যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশিকে মারধরের ঘটনায় দুই কিশোর গ্রেপ্তার
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ব্রঙ্কস এলাকায় ‘আইএস সদস্য’ বলে এক বাংলাদেশিকে মারধরের ঘটনায় দুই কৃষ্ণাঙ্গ কিশোরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার পৃথক অভিযানে দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
নিউইয়র্ক পুলিশের বরাত দিয়ে ইউএনবি জানায়, শুক্রবার ভোররাতে এই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ১৪ বছরের এক কিশোরকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ১৫ বছরের আরেকজনকে একটি স্কুল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও তাঁদের পরিচয় জানায়নি পুলিশ।
গত ১৬ জানুয়ারি সন্ধ্যায় নিউ ইয়র্ক শহরের ব্রঙ্কসে বাংলাদেশি অধ্যুষিত পার্কচেস্টার এলাকার রাস্তায় মারধরের শিকার হন বাংলাদেশি মুজিবুর রহমান (৪৩)।
মার্কিন গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছিল, ঘটনার দিন সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের মুজিবুর নয় বছরের ভাগ্নিকে স্কুল থেকে আনার পথে ওয়াসটন এবং পাগসলে অ্যাভিনিউয়ে হামলার শিকার হন। তিনি তখন মুসলমানদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পায়জামা-পাঞ্জাবি পরা ছিলেন।
ভাগ্নিকে নিয়ে রাস্তায় হাঁটার সময় দুজন কিশোর পেছন থেকে এসে ‘আইএস আইএস’ বলে চিৎকার করতে থাকে। এরপর আরো বেশ কয়েকজন কিশোর এসে মুজিবুর রহমানকে পেটাতে পেটাতে ধাক্কা দিয়ে সামনের দিকে নিয়ে যেতে থাকে। তিনি মাটিতে পড়ে গেলেও তাকে নির্মমভাবে পেটায় এবং লাথি দেয়।
এ ঘটনা নিউ ইয়র্ক টাইমস ও ডেইলি নিউজসহ অনেক পত্রিকায় গুরুত্বের সঙ্গে হামলার খবর প্রকাশ হলে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। মুজিবুরের ওপর হামলার প্রতিবাদে গত ১৯ জানুয়ারি ব্রঙ্কসে প্রবাসীরা হামলার স্থানে একটি প্রতিবাদ সমাবেশ করেন।
ব্রঙ্কসের কমিউনিটি প্রেসিডেন্ট রুবেন ডিয়াজ জুনিয়র সেই সমাবেশে যান এবং কড়া ভাষায় আক্রমণকারীদের তিরস্কার করেন। তাদের কাপুরুষ এবং মূর্খ বলেও অভিহিত করেন। এ ছাড়া সিটি মেয়রের কমিউনিটিবিষয়ক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা সারাহ সাঈদ বাংলাদেশিসহ মুসলিম সম্প্রদায়ে ক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে মুজিবুরের বাসায় গিয়ে মেয়রের পক্ষ থেকে সমবেদনা জানান।
নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, ঘটনার দিন থেকেই পুলিশ আক্রমণকারীদের খুঁজছিল। পুলিশের ‘হেইট ক্রাইম টাস্ক ফোর্স’সহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাও অপরাধীদের ধরতে মাঠে নামে। এ ছাড়া ঘটনা সম্পর্কিত যেকোনো তথ্যদাতাকে আড়াই হাজার মার্কিন ডলার পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্ট। এরই ধারাবাহিকতায় ধরা পড়ে দুই কিশোর।
এদিকে সেদিনের নির্মমতার শিকার মুজিবুর রহমান এখনো সুস্থ হননি। ইংরেজি জানেন না তিনি। দোভাষীর মাধ্যমে গণমাধ্যমকে এ বাংলাদেশি বলেন, ‘আমি এখনো শক্ত খাবার খেতে পারি না। ঠিকমতো ঘুমাতে পারি না। সারা শরীরে তীব্র ব্যথা আছে এখনো। ’
মুজিবুর আরো বলেন, ‘আমি হামলার শিকার হওয়ার আগ পর্যন্ত আইএস সম্পর্কে জানতামই না। তারা কোন কারণে হামলা চালায় তাও বুঝতে পারিনি।’ মুজিবুর রহমান আরো বলেন, এমন ঘটনা মুসলিম আর অমুসলিম যার ক্ষেত্রেই হোক না কেন ভবিষ্যতে যেন এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।