১২০০ শহরে পরমাণু বোমা হামলার ছক ছিল যুক্তরাষ্ট্রের
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে স্নায়ুযুদ্ধের সময় বিশ্বের এক হাজার ২০০ শহরে আণবিক বোমা ফেলতে চেয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। সম্প্রতি প্রকাশিত গোপন নথিতে এ তথ্য উঠে এসেছে। নথিটি ১৯৫৬ সালের গ্রীষ্মে, স্নায়ুযুদ্ধ যখন তুঙ্গে, সেই সময় তৈরি করা হয়।
নথি থেকে জানা যায়, রাশিয়ার মস্কো ও লেনিনগ্রাদেই কেবল তিন শতাধিক লক্ষ্যবস্তু ঠিক করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। এসব লক্ষ্যবস্তুকে ডেজিগনেটেড গ্রাউন্ড জিরোস (ডিজিজেড) বলা হয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে পোল্যান্ডের ওয়ারশ, চীনের বেইজিং শহরের নাম।
৫০ বছরের বেশি সময় পর প্রকাশিত এ নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে, মার্কিন পরমাণু হামলায় তালিকাভুক্ত শহর ও স্থানগুলোকে ধারাবাহিকভাবে ধ্বংস করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য ছিল শহরের শিল্প এলাকা ধ্বংস করা। এর মধ্যে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যার কথাও বলা হয়েছে, যার মাধ্যমে জাতিগতভাবে একটি জনগোষ্ঠীর মানসিক শক্তি গুঁড়িয়ে দেওয়া যায়।
প্রকাশিত তালিকায় উল্লেখ রয়েছে, বিমান ঘাঁটি এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর পাল্টা হামলা চালাতে পারে এমন সব স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়াই ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা।
প্রতিটি শহরের নির্দিষ্ট জায়গাগুলো চিহ্নিত করে বিস্তারিত পরিকল্পনা করা হয়। ঘন জনবসতির কারণেই যুক্তরাষ্ট্র এসব শহর লক্ষ্যবস্তু করে হামলার। যদিও এই কৌশল আন্তর্জাতিক যুদ্ধের যে নিয়মাবলী রয়েছে তার সঙ্গে যায় না। নিয়ম অনুযায়ী যুদ্ধে বেসামরিক নাগরিকদের হামলার লক্ষ্যবস্তু করা যায় না।
প্রকৃত সংখ্যা জানা না গেলেও যুক্তরাষ্ট্র নির্দিষ্ট এলাকায় ১২ হাজার থেকে ২২ হাজার পরমাণু অস্ত্র (ওয়ারহেড) ফেলত। আর এসব বোমা ফেলা হতো বিমান থেকে, বিশেষ করে যুক্তরাজ্য, স্পেন ও মরক্কো থেকে বি-৪৭ বিমানের সাহায্যে। এ ছাড়া দীর্ঘ দূরত্বে বোমা ফেলতে সক্ষম বি-৫২ বিমান পরমাণু বোমা ফেলত যুক্তরাষ্ট্র থেকেই।
স্নায়ুযুদ্ধের ওই অতি উত্তেজনার মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্র বোমা ফেললে লাখ লাখ মানুষ মারা যেত বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
‘স্ট্র্যাটেজিক এয়ার কমান্ড (এসএসি) অ্যাটমিক উইপনস রিকয়ারমেন্টস স্টাডি ফর ১৯৫৯’ শীর্ষক নথিটি মোট ৭০০ পৃষ্ঠার। ওয়াশিংটন ডিসিতে জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটিতে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা সংগ্রহশালা থেকে এটি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।
নথিটি তৈরির সময় জেনারেল কার্টিস লেমে ছিলেন এসইসির প্রধান কমান্ডার। নথিটির প্রকাশকরা বলছেন, স্নায়ুযুদ্ধের সময় লক্ষ্যবস্তুর ওপর পরমাণু হামলা নিয়ে এটাই সবচেয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ নথি।
বিশ্লেষক উইলিয়াম বার বলছেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এতে বিশদ বর্ণনা রয়েছে।’ তিনি বলেন, বিভিন্ন স্থাপনা ছিল লক্ষ্যবস্তু। তবে মানবগোষ্ঠীও লক্ষ্যবস্তু ছিল। আমরা এখনো জানি না কোথায়... তবে এটা হিমশীতল অনুভূতি সৃষ্টি করে।’
নথি থেকে আরো জানা যায়, এর লেখকরা সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রভাব-বলয়ে থাকা শহুরে সব শিল্প এলাকা, পূর্ব জার্মানি থেকে রাশিয়ার পশ্চিমাঞ্চল পর্যন্ত, পরমাণু বোমা ফেলে ধারাবাহিক ধ্বংস করার পরিকল্পনা করেছিলেন।
উইলিয়াম বার বলেন, ‘সোভিয়েতের বিমান শক্তিই ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে অবস্থানরত মার্কিন বাহিনীর জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। এগুলোকে ধ্বংস করাই ছিল প্রাথমিক লক্ষ্য।’