এক গাছ দিয়ে ৯৫টি বড়দিন উদযাপন!
১০, ২০ কিংবা ৩০ নয়। ৯৫ বছর। বদলেছে তিনটি প্রজন্ম। রয়ে গেছে একটি ক্রিসমাস ট্রি। যুক্তরাজ্যের শেফিল্ডের একটি পরিবারের হাসি-কান্নার সঙ্গে জড়িয়ে আছে যেটির স্মৃতি। ৯৫ বছর ধরে প্লাস্টিকের এই গাছটিকেই ক্রিসমাস ট্রি হিসেবে ব্যবহার করছে পরিবারটি।
ডেইলি মিররের খবরে বলা হয়, ১৯২০ সালে উলওর্থস থেকে কেনা হয়েছিল নকল এই ক্রিসমাস গাছটি। এত বছরে এর শ্রী কিছুটা কমেছে। কিন্তু এরপরও নিত্য নতুন নকশা আর আধুনিক সব ক্রিসমাস ট্রির বদলে পুরোনো গাছটিকেই সযতনে রেখেছেন শেফিল্ডের পরিবার।
শেফিল্ডের ওই পরিবারের সদস্য ৬১ বছর বয়সী কায়ে অ্যাশটন বলেন, ‘এটি ইতিহাসের একটি অংশ। আর গাছটিকে নিজের কাছে রাখতে পেরে আমি গর্বিত। যদিও অনেক পুরোনো হয়ে যাওয়ায় এটি অনেক নাজুক হয়ে গেছে। অনেক যত্ন নিয়ে এর রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয়। তারপরও সাজানোর জিনিস হিসেবে এটি খুবই চমৎকার।’
গাছটি প্রায় ১০০ বছর সময় পার করে ফেলেছে। তবু এর মধ্যে কোনো পরিবর্তন আসেনি। অথচ এর চারপাশের সবকিছু বদলে গেছে, এই ভাবনাটাই দারুণ শিহরিত করে কায়েকে। তিনি বলেন, গাছের সঙ্গে থাকা সাজানোর বলসহ অন্য জিনিসগুলোও তিনি অপরিবর্তিত রাখার চেষ্টা করেছেন।
এখনো সেগুলো বেশ মজবুত আছে জানিয়ে কায়ে বলেন, ‘আমি আশা করি আরো বহু দশক ধরে এই ক্রিসমাস ট্রিটি আমার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে থাকবে।’
কায়ে বলেন, তিনি গাছটির অনেক যত্ন করেন যাতে তাঁর পরিবারের পরবর্তী প্রজন্মের মেয়েরাও এটি ব্যবহার করতে পারে।
কায়ের নানি এলিবাবেথ নায়লর প্রথম কিনেছিলেন গাছটি। সে বছর তাঁর প্রথম সন্তানের জন্ম উপলক্ষে গাছটির নাম তিনি দেন উইলিয়ামস ট্রি। তবে ১৯৪০ সালে মাত্র ১৯ বছর বয়সে মারা যান উইলিয়াম। সে কারণে তাঁর স্মৃতি বিজড়িত গাছটি আরো মূল্যবান হয়ে ওঠে উইলিয়ামের পরিবারের সদস্যদের কাছে। এরপর ১৯৮১ সালে ৮০ বছর বয়সে মারা যান এলিজাবেথ। বংশ পরম্পরায় গাছটি যায় তাঁর মেয়ে জয়েস অ্যাশটনের কাছে। ২০১২ সালে জয়েশ মারা গেলে পরিবারটির তৃতীয় প্রজন্ম হিসেবে কায়ে হন এটির উত্তরাধিকারী।
কায়ে জানান, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ১৯৪১ সালে বিমান হামলার সময় তাঁদের পুরো পরিবার বাড়ির ভূগর্ভস্থ স্থানে আশ্রয় নেয়। এ সময় বাড়ির পেছনের দরজা বন্ধ রাখতে ভারী একটি ইস্ত্রি ব্যবহার করতেন তাঁর নানি। তবে বাড়ির সামনের রাস্তায় একটি বোমা হামলার পর তাঁর ধাক্কায় দরজাটি খুলে যায় এবং ভারী ইস্ত্রিটি ছিটকে গিয়ে ক্রিসমাস ট্রির ওপর পড়ে।
হামলার পর যখন পরিবারের সবাই আবার উপরে উঠে আসেন, তখন তাঁরা দেখতে পান পুরো ঘরটি লণ্ডভণ্ড হয়ে আছে। আর সেই বিধ্বস্ত ঘরের মধ্যে সদর্পে দাঁড়িয়ে আছে উইলিয়ামস ট্রি। তবে আঘাতের কারণে এর মাথার দিকের কিছুটা অংশ কিছুটা বিধ্বস্ত হয়। পরে তার ও টেপ দিয়ে সেটি জোড়া লাগানো হয়। সেই একই অবস্থায় সেটি এখনো আছে। এমনকি ১৯৪১ সালে লাগানো টেপের কিছু অংশও রয়েছে গাছটির গায়ে।
শেফিল্ডের ওই বাসিন্দা বলেন, ১৯৬২ সালে শেফিল্ডে প্রবল ঝড় হয়। বহু মানুষ নিহত হন। বহু ভবন ধসে পড়ে। সে সময়ের ঝক্কিও সামলে টিকে থাকে গাছটি।
কায়ে জানান, তাঁর নানি যেমন যত্ন নিয়ে উইলিয়ামস ট্রিকে সাজাতেন, ঠিক তেমনি একই অনুষঙ্গ ব্যবহার করে আজও তিনি গাছটিকে সাজান। বছরের অন্য সময় গাছটি সাজানোর জন্য ব্যবহার করা অলঙ্কারগুলো কাগজে মুড়ে যত্ন করে তুলে রাখেন কায়ে। আবার ডিসেম্বর এলে সেসব বের করে ঝুলিয়ে দেন প্রায় শতবর্ষী উইলিয়ামস ট্রিতে।
কাস্টমার সার্ভিস উপদেষ্টা কায়ের দুই মেয়ে অ্যামি উইলকক্স এবং রেবেকা গুডহ্যান্ড এই পারিবারিক প্রথা সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আগ্রহী। গাছটি ১০০ বছর পূরণ করার পর বিরাট একটি উৎসব করার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের। গাছটি তাঁদের পরিবারে কখনো থাকবে না, এমনটি কেউ ভাবতেই পারেন না।