০টি বসতির মাধ্যমে ২০ হাজারের বেশি ইহুদি বসবাস করছে। এ ছাড়া এখানে প্রায় ২০ হাজার সিরিয় বসবাস করে যাদের অধিকাংশই দ্রুজ সম্প্রদায়ের।
কৌশলগতভাবে সিরিয়া-ইসরাইল উভয়ের কাছেই গোলান মালভূমি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক থেকে মাত্র ৬০ কিলোমিটার পুবে এর অবস্থান। গোলানের উঁচু স্থান থেকে সহজেই দামেস্কের উপরে নজর রাখা যায়। যা সিরিয়ার জন্য হুমকি স্বরূপ।
এ ছাড়া গোলান মালভূমি পানি সরবরাহের অন্যতম একটি উৎস। এখান থেকেই ইসরায়েলে ব্যবহৃত মিঠাপানির তিন ভাগের প্রায় এক ভাগ জোগান দেওয়া হয়। এটি একটি ঊর্বর ভূমি। তাই চাষাবাদের জন্যও বিশেষ উপযোগী।
যেকোনো মূল্যে সিরিয়া গোলান সমস্যা সমাধানে সচেষ্ট ছিল। ২০০৩ সালে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ নদী চুক্তির উদ্যোগ নিলেও তা ভেস্তে যায়। ২০০৮ সালে তুরস্কের মধ্যস্থতায় শান্তি আলোচনা আবার শুরু হয়। কিন্তু ২০০৯ সালে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলে শান্তি আলোচনা বন্ধ হয়ে যায়। ২০১১ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা শান্তি আলোচনার উদ্যোগ নিলেও সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়াতে এ উদ্যোগও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।