শত চেষ্টায়ও কুয়ায় আটকে থাকা শিশুটিকে বাঁচানো গেল না

শেষ পর্যন্ত বেঁচে ফিরতে পারল না বাবার সঙ্গে খেলতে খেলতে কুয়ায় পড়ে যাওয়া শিশু সুরজিৎ উইলসন। ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যে একটি গভীর কুয়ায় চার দিন আটকে থাকার পর আজ মঙ্গলবার স্থানীয় কর্মকর্তারা জানান, শিশুটির মৃত্যু হয়েছে।
কুয়াটি গভীর হওয়ায় শিশুটিকে উদ্ধারের কোনো সমাধান পাচ্ছিলেন না উদ্ধারকর্মীরা। সময় যত গড়াতে থাকে, কমতে থাকে শিশুটির বেঁচে থাকার আশা। একপর্যায়ে কুয়ার ভেতর থেকে ভেসে আসে পচা গন্ধ। আর তখনই বুঝতে বাকি থাকে না, শিশুটি বেঁচে নেই। এরপরই হাল ছেড়ে দেন উদ্ধারকর্মীরা। তখন কেবল লাশ উদ্ধারের অপেক্ষা। সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এ খবর পাওয়া গেছে।
রাজ্যের পরিবহন বিভাগের প্রধান সচিব ও ত্রাণ কমিশনার জে রাধাকৃষ্ণান সাংবাদিকদের বলেন, ‘দুই বছরের শিশুর মরদেহ পচাগলা অবস্থায় পাওয়া যায়। আমরা তাকে উদ্ধারের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি, কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে যে কুয়াতে শিশুটি পড়েছিল, তা থেকে দুর্গন্ধ বের হতে শুরু করে। পরে খনন প্রক্রিয়া বন্ধ করা হয়।’
গত শুক্রবার বিকেলে তামিলনাড়ু রাজ্যের তিরুচিরাপল্লি জেলার মানাপ্পারাই শহরের অদূরে নাদুক্কাট্টুপাট্টি গ্রামে বাড়ির পাশেই নিজেদের ফার্মে বাবার সঙ্গে খেলছিল দুই বছরের শিশু সুরজিৎ উইলসন। পাশেই যে একটি ২৫ ফুট গভীর পরিত্যক্ত কুয়া রয়েছে, তা খেয়াল করেনি কেউ। এর মধ্যেই খেলতে খেলতে আচমকা কুয়ার মধ্যে পড়ে যায় শিশুটি। হন্যে হয়ে ছেলেকে রক্ষায় এগিয়ে গেলেও সুরজিৎ বুঝতে পারেন, গভীর কূপ থেকে টেনে তোলা সহজ কাজ নয়। সঙ্গে সঙ্গে তিনি যোগাযোগ করেন ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীদের সঙ্গে। উদ্ধারকর্মীরা ঘটনাস্থলে গেলেও কঠিন হয়ে পড়ে উদ্ধারকাজ।
ওই দিন গভীর রাতেই ফায়ার সার্ভিসের আরো একটি দল উদ্ধারকাজে অংশ নেয়। এ উদ্ধারকাজ দেখতে চারপাশে ভিড় জমায় গ্রামবাসী। এরপর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিজয় ভাস্কর।
পুলিশের আইজি ভি ভরদ্বাজ জানিয়েছিলেন, দ্রুতগতিতে চলছে উদ্ধারকাজ। শিশুটির যেন শ্বাসকষ্ট না হয়, সে জন্য ওই কূপের ভেতরে অক্সিজেন পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাতেই ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিদর্শন করেছেন রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিজয় ভাস্কর, পর্যটনমন্ত্রী ভেল্লামান্দি নটরাজন ও তিরুচির কালেক্টর এস সিবারাসু। ঘটনাস্থলে উদ্ধারকাজ তদারক করছেন তাঁরা।
জানা যায়, শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে মাদুরাই থেকে উদ্ধারকারী একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। উদ্ধারের জন্য অত্যাধুনিক সরঞ্জাম রয়েছে তাদের। শিশুটিকে নিরাপদে উদ্ধারের পর যেন দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যায়, সে জন্য সেখানে পাঁচটি মেডিকেল টিমও ছিল।
তবে এরপর আরো তিন দিন গড়িয়ে যায়, কিন্তু উদ্ধার করা যায়নি শিশুটিকে। চার দিন পর উদ্ধার করা হলো তার লাশ।