লেখকদের রক্ষায় বাংলাদেশকে আরো বেশি কিছু করতে হবে
এটা ছিল এক ঢিলে দুই পাখি মারা। গত বৃহস্পতিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) কুপিয়ে অভিজিৎ রায়কে হত্যার পর বাংলাদেশি জঙ্গিগোষ্ঠী আনসারউল্লাহ বাংলা সেভেন টুইটারে দর্পভরে এই কথা লেখে : ‘লক্ষ্য ছিল একজন আমেরিকান নাগরিক। একের ভেতরে দুই।’ দুইয়ের একটি হলো লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় ছিলেন স্বঘোষিত নাস্তিক এবং আরেকটি হলো তিনি আমেরিকান নাগরিক।
‘#প্রতিশোধ+#শাস্তি,’ এভাবে শেষ হয় টুইট বার্তাটি। একজন লেখকের প্রকাশিত মত পছন্দ না হলে চাপাতি দিয়ে তাঁর মাথা বিদীর্ণ করা যুৎসই শাস্তি, জঙ্গিদের দোমড়ানো মনে এই থাকে, এবং আফগানিস্তান ও সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার ঘটনায় আমেরিকান নাগরিককে হত্যা করে এক ধরনের দুর্বল প্রতিশোধ হলো।
২০১৩ সালে ঢাকার রাস্তায় ব্লগার রাজীব হায়দারকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। অভিজিতের মতো হায়দারও একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের দায়ে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিদের মৃত্যুদণ্ড সমর্থন করেছিলেন, এদের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর বহু সদস্য রয়েছে।
বাংলাদেশের আইনে সহায়তা পাওয়া যায় না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধর্মনিরপেক্ষ সরকার দেশটির তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬-এর ৫৭ ধারা অনুযায়ী ব্লগারদের গ্রেপ্তার ও বিচারের মুখোমুখি করেছে, কোনো ধর্মীয় বিশ্বাসের ওপর আঘাত করে বা করতে পারে অথবা কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে প্ররোচনা দেয়-এ ধরনের কোনো তথ্য ছড়ানোর ব্যাপারে আইনটিতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) নেত্রী খালেদা জিয়ার মধ্যে রাজনৈতিক মেরুকরণ এই সংকট আরো ঘনীভূত। শঙ্কিত জাতিসংঘ বিরোধী দলগুলোর সংলাপের আহ্বান জানায়, এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ নয় দেশের কূটনীতিকরা গত মঙ্গলবার সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানান।
এবার সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে। বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের জড়িত সন্দেহে শাফিউর রহমান ফারাবী একজনকে গ্রেপ্তার করেছে। হামলার কিছুক্ষণের মধ্যেই ফেসবুকে অপরাধ-দৃশ্য পোস্ট করেন ফারাবী। তদন্তে যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা করতে চাইলে বাংলাদেশ গ্রহণও করেছে। আপাতদৃষ্টিতে আমেরিকান নাগরিক হওয়ার কারণে অভিজিৎ রায়কে হত্যা করা হয়েছে, কারণটি আংশিক হলেও যথার্থ।
গত বছর ফারাবী তাঁর ফেসবুকে একটি ভীতিকর বার্তা লেখেন : ‘অভিজিৎ রায় আমেরিকায় থাকেন। সুতরাং এখন তাঁকে হত্যা করা সম্ভব নয়। যখন তিনি দেশের আসবেন, তাঁকে হত্যা করা হবে।’ লেখকদের রক্ষায় বাংলাদেশ সরকারকে আরো অনেক কাজ করতে হবে এবং হত্যা করে বাকস্বাধীনতা নিশ্চুপ করার চক্রান্ত বরদাশত করা হবে না, (সমাজে) এই বার্তা ছড়িয়ে দিতে হবে।