কেন নগ্নতা থেকে সরে আসছে ‘প্লেবয়’
যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৫৩ সালের ডিসেম্বরে যাত্রা শুরু করে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সাময়িকী ‘প্লেবয়’। খরগোশ প্রতীকের সাময়িকীটি কয়েক মাসের মধ্যেই বেশ জনপ্রিয়তা পায়। এরপর কেটে গেছে দীর্ঘ ৬২ বছর। সম্প্রতি এক ঘোষণায় নগ্নতা থেকে সরে আসার ঘোষণা দিয়েছে ‘প্লেবয়’। কেন এই উদ্যোগ?
একসময় ‘প্লেবয়’ কয়েক লাখের ওপর বিক্রি হতো। এক মাসে সর্বোচ্চ ৭০ লাখ কপি সাময়িকীও বিক্রি করেছে ‘প্লেবয়’। তবে সম্প্রতি সাময়িকীটির বিক্রি বেশ কমেছে। চলতি মাসে ‘প্লেবয়’ সাময়িকী বিক্রি হয়েছে মাত্র আট হাজার। তাই আধুনিক যুগের সঙ্গে নিজেদের ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে ‘প্লেবয়’। সম্প্রতি প্লেবয়ের এক ঘোষণায় বলা হয়, আগামী বছরের শুরু থেকে সাময়িকীটির মধ্যে পুরোপুরি পোশাকহীন কোনো নারীর ছবি ছাপানো হবে না। প্লেবয়ের মতে, নতুন প্রযুক্তি ও সময়ের সঙ্গে মানিয়ে নিতেই এই পরিবর্তন। এই সময়ে বিশ্বজুড়ে ব্যবসা ধরে রাখাই প্লেবয়ের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সাময়িকী ও অন্যান্য সেবার ক্ষেত্রে প্লেবয় প্রথম উদ্যোক্ত হলেও বর্তমানে ইন্টারনেটের ব্যাপকতার যুগে এটি কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে। কারণ এখন ইন্টারনেটে পাওয়া যায় অফুরন্ত প্রাপ্তবয়স্কদের ভিডিওচিত্র, ছবিসহ বিভিন্ন জিনিস। তাই পয়সা খরচ করে মানুষ কেন এই সাময়িকী পড়বে?
সিএনএনের মতে, কোনো জিনিস প্রথম করে বিখ্যাত হলেও, শুধু এর মাধ্যমেই চিরদিন ব্যবসা চলবে—ভাবাটা ঠিক নয়। ১৯৭৫ সালে প্রথম ডিজিটাল ক্যামেরা উদ্ভাবন করে কোডাক। কিন্তু এটি ফিল্ম ও প্রিন্টিংয়ের ব্যবসায় এতটাই মনোযোগী ছিল যে, ডিজিটাল ক্যামেরা ব্যবসায় অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বড় অবস্থানে চলে গেলেও তারা এর কোনো সুফলই পায়নি। ২০১২ সালে দেওলিয়া ঘোষিত হয় কোডাক। একইভাবে ‘ব্লকবাস্টার’ নামক প্রতিষ্ঠান তিনবার ‘নেটফ্লিক্স’ (ইন্টারনেটে নাটক ও চলচ্চিত্র দেখার ওয়েবসাইট) কেনার সুযোগ পায়। কিন্তু তারা সুযোগ কাজে লাগায়নি। এখন নেটফ্লিক্স কোটি কোটি মার্কিন ডলারের ব্যবসা করছে, অথচ ২০১৩ সালে দেউলিয়া ঘোষিত হয়েছে ব্লকবাস্টার।
সিএনএনের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে বিস্তৃত হওয়া ব্যবসার অনেকগুলোই সৃষ্টি হয়েছে একই ধরনের পুরোনো ব্যবসার পরিবর্তন না হওয়ায়। পুরোনো প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের একগুয়েমির কারণেই ধ্বংস হচ্ছে।
উল্লিখিত বিশ্লেষণের আলোকে দেখলে বোঝা যায়, নিজেদের মধ্যে বড় পরিবর্তন আনা ছাড়া প্লেবয়ের কাছে অন্য কোনো পথ খোলা নেই। ‘প্লেবয়’ এটি বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছে। তাই গত বছরই নিজেদের ওয়েবসাইটে বড় পরিবর্তন এনেছে ‘প্লেবয়’। বর্তমানে প্লেবয়ের ওয়েবসাইটে থাকা বিষয়াদি বহির্বিশ্বের ১৩ বছরের কিশোরদের জন্যও প্রযোজ্য। প্লেবয়ের পরিকল্পনা হলো, সবাইকে নিজেদের সাইটে আনা ও সাময়িকী বিক্রি বাড়ানো। এ ক্ষেত্রে নিজেদের পরিচয়ে পরিবর্তন আনতেই হবে।