পারস্য উপসাগর থেকে ‘দূরে’ সরুন, পশ্চিমা বিশ্বকে ইরান
পারস্য উপসাগরের নিরাপত্তার ভার তেহরানের নেতৃত্বে ওই অঞ্চলের দেশগুলোর হাতে ছেড়ে দিয়ে পশ্চিমা বিশ্বকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। ইরানের ইসলামী বিপ্লবের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম খোমেনির মাজার কমপ্লেক্সের সামনে গতকাল রোববার ইরানের সমরাস্ত্র মহড়া ও কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে অংশ নেন ইরানি প্রেসিডেন্ট। এ সময় তিনি পারস্য উপসাগরে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের টহলের সমালোচনা করেন।
এদিকে টিভিতে সম্প্রচারিত এক ভাষণে এ সপ্তাহে নিউইয়র্কে জাতিসংঘে উচ্চ পর্যায়ের বিভিন্ন বৈঠকে উপসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি স্থাপনের জন্য নতুন একটি প্রস্তাব তুলে ধরার প্রতিশ্রুতি দেন রুহানি। চলতি মাসের শুরুর দিকে সৌদি আরবের দুটি তেলক্ষেত্রে মিসাইল ও ড্রোন হামলার পরিপ্রেক্ষিতে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির মুখে এমন ঘোষণা দিলেন ইরানের প্রেসিডেন্ট। বার্তা সংস্থা এপি এসব তথ্য জানিয়েছে।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর সৌদি আরবের আবকাইক ও খুরাইস দুটি তেলক্ষেত্রে হামলা চালানো হয়। এতে তেলের বিশ্ববাজারে প্রভাব পড়ে। গত বুধবার সৌদি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এই ড্রোন হামলার জন্য ইরানকে দায়ী করে। তারা জানায়, ইরানের জড়িত থাকার বিষয়ে তাদের কাছে তথ্যপ্রমাণও রয়েছে। তবে ড্রোন ঠিক কোন জায়গা থেকে উড্ডয়ন করেছে তা জানাতে পারেনি সৌদি আরব।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও ইরানকে দায়ী করছে। মার্কিন প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা বলেছেন, এ হামলায় ইরানের জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছেন তাঁরা।
তবে ইরান এতে জড়িত থাকার কথা শক্তভাবে অস্বীকার করে আসছে। তবে আঘাত হলে সমুচিত জবাবের মাধ্যমে প্রতিরোধ গড়ে তোলার কথা জানিয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ।
ইরানের প্রেসিডেন্ট রুহানি গতকাল রোববার ১৯৮০ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত চলা ইরান-ইরাক যুদ্ধের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
এ সময় রুহানি জানান, ইরান পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে ‘বন্ধুত্ব ও ভ্রাতৃত্বের হাত বাড়িয়ে দিতে’ আগ্রহী। তিনি আরো জানান, ইরান এ অঞ্চলের দেশগুলোর ‘অতীতের ভুলগুলো ক্ষমা করে দিতেও প্রস্তুত রয়েছে’।
এ ছাড়া রুহানি জানান, যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোর উচিত পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চল থেকে ‘দূরে’ থাকা।
পশ্চিমা দেশগুলোকে উদ্দেশ করে রুহানি বলেন, ‘এ অঞ্চলে আপনাদের উপস্থিতি বরাবরই দুর্যোগ বয়ে এনেছে। আমাদের অঞ্চল, আমাদের দেশগুলো থেকে যত দূরে সরবেন, ততই আমাদের অঞ্চলে নিরাপত্তা জোরদার হবে।’
রুহানি জানান, আঞ্চলিক দেশগুলোর সহায়তায় পারস্য উপসাগর, হরমুজ প্রণালি ও ওমান উপসাগরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই ইরানের প্রস্তাবিত পরিকল্পনার লক্ষ্য। গত কয়েক বছরে চীন, ভারত, ওমান, পাকিস্তান ও রাশিয়ার সঙ্গে নৌ সহযোগিতা বৃদ্ধি করেছে ইরান।
যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্র আরব দেশগুলোর সঙ্গে বিভিন্ন প্রতিরক্ষা চুক্তির মাধ্যমে পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলজুড়ে হাজার হাজার সৈন্য মোতায়েন করে রেখেছে। পারস্য উপসাগর ও মধ্যপ্রাচ্যের জ্বালানি তেলের মজুদ ও তেল বাণিজ্যের কারণে ১৯৮০ সাল থেকে এ অঞ্চলকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করে মার্কিন প্রশাসন। বিশ্বের তেল বাণিজ্যের এক-পঞ্চমাংশ হয় পারস্য উপসাগরের মুখ বলে পরিচিত হরমুজ প্রণালি দিয়ে। ইরান ও ওমানের মাঝখানে অবস্থিত একটি সরু জলপথ হলো এই হরমুজ প্রণালি। সম্প্রতি নিরাপত্তা জোরদার করতে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে আরো সেনা ও সামরিক সরঞ্জাম পাঠানো হবে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সদরদপ্তর পেন্টাগন।
নতুন যুদ্ধ ট্যাঙ্ক ও ড্রোন প্রদর্শন করল ইরান
ইরান গতকাল রোববার নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি নতুন ট্যাঙ্ক প্রদর্শন করেছে। ইমাম খোমেনির মাজার কমপ্লেক্সের সামনে বিশাল প্রাঙ্গণে কুচকাওয়াজের সময় এগুলো প্রদর্শন করা হয়।
সংবাদমাধ্যম পার্স টুডে এক প্রতিবেদনে জানায়, ট্যাঙ্কটির নাম হচ্ছে ‘হায়েল’। এই ট্যাঙ্কটি কোনো ধরনের ফ্রিকোয়েন্সি পাঠানো ছাড়াই লক্ষ্যবস্তুকে শনাক্ত করতে পারে। এ কারণে শত্রুপক্ষ কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই অভিযান চালাতে পারে এই ট্যাঙ্ক।
এ ছাড়া গতকাল ইরান কুচকাওয়াজে কামান-১২ নামে ড্রোন প্রদর্শন করেছে। এটি হচ্ছে ইরানের বিমানবাহিনীর ড্রোনের সর্বশেষ সংস্করণ। এটি উড্ডয়নস্থলের এক হাজার কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে অভিযান পরিচালনা করতে পারে। এক হাজার কেজি ওজন নিয়ে ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার বেগে উড়তে পারে এবং গতিবেগ ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব।
ইরান গতকাল কাসেদ নামের স্মার্ট বোমাও প্রদর্শন করেছে। এটি ইরানের সবচেয়ে ধ্বংস ক্ষমতাসম্পন্ন বোমাগুলোর একটি।