কতবার বিয়ে হয়েছে, কিশোরী নিজেও গুনে রাখেনি
ইরাকের ধর্মীয় ব্যক্তিরা কিশোরীদের যৌনকাজে ব্যবহারের জন্য এক ধরনের বিতর্কিত ধর্মীয় পন্থা অবলম্বন করে থাকেন। যাকে ‘প্রমোদ বিয়ে’ নামে বলা হয়ে থাকে। শেখদের হাতে কিশোরীদের যৌনকর্মে ব্যবহার হওয়া ও নির্যাতনের এসব কথা তুলে ধরা হয়েছে বিবিসির একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে।
বাগদাদের খাদিমিয়ায় থাকে কিশোরী রুসুল। ঘুম থেকে উঠে সে দেখে তার স্বামী উধাও। তাদের বিয়ের স্থায়িত্বকাল ছিল মাত্র তিন ঘণ্টা। তবে কিশোরী রুসুলের এটা প্রথম বিয়ে নয়। এমনকি দ্বিতীয়, তৃতীয় বা চতুর্থও নয়। তার যে কতবার বিয়ে হয়েছে, তা সে নিজেও গুনে রাখেনি। গণমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
ছোট বোনকে নিয়ে বাগদাদে অনেক টানাপড়েনে দিন চলে পরিবারহারা কিশোরী রুসুলের। ধর্মীয় নেতাবেশের কিছু শেখ নিয়ন্ত্রিত চক্রের হাতে পড়ে অর্থের বিনিময়ে বয়স্ক পুরুষদের মনোরঞ্জনে মাঝেমধ্যেই ক্ষণিকের বিয়েতে বসতে হয় রুসুলকে। রুসুলের মতো এমন শত শত কিশোরী ও নারী রয়েছে বাগদাদের শিয়া অধ্যুষিত এলাকাটিতে। তবে এদের মধ্যে কিশোরীর সংখ্যাই বেশি। ১০ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে এদের বয়স। দেশের সব প্রান্ত থেকে, এমনকি বিদেশ থেকেও এমন ক্ষণিকের বিয়ে করতে আসেন বয়স্ক শেখরা। ধর্মীয় দোহাই দিয়ে বিতর্কিত পন্থায় মনোরঞ্জন করেন।
নিজের পেশা নিয়ে রুসুলের অনুশোচনা হয়। আক্ষেপ করে রুসুল বলে, ‘এত সুন্দর মেয়েগুলো কেন যে এভাবে নিজেদের বিক্রি করে নিঃশেষ করে দেয়!’
একটা ঘটনার পর থেকে রুসুল পণ করেছে, পুরুষের ওপর নির্ভরতা মানবে না সে কোনোদিনই। একবার এক লোক তার কাছে এসে তার জীবনকাহিনী শুনতে চায় এবং বেশ কয়েক দিন তাদের মধ্যে যোগাযোগ হয়। পরে একপর্যায়ে তারা বিয়ে করে। রুসুলের ধারণা ছিল, এবার বুঝি সংসারে থিতু হতে পারবে সে। তাকে আর এই নোংরা জগতে লড়াই করতে হবে না। খাদিমিয়ার ধর্মীয় বিবাহ কেন্দ্রে নিয়মমাফিক বিয়ে হয় তাদের। কিন্তু সে আশায় গুড়ে বালি। ওই লোকও উধাও হয়ে যায়।
এ কারণে যত যাই হোক, কোনো পুরুষের ওপর কোনোদিন নির্ভরশীল হবে না বলে প্রতিজ্ঞা করে রুসুল।
ক্ষণিকের বিয়েতে যে মোহরানা রুসুল পায়, তার একটি নির্দিষ্ট অংশ যায় চক্রের হোতা শেখের পকেটে। রুসুলের ভাষায়, “ওই শেখ যখন বলে, ‘তোমার জন্য একজনকে এনেছি’, তখন আমি না করতে পারি না। শেখরা জন্মনিয়ন্ত্রণ ইনজেকশন দিয়ে দেয়, যাতে আমরা গর্ভবর্তী না হই।”
রুসুল বলে, ‘বাগদাদে এটা এত বেড়েছে যে তা বলার মতো নয়। আমরা মতো অনেক মেয়েই আছে।’
বাগদাদের খাদিমিয়ায় শিয়া মুসলিমদের ১২ ইমামের সপ্তম ইমাম মুসা আল খাদিমিয়ার মৃত্যু হয়। প্রতিবছর শিয়া মুসলিমরা ইমাম খাদিমিয়ার শহীদ দিবসে সেখানে গিয়ে থাকেন।