ইইউকে দেওয়া নয়া ব্রেক্সিট পরিকল্পনায় যা থাকছে
ইউরোপীয় ইউনিয়নকে (ইইউ) নতুন ব্রেক্সিট (ইইউর সঙ্গে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ) পরিকল্পনা জানিয়েছে ব্রিটিশ সরকার। নতুন পরিকল্পনার মধ্যে আইরিশ ‘ব্যাকস্টপ' প্রতিস্থাপনের বিষয়টিও থাকছে।
ব্রেক্সিট কার্যকরের পর ইইউ সদস্যভুক্ত স্বাধীন আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের অংশ নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের সীমান্ত উন্মুক্ত রাখার নিশ্চয়তা ‘ব্যাকস্টপ’ বলে পরিচিত। ব্যাকস্টপসহ ব্রেক্সিট কার্যকর হলে নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডকে ইইউ আইনের অধীনে থাকতে হবে। কিন্তু ‘ব্যাকস্টপ’-বিরোধীরা আশঙ্কা করছেন, এতে যুক্তরাজ্যের বাকি অংশ থেকে আইনগতভাবে নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
সাত পৃষ্ঠার এই নতুন ব্রেক্সিট পরিকল্পনা অনুযায়ী, ইউরোপের বাজারে বাণিজ্য করতে পারবে উত্তর আয়ারল্যান্ডের পণ্য। কিন্তু পণ্যগুলোকে নতুনভাবে কাস্টমসের বৈতরণী পার হতে হবে।
অবশ্য এই পরিকল্পনা আগে উত্তর আয়ারল্যান্ড অ্যাসেমব্লিতে (সংসদ) পাস হতে হবে। এ ছাড়া প্রতি চার বছর অন্তর আইরিশ অ্যাসেমব্লিতে এ বিষয়ে ভোটাভুটি হবে।
এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন জানিয়েছে, ব্রেক্সিট ইস্যু নিয়ে কিছুটা সামনে এগোনো গেলেও এখনো ‘সমস্যা’ রয়েই গেছে।
অন্যদিকে আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীও যুক্তরাজ্যের নতুন পরিকল্পনা নিয়ে পুরোপুরি সন্তুষ্ট নন।
আইরিশ প্রধানমন্ত্রী লিও ভারাদকার জানিয়েছেন, ব্যাকস্টপে যে বিষয়গুলো থাকবে বলে কথা দেওয়া হয়েছিল, নতুন ব্রেক্সিট পরিকল্পনায় ‘সেগুলো পুরোপুরি মানা হয়নি’; যেমন—ইউরোপে এককভাবে বাণিজ্য করতে দেওয়া, উত্তর আয়ারল্যান্ডের শান্তি রক্ষা করা এবং রিপাবলিক অব আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে বাণিজ্য সহযোগিতায় যাওয়াকে সমর্থন করা।
তবে এ নিয়ে আলোচনার পথ খোলা রয়েছে উল্লেখ করে আইরিশ প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, একটা চুক্তি হোক, সেটা তিনি চান।
ব্রিটিশ সরকার ৩১ অক্টোবর ব্রেক্সিট কার্যকর করতে বদ্ধপরিকর। এই দিনটি খ্রিস্টানদের বার্ষিক উৎসব হ্যালোইন। ব্রিটিশ সরকার কোনোভাবেই ব্রেক্সিট কার্যকরের দিন হ্যালোইনের পরে নিতে চায় না।
গতকাল বুধবার কনজারভেটিভ দলের এক সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন জানান, তাঁর দেওয়া ব্রেক্সিট পরিকল্পনার বিকল্প পথ হলো চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন করা।
এদিকে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জঁ-ক্লদ জাঙ্কারকে লেখা এক চিঠিতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, ব্রেক্সিট বিষয়ে নতুন প্রস্তাবনা ‘যুক্তরাজ্যের জনগণ ইইউ ছাড়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার প্রতি সম্মান জানিয়েই প্রস্তুত করা হয়েছে। পাশাপাশি ব্রিটিশ জনগণের এ সিদ্ধান্ত উত্তর আয়ারল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডের জন্য কী পরিণাম বয়ে আনে, সেটাও মাথায় রাখা হয়েছে।’
সরকারি বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, খুব শিগগির ইইউর সঙ্গে নতুন ব্রেক্সিট প্রস্তাব নিয়ে আলোচনায় বসবে ব্রিটিশ সরকার। আগামী ১৭ অক্টোবর ইইউ সম্মেলনের আগে ১০ দিনের মধ্যেই ইইউর সঙ্গে একটা সমঝোতায় পৌঁছানো যাবে বলে ব্রিটিশ সরকারি সূত্রগুলো আশা করছে।
এদিকে ব্রিটিশ সরকারের প্রস্তাবিত ব্রেক্সিট পরিকল্পনার বিষয়ে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জঁ-ক্লদ জাঙ্কার জানিয়েছেন, প্রস্তাবের কয়েকটি জায়গায় ‘ইতিবাচক অগ্রগতি’ থাকলেও কাস্টমসসহ বেশ কয়েকটি বিষয় ‘সমস্যাপূর্ণ’ রয়ে গেছে।