জোড়া শরীরের পাকিস্তানি যমজ শিশুকে আলাদা করার রুদ্ধশ্বাস ৫০ ঘণ্টা!
যমজ দুই বোন সাফা উল্ল্যাহ ও মারওয়া উল্ল্যাহ। জন্ম থেকেই তাদের মাথার খুলি ও রক্তনালি জোড়া লাগানো। এভাবেই শিশু দুটিকে কাটাতে হয়েছে দুই বছর। সম্প্রতি লন্ডনের একটি হাসপাতালে তিনটি জটিল অস্ত্রোপচারের পর অবশেষে চিকিৎসকরা সফলভাবে দুই বোনকে আলাদা শরীর দিতে পেরেছেন।
মার্কিন গণমাধ্যম স্কাই নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়ে, পাকিস্তানে জন্ম হওয়া শিশু দুটিকে আলাদা করার এ অস্ত্রোপচার হয় লন্ডনের গ্রেট ওরমন্ড স্ট্রিটের একটি হাসপাতালে। এ অস্ত্রোপচারকে চিকিৎসকরা বলছেন এক ‘দীর্ঘ ও জটিল যাত্রা’।
দীর্ঘই বটে। পঞ্চাশ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ১০০ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসাকর্মী মিলে এ অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করেন।
অস্ত্রোপচার শেষে গত ১ জুলাই পিতৃহীন যমজ শিশু দুটিকে নিয়ে হাসপাতাল ছাড়েন তাদের মা। আপাতত লন্ডনের একটি বাসায় দাদা ও চাচাসহ রয়েছে শিশু দুটি।
প্রতিদিন ফিজিওথেরাপিস্টরা এসে শিশু দুটির পুনর্বাসন প্রক্রিয়া দেখভাল করছেন।
We’ve an incredible story to share with you: conjoined twins Safa and Marwa have been successfully separated – the first such procedure at @GreatOrmondSt since 2011! Discover their extraordinary story. https://t.co/aKrOCMGu3q pic.twitter.com/zePGMMrdIt
— Great Ormond Street Hospital (@GreatOrmondSt) July 15, 2019
সাফা ও মারওয়ার মা জয়নব বিবি (৩৪) বলেন, ‘আমরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকদের কাছে ঋণী হয়ে থাকব। তাঁরা যা করেছেন, সে জন্য ধন্যবাদ। সামনে কী হয়, দেখার জন্য মুখিয়ে আছি আমরা।’
সাফা ও মারওয়ার জন্ম হয় সিজারিয়ান পদ্ধতিতে। মাথার খুলি ও রক্তনালি জোড়া লাগানো এ ধরনের যমজকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ‘ক্র্যানিওপ্যাগাস টুইন্স’।
জোড়া লাগানো শিশু দুটির অস্ত্রোপচার শুরু হয় গত বছরের অক্টোবরে। সাফা ও মারওয়ার বয়স তখন ১৯ মাস। এরপর এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে সফলভাবে শিশু দুটির শরীর আলাদা করা হয়।
শিশু দুটির খুলির জটিল গঠন এবং মগজ ও রক্তনালির অবস্থান জানতে আধুনিক প্রযুক্তির শরণাপন্ন হন চিকিৎসকরা। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করে সাফা ও মারওয়ার শরীরের হুবহু প্রতিকৃতি তৈরি করা হয়।
নিখুঁত অস্ত্রোপচার নিশ্চিত করতে মূল অস্ত্রোপচারের আগে থ্রিডি প্রিন্টিং ব্যবহার করে তৈরি করা প্লাস্টিকের মডেল শরীরের ওপর কাটাছেঁড়ার অনুশীলন করে চিকিৎসক দল।
অস্ত্রোপচারের সময় চিকিৎসকরা প্রথমে শিশু দুটির রক্তনালি আলাদা করার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। এরপর মগজ ও রক্তনালি আলাদা করতে সাফা ও মারওয়ার খুলিতে প্লাস্টিকের টুকরো ঢুকিয়ে দেন।
অস্ত্রোপচারের চূড়ান্ত ধাপে শিশুদ্বয়ের শরীরের হাড় ব্যবহার করে নতুন করে মাথার খুলি তৈরি করেন চিকিৎসকরা।
জোড়া লাগানো যমজ শিশুর জন্ম হওয়া খুবই বিরল ঘটনা। প্রতি ২৫ লাখ নবজাতকের মধ্যে একবার এমনটি ঘটে।