সুদানের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্টের বাড়িতে টাকার ‘খনি’
বিক্ষোভের মুখে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানো সুদানের প্রেসিডেন্ট ওমর আল বশিরের বাড়িতে স্যুটকেসভর্তি টাকার সন্ধান পাওয়া গেছে।
গতকাল শনিবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য পাওয়া যায়।
কর্তৃপক্ষ জানায়, নিরাপত্তাকর্মীরা সাবেক এই প্রেসিডেন্টের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ইউরো, ডলার ও সুদানিজ পাউন্ডসহ সব মিলিয়ে ১৩০ মিলিয়ন ডলার জব্দ করেছে। এর পরই তাঁর বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের জন্য তদন্ত শুরু হয়েছে বলেও জানানো হয়।
সুদানের বিচার বিভাগের একটি সূত্র সংবাদমাধ্যম রয়টার্সকে জানায়, ওমর আল-বশিরের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হচ্ছে এবং আইনজীবীরা এসব ব্যাপারে কারাগারে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন বলেও জানানো হয়।
ওমর আল-বশিরের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের সময় যখন তিনি ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ান, তারপর তাঁকে বাসভবনে কড়া পাহারায় আটক করে রাখা হয়। তারপর তাঁকে গ্রেপ্তার করে কঠোর নিরাপত্তার জন্য রাজধানী খার্তুমের কারাগারে রাখা হয়।
সুদানের অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, দুর্নীতিবিরোধী তদন্তের তত্ত্বাবধানের জন্য একটি নতুন কমিটি গঠন করা হবে।
ওমর আল-বশিরের দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে বলে জানা গেছে।
ওমর আল-বশিরের জাতীয় কংগ্রেস পার্টির বরাত দিয়ে রয়টার্স আরো জানায়, দলটির নেতা আহমেদ হারুন, সাবেক প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট আলি ওসমান তাহা, বশিরের সাবেক সহকারী আওয়াদ আল-জাজ, ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব আল-জুবায়ের আহমেদ হাসান ও সংসদের সাবেক স্পিকার আহমেদ ইব্রাহিম আল তাহেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এ ছাড়া সংসদের স্পিকার ইব্রাহিম আহমেদ ওমর ও বশিরের সহযোগী নাফি আলি নাফিকে বাসভবনে গ্রেপ্তার করে রাখা হয়েছে।
এদিকে পার্শ্ববর্তী দেশ উগান্ডা জানিয়েছে, তারা ওমর আল-বশিরকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিতে আগ্রহী। যদিও তাঁর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। প্রায় একযুগ আগে দারফুরে সরকারবিরোধী আন্দোলনকারী তিন লাখ মানুষকে হত্যার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক আদালত।
এর আগে উগান্ডার প্রেসিডেন্ট ইওয়েরি মুসেভেনি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের কড়া সমালোচনা করেন। তিনি আন্তর্জাতিক এই আদালতকে ‘আফ্রিকানদের বিরুদ্ধে পশ্চিমাদের হাতিয়ার’ হিসেবে উল্লেখ করেন। মুসেভেনি একবার আফ্রিকার দেশগুলোকে আইসিসির প্রতিষ্ঠাচুক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা চালান।
৬ এপ্রিল থেকে প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে টানা বিক্ষোভের পাঁচদিনের মাথায় ১১ এপ্রিল ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। ওমর আল-বশিরের ক্ষমতাচ্যুতির পরও বিক্ষোভ চলতে থাকে।
পরে ওমর আল-বশিরের অপসারণের ঘোষণা দেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট জেনারেল আওয়াদ ইবনে আউফ। অন্তর্বর্তীকালীন সামরিক কাউন্সিলের প্রধান হিসেবে নিজে সরকারপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন এই সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী। প্রেসিডেন্টের অপসারণের পরও বিক্ষোভ চলতে থাকলে সেনা কর্মকর্তা আউফও পরিস্থিতি সামাল দিতে একদিন ক্ষমতায় থাকার পর পদত্যাগ করেন।
বর্তমানে ওই সামরিক কাউন্সিলের প্রধানের দায়িত্ব নেওয়া আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান দুই বছরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন দেবেন বলে ঘোষণা দেন।