২০১৮ সালে ক্ষুধার্ত ছিল ৮২ কোটির বেশি মানুষ : জাতিসংঘ
বিশ্বব্যাপী ক্ষুধায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা চরমভাবে বাড়ছে এবং ২০১৮ সালে ৮২ কোটির অধিক মানুষ ক্ষুধার্ত ছিল বলে সোমবার জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে প্রকাশিত ‘দ্য স্টেট অব ফুড সিকিউরিটি অ্যান্ড নিউট্রিশন ইন দ্য ওয়ার্ল্ড ২০১৯’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, অপুষ্টির ব্যাপকতা দিয়ে পরিমাপ করা বিশ্বব্যাপী ক্ষুধার ধারা কয়েক দশক ধরে নিয়মিতভাবে হ্রাস পাওয়ার পর ২০১৫ সালে পুনরায় ফিরে আসে।
তিন বছর ধরে ক্ষুধার্ত মানুষের অনুপাত প্রায় অপরিবর্তিত হিসেবে ১১ শতাংশের কিছুটা নিচে অবস্থান করছে। কিন্তু মোট সংখ্যা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ২০১৮ সালে তা ৮২ কোটি ১৬ লাখে পৌঁছেছে। যা ২০১৭ সালে ৮১ কোটি ১৭ লাখ, ২০১৬ সালে ৭৯ কোটি ৬৫ লাখ ও ২০১৫ সালে ৭৮ কোটি ৫৪ লাখ ছিল।
খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও), জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও), আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিল (আইএফএডি) ও বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে।
প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এফএও মহাপরিচালক হোসে গ্রাজিয়ানো ডি সিলভা জানান, এ বছর প্রতিবেদনে একটি নতুন সূচক ব্যবহার করা হয়েছে- খাদ্য অনিরাপত্তা অভিজ্ঞতা স্কেল (এফআইইএস)- যা দিয়ে মাঝারি বা গুরুতর খাদ্য অনিরাপত্তার ব্যাপকতা পরিমাপ করা হয়।
গুরুতর খাদ্য অনিরাপত্তার সাথে সম্পর্ক রয়েছে ক্ষুধার। আর মাঝারি খাদ্য অনিরাপত্তায় মানুষের খাদ্য পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয় এবং তারা খাদ্যের মান বা পরিমাণ নিয়ে আপস করতে বাধ্য হয়। এফআইইএসস সূচকে দেখা যায়, প্রায় ২০০ কোটি মানুষ মাঝারি বা গুরুতর খাদ্য অনিরাপত্তার মাঝ দিয়ে গেছে, এ সংখ্যা বিশ্বের জনসংখ্যার ২৬.৪ শতাংশ।
আফ্রিকার প্রায় সব অঞ্চলে ক্ষুধা বাড়ছে। সাব-সাহারা আফ্রিকায় অপুষ্টির ব্যাপকতা ২২.৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ক্যারিবিয়ান অঞ্চলেও ক্ষুধার মাত্রা অনেক, যা ১৮.৪ শতাংশ। এশিয়ায় গত পাঁচ বছরে ভালো অগ্রগতি হওয়া সত্ত্বেও উপ-অঞ্চল হিসেবে অপুষ্টির ব্যাপকতা এখনো সবচেয়ে বেশি প্রায় ১৪.৭ শতাংশ রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ায়। তার পরে আছে পশ্চিম এশিয়া, ১২.৪ শতাংশ।
অপুষ্টির শিকার মানুষের সংখ্যা বিশ্বব্যাপী সমান নয়। তাদের মধ্যে অধিকাংশ মানুষের বাস এশিয়ায়- ৫০ কোটির অধিক। আফ্রিকায় এ সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে- ২০১৮ সালে তা প্রায় ২৬ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। যাদের মধ্যে ৯০ শতাংশের অধিকের বাস সাব-সাহারায়।
ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোর প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে বলেন, ‘ইউনিসেফ ও ডব্লিউএইচও থেকে নতুন উপাত্ত ব্যবহার করে আমরা প্রথমবারের মতো কম জন্ম-ওজন (লো বার্থ ওয়েট) বিষয়ে কাজ করতে পেরেছি, যা মৃত্যুর পাশাপাশি সঠিক শারীরিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হওয়া, নিম্ন বুদ্ধিমত্তা এবং মোটা ও স্থূল হওয়া ও এক সময় হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার মূল ঝুঁকির কারণ।’
প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৫ সালে প্রতি সাত নবজাতকে একটি বা বিশ্বব্যাপী দুই কোটি পাঁচ লাখ শিশু কম জন্ম-ওজনে আক্রান্ত ছিল। এ বিষয়ে ২০১২ সালের পর থেকে কোনো অগ্রগতি হয়নি।
তবে, সঠিক শারীরিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হওয়া ৫ বছরের নিচের শিশুদের সংখ্যা গত ছয় বছরে ১০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু এখনো ১৪ কোটি ৯০ লাখ শিশু এ সমস্যায় আক্রান্ত। বিশ্বব্যাপী ক্ষুধা বাড়ছে। সেই সাথে প্রায় সব দেশে বাড়ছে স্থূলতা, যা বৈশ্বিকভাবে ৪০ লাখ মৃত্যুর জন্য দায়ী, বলা হয় প্রতিবেদনে।
অতিরিক্ত মোটা হওয়ার ব্যাপকতা সব বয়সের মাঝে বাড়ছে, বিশেষ করে স্কুলগামী শিশু ও পূর্ণ বয়স্কদের মাঝে অত্যাধিক বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ প্রবণতার কারণে হিসেবে প্রতিবেদনে বলা হয়, স্কুলগামী অধিকাংশ শিশু পর্যাপ্ত ফল ও সবজি খায় না, নিয়মিতভাবে ফাস্টফুড ও কার্বনজাত কোমল পানীয় গ্রহণ করে এবং দৈনিক ভিত্তিতে শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকে না।