অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে সুইডেনে ধর্ষণ মামলা ফের চালু হচ্ছে
সুইডেনে ২০১০ সালে উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে করা ধর্ষণ মামলার পুনঃতদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি।
বিবিসিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গতকাল সোমবার সুইডেনের সরকারি কৌঁসুলি পর্ষদের সহকারী পরিচালক এভা-মারি পারসন এক সংবাদ সম্মেলনে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।
মামলার পুনঃতদন্ত শুরুর কারণ হিসেবে এভা-মারি বলেন, জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ ধর্ষণের ওই অভিযোগের ব্যাপারে জড়িত থাকতে পারেন, এমন সন্দেহের ফলেই পুনঃতদন্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
‘এখন যেহেতু অ্যাসাঞ্জ ইকুয়েডর দূতাবাস ত্যাগ করেছেন, মামলাটির বাস্তবতাও বদলে গেছে, এখনকার বাস্তবতায় মামলাটি নতুন করে শুরু করা যায়,’ বলেন সরকারি কৌঁসুলি। এ ব্যাপারে অ্যাসাঞ্জকে গ্রেপ্তারে ইউরোপীয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হবে বলেও জানান তিনি।
জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাজ্যের ইকুয়েডর দূতাবাসে আশ্রিত থাকার ফলে মামলাটি আর এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে না মনে করে দুই বছর আগে এটি বাদ দেওয়া হয়েছিল।
২০১২ সাল থেকে জুলিয়ান যুক্তরাজ্যের ইকুয়েডর দূতাবাসে আশ্রিত ছিলেন। পরে গত মাসে সেখান থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে যুক্তরাজ্য পুলিশ। অ্যাসাঞ্জকে গ্রেপ্তার করার পর পুরোনো ওই ধর্ষণ মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করার অনুরোধ জানান মামলাকারী ওই নারীর আইনজীবী।
২০১০ সালে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে অনুষ্ঠিত উইকিলিকসের এক সম্মেলনে অ্যাসাঞ্জ ওই নারীকে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগে বলা হয়। যদিও শুরু থেকেই ওই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিলেন উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি বলেন, দ্বিপক্ষীয় সম্মতিতেই ওই নারীর সঙ্গে তাঁর শারীরিক সম্পর্ক হয়।
এদিকে যৌন হয়রানির অভিযোগে ২০১০ সালে অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে সুইডেন। ফলে ওই বছর ডিসেম্বরে যুক্তরাজ্যের আদালতে আত্মসমর্পণ করে ১০ দিনের মাথায় জামিন লাভ করেন অ্যাসাঞ্জ। অন্যদিকে অ্যাসাঞ্জের আইনজীবীরা সুইডেনের জারি করা আন্তর্জাতিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানাকে অবৈধ দাবি করলেও ২০১২ সালে যুক্তরাজ্যের আদালত একে বৈধ বলে রায় দেন। ওই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাজ্য থেকে সুইডেনে প্রত্যর্পণ করা হতে পারে আশঙ্কায় জামিনের শর্ত ভঙ্গ করে জুন মাসের দিকে ইকুয়েডর দূতাবাসে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতা।
সুইডিশ আইন অনুযায়ী, ২০২০ সাল পর্যন্ত ওই ধর্ষণ মামলা চালাবার সময় পাওয়া যাবে। মামলাটি পুনঃতদন্তের সিদ্ধান্তে সুইডেন অ্যাসাঞ্জকে তাদের কাছে প্রত্যর্পণের ব্যাপারে যুক্তরাজ্যকে অনুরোধ জানাবে।
এদিকে, ২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ও কূটনীতিক বিভিন্ন তথ্য ফাঁসের অভিযোগে উইকিলিকস প্রধানকে বিচারের মুখোমুখি করতে চায় যুক্তরাষ্ট্রও। তারাও তাঁকে প্রত্যর্পণের ব্যাপারে যুক্তরাজ্যকে অনুরোধ জানিয়ে আসছে।
সুইডেন ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়েই অ্যাসাঞ্জকে প্রত্যর্পণের অনুরোধ জানালে কার অনুরোধ প্রাধান্য পাবে, সে ব্যাপারেও প্রশ্ন উঠবে।
৪৭ বছর বয়সী অ্যাসাঞ্জ জামিন আইন লঙ্ঘনের দায়ে ৫০ সপ্তাহের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন। বর্তমানে তিনি লন্ডনের বেলমার্স কারাগারে বন্দি।