‘সভ্য’ দেশেই ধর্ষণ বেশি হয়!
খবরের কাগজ আর টিভি চ্যানেলগুলোর বরাতে ‘ধর্ষণ’ শব্দটি এখন আমাদের নিত্যদিনের শব্দভাণ্ডারে রোজকার শব্দ। তবে ধর্ষণের সংখ্যার বিচারে বিশ্বের যে দেশগুলো এগিয়ে তা নিয়ে সম্প্রতি একটি তালিকা প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা নেশনমাস্টার ও এনসিআরবি। আর এই সংস্থা দুটির জরিপের ভিত্তিতেই একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দ্য গার্ডিয়ান।
গার্ডিয়ানে দেওয়া তথ্যমতে ধর্ষণের সংখ্যার বিচারে ওপরের দিকে থাকা দেশগুলোর নাম দেখলে রীতিমতো অবাক হবেন আপনি। কারণ প্রথম বিশ্বের দেশ তথা ‘সভ্য’ বলে পরিচিত দেশগুলোর নামই যে রয়েছে শীর্ষ তালিকায়।
ধর্ষণের তালিকায় সবার আগে আছে আফ্রিকার সবচাইতে ধনী রাষ্ট্র দক্ষিণ আফ্রিকার নাম। প্রতি বছর পাঁচ লাখেরও বেশি নিবন্ধিত ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে এগিয়ে রয়েছে এই দেশ।নেশনমাস্টারের জরিপে মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিলের দেওয়া মতামত অনুসারে, ৯টি ঘটনার মধ্যে কেবল একটি ধর্ষণের ঘটনার খবর যায় পুলিশের কাছে। তাহলে বিশ্বব্যাপী এই সংখ্যা নিশ্চয়ই আরো বেশি। ধর্ষণের তালিকায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে আছে আফ্রিকার আরো দুটি দেশ বতসোয়ানা ও লেসেথো।
ধর্ষণের তালিকায় এর পরের নামটি দেখলে আপনি চমকে উঠবেন নিশ্চিত, কারণ ৪ নম্বর স্থানেই আছে ইউরোপের শান্তির দেশ বলে পরিচিত সুইজারল্যান্ডের নাম। বর্তমান সমীক্ষা বলছে, তিনজন সুইস মহিলার মধ্যে একজনই কোনো না কোনো সময় ধর্ষণের শিকার।
তালিকায় সাত নম্বর নামটি ইউরোপেরই আরেক উন্নত দেশ সুইডেনের। একসময় ইউরোপে সর্বোচ্চ ধর্ষণের ঘটনা ঘটত এই সুইডেনে। গত কয়েক বছরে সুইস সরকারের ব্যাপক সচেতনতামূলক পদক্ষেপের কারণে এই সংখ্যা কমে এসেছে। তবুও প্রতিবছর দেশটিতে সাড়ে তেষট্টি হাজার নারী ধর্ষণের শিকার হয়।
একাদশ ও ত্রয়োদশ স্থানে আছে অস্ট্রেলিয়া ও বেলজিয়াম। এই দুই দেশেও ধর্ষণ ও যৌন নিগ্রহ আকছার ঘটে বলে মত দিয়েছেন সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ও গবেষকরা।
তালিকায় ১৪তম স্থানে আছে ‘সব ভালোর দেশ’ যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বব্যাপী যৌন নির্যাতনের সমীক্ষার ফলাফল বিচার করে জর্জ ম্যাসন বিশ্ববিদ্যালয় জানায়, তিনজন আমেরিকান মহিলার মধ্যে একজন তাঁর জীবনকালে একবার অন্তত যৌন নিগ্রহের শিকার হন। ১৯.৩ শতাংশ মহিলা, ২ শতাংশ পুরুষ জীবনকালে একবার যৌন নিগ্রহের শিকার হয় আমেরিকায়। প্রায় ৭৯% মহিলা ২৫ বছর এবং ৪০% মহিলা ১৮ বছর বয়সসীমা পার করার আগেই যৌন নির্যাতনের শিকার হয় এখানে।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশ হিসেবে ভারতের স্থান এই তালিকায় পঞ্চদশ স্থানে। এনসিআরবির সমীক্ষা অনুযায়ী ২০১০ সালের পর থেকে ভারতে মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধ বেড়েছে ৭.৫%। রেকর্ড অনুযায়ী ২০১২ সালে যৌন নির্যাতনের ঘটনা ২৪ হাজার ৯২৩। তা বেড়ে ৩৩ হাজার ৭০৭ হয়েছে ২০১৩ সালে। ভারতে সবথেকে বেশি যৌন নির্যাতনের শিকার ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী মহিলারা। ১০ জন ধর্ষিতার মধ্যে একজনের বয়স কম করে ১৪ বছর। ভারতে প্রতি ২০ মিনিটে একজন ধর্ষণের শিকার হয়।
আর এই ধর্ষণের তালিকায় বাংলাদেশের স্থান ৪২তম। দেশে প্রতিবছর প্রায় ১৬ হাজার ধর্ষণের ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে সমীক্ষাটি।