পিঠে ছুরি মারার চরম মূল্য দিতে হবে: পুতিন

যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইলে ছাপানো কোলাজ ছবিটি দেখুন। তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তে প্রথম ছবিটিতে তুরস্কের বিমানবাহিনীর ‘এফ-১৬’ ক্ষেপণাস্ত্রবাহী বিমান থেকে ছোড়া গোলার আঘাতে বিস্ফোরিত হয়েছে রাশিয়ার যুদ্ধবিমান ‘সু-২৪’। এরপর ডান পাশের ছবিতে লাতকিয়া প্রদেশের পাহাড়ি এলাকায় বিধ্বস্ত বিমান মাটির দিকে নেমে আসছে ও বিমান থেকে প্যারাসুট দিয়ে নেমে আসছেন একজন পাইলট । আর প্রথম ছবির কোলাজে সেই পাইলটের লাশের চিত্র!
স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার এ ঘটনা ঘটে। আর এই ঘটনাকে ‘পিঠে ছুরি মারা’ এর সাথে তুলনা করে তুরস্ককে চরম মূল্য দিতে হবে বলে হুংকার দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
আকাশসীমা লংঘন করায় বিমানটিকে ভূপাতিত করা হয়েছে বলে তুরস্কের বিমানবাহিনীর এক কর্মকর্তা দাবি করেছেন। বিমানটি তুরস্কের ভূখণ্ডে লাতকিয়ার ইয়ামদি গ্রামের খুব নিচু দিয়ে উড়ে যাচ্ছিল। তুরস্কের সামরিক বাহিনী বলেছে, গুলি করার আগে তুর্কি জঙ্গিবিমানগুলো ৫ মিনিটের মধ্যে অন্তত ১০ বার বিমানটিকে আকাশসীমা লংঘনের বিষয়ে সতর্ক করেছিল।
তবে মস্কো সিরিয়া সীমান্তে তুরস্কের আকাশসীমা লংঘনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং যুদ্ধবিমানটি যে সিরিয়ার আকাশে ছিল এর প্রমাণও আছে বলে দাবি করেছে। তুরস্কের বেসরকারি হ্যাবেরতুর্ক টিভির সম্প্রচারিত ফুটেজে দেখা গেছে, জলন্ত একটি যুদ্ধবিমান অঅকাশ থেকে পড়ে যাচ্ছে এবং বিমানটির পেছনে ধোঁয়ার দীর্ঘ কুণ্ডলি।
তবে আকাশসীমা লঙ্ঘনের ঘটনা সত্যি হোক বা মিথ্যা এটা সত্যি যে ১৯৫০-এর দশকের পর এই প্রথম ন্যাটোভুক্ত কোনো দেশের সশস্ত্র বাহিনী রাশিয়ান সামরিক বিমান ভূপাতিত করল।
ঘটনার পরপরই এক টেলিভিশন বক্তব্যে পুতিন বলেন, ‘আজকের মর্মান্তিক ঘটনা রুশ-তুর্কি সম্পর্কে মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনবে। আমরা সবকিছু সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছি।’ ভূপাতিত বিমানটি তুরস্কের নিরাপত্তার জন্য কোনো হুমকি ছিল না বলেও উল্লেখ করেন তিনি। পুতিন বলেন, তুরস্কের এফ-১৬ বিমান থেকে সিরিয়ার ভেতরেই গুলি করা হয়েছে। বিমানটি ভূপাতিত হয়ে সীমান্ত থেকে চার কিলোমিটার দূরে সিরিয়ার ভেতরে পড়েছে।
রয়টার্স জানিয়েছে, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের পক্ষ হয়ে রাশিয়া সিরিয়ার বিভিন্ন বিদ্রোহী পক্ষের ওপর ব্যাপক বিমান হামলা চালাচ্ছে। এর আগে রাশিয়ার যুদ্ধবিমানের বিরুদ্ধে সীমানা লংঘনের অভিযোগ করে একাধিকবার হুশিয়ারি দিয়েছিল তুরস্ক।
যুক্তরাষ্ট্রের বিবৃতি:
এদিকে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ১১ ঘন্টা পর এ সম্পর্কে বিবৃতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রুশ বিমান ভূপাতিত করার ঘটনায় মার্কিন বাহিনী জড়িত নয়। এছাড়া নাম না প্রকাশ না করার শর্তে একজন পেন্টাগন কর্মকর্তা এএফপিকে বলেন, ‘আমাদের মিত্র তুরস্ক জানিয়েছে, তাদের সামরিক বাহিনী সিরিয়া সীমান্তে রাশিয়ার একটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। এ মুহূর্তে আমরা নিশ্চিত করতে পারি, এতে মার্কিন বাহিনী জড়িত নয়।’
উল্লেখ্য, তুরস্কে মার্কিন বাহিনীর শক্ত অবস্থান রয়েছে। তুর্কি বিমানঘাঁটি থেকে সিরিয়ায় আইএস অবস্থানে বিমান হামলা করে ওয়াশিংটন।
ন্যাটোর জরুরি বৈঠক :
তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তের উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে জরুরি বৈঠক ডেকেছে ইউরোপের সামরিক জোট ন্যাটো। বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার বিকাল ৫টায় বৈঠকটি হয়।
বৈঠকের আগে ন্যাটোর এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এএফপিকে বলেন, ‘ন্যাটো গভীরভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। তুর্কি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে চলছে ন্যাটো।’