বোরকা পরা হেভি মেটালশিল্পী!
বোরকা আর গোলাপি রঙের পলকা ডটের ছাপাওয়ালা গিবসন ফ্লাইয়িং ফাইভ ইলেকট্রিক গিটার - এ দুইয়ের সমীকরণ সাধারণত দেখতে পাওয়া যায় না। তবে এই দুটি ভিন্নধারার বিষয়কে এক সমান্তরালে এনেছেন গিসেল ম্যারি। একাধারে তিনি যেমন কঠোরভাবে ধর্ম পালনকারী নারী, তেমনি একজন হেভি মেটালশিল্পীও।
৪২ বছর বয়সী ম্যারি বাস করেন ব্রাজিলের সাও পাওলোতে। ২০০৯ সালে নিজের বাবার মৃত্যুর পর ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন ম্যারি। অথচ তাঁর দাদা ছিলেন একজন জার্মান ক্যাথলিক।
সংগীত রয়েছে ম্যারির রন্ধ্রে রন্ধ্রে। কারণ ছোটবেলা থেকেই সংগীতের আবহে বেড়ে উঠেছেন তিনি। তিনি এমন বাড়িতে বড় হয়েছেন, যেখানে ছোটবেলা থেকেই শিখতে হয়েছে ক্ল্যাসিক্যাল পিয়ানো। সেই ধারাবাহিকতায় ২০১২ সালে স্পেকট্রাস নামে একটি ব্যান্ড গঠন করেন তিনি।
রয়টার্সকে ম্যারি বলেন, বোরকা পরার কারণে সব সময়ই আল্লাহর কথা মনে থাকে তাঁর। ফলে নিজের প্রাত্যহিক জীবনে ধর্মচর্চার প্রতিফলন ঘটাতে পারেন তিনি। এ ছাড়া এই পোশাক পরে যখন তিনি স্টেজে ওঠেন, তখন এক ধরনের মিশ্র প্রতিক্রিয়া যে পান সেটাও বোঝেন ম্যারি। তিনি বলেন, ‘একজন মুসলিম নারী যিনি সঠিকভাবে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলেন, বোরকা পরেন সেই তিনিই আবার একটি হেভি মেটাল ব্যান্ডে পেশাদার গিটারবাদক-এটা দেখে সাধারণ মানুষ অভ্যস্ত নয়। সে কারণে অনেকেই আমাকে গিটার বাজাতে দেখলে চমকে যায়। তবে অনেকে আবার আমার সম্পর্কে জানতে আগ্রহীও হয়।’
ইসলাম ধর্মে দীক্ষা নেওয়া আগে ম্যারি উইক্কা (Wicca) নামের একটি আধুনিক পৌত্তলিক জাদুবিদ্যার ধর্ম পালন করতেন। তিনি বলেন, তিনি আসলে এমন একটি ধর্ম খুঁজছিলেন যেটা জীবনের জন্য হবে এবং যেটা পালন করে তিনি নিজেকে খুঁজে পাবেন।
ম্যারি জানান, কিছু মুসলিম তাঁর কাজকে সমর্থন না দিলেও অনেকেই আছেন যাঁরা নিয়মিত মঞ্চে তাঁর পরিবেশনা দেখতে আসেন। নিজের ধর্ম ও সংগীতজীবনের এই মিশ্রণের মধ্যে খারাপ কিছুও দেখতে পান না ম্যারি। তিনি বলেন, ‘এটা আমার কাজ, এটাই আমার পেশা। একই সঙ্গে আমি একজন মুসলমান।’
নিজেদের ব্যান্ড স্পেকট্রাস সম্পর্কে ম্যারি বলেন, এই দলের সদস্যরা আধ্যাত্মবাদ, ক্যাথলিক ও ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী। এখানে সব ধর্মের বর্ণচ্ছটা রয়েছে। এই ব্যান্ডটি ধর্মীয় সহিষ্ণুতার একটি দারুণ উদাহরণ। তাদের গানও আশাবাদী ধারণার ওপর গুরুত্ব দেয়।
সব সময় গঠনমূলক ও ইতিবাচক ভাবধারার সংগীতায়োজন করেন বলে রয়টার্সকে জানান ম্যারি। এসব গানে কখনো কখনো বর্তমান সময়ের মানুষের জীবনযাবন নিয়ে সমালোচনা করা হয় বলেও জানান তিনি। তবে নিজেদের গানে সব সময়ই একটা ইতিবাচক বার্তা দিতে চান তাঁরা।