আমেরিকা মহাদেশজুড়ে ছড়াতে পারে জিকা ভাইরাস : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

আমেরিকা মহাদেশজুড়ে জিকা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। আজ সোমবার এক প্রতিবেদনে জাতিসংঘের স্বাস্থ্যবিষয়ক এই সংস্থাটি জানায়, এখন পর্যন্ত ক্যারিবিয়ান সাগরের আশপাশের দেশ, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের ২১টি দেশে জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে খুব তাড়াতাড়ি আমেরিকা মহাদেশজুড়ে ছড়াতে পারে জিকা ভাইরাস।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে হালকা জ্বর, মাথাব্যথা ও চোখে প্রদাহ হয়। এ ভাইরাসের কারণেই শিশু ছোট ও অপরিপূর্ণ মস্তিষ্ক নিয়ে জন্মায়, ফলে মাথা খুব ছোট হয় বলে দাবি করেছেন চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায়, এ সমস্যার নাম ‘মাইক্রোসেফালি’। এ সমস্যার কারণে যে কোনো সময় শিশুর মৃত্যু ঘটতে পারে, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হতে পারে, শারীরিক বৃদ্ধিও বিলম্ব হতে পারে।
এদিকে জিকার সংক্রমণের আশঙ্কায় ক্যারিবীয় অঞ্চল ও লাতিন আমেরিকার ১৪টি দেশে গর্ভবতী নারীদের ভ্রমণ না করার পরামর্শ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
রয়টার্সের খবর অনুযায়ী, জিকা ভাইরাসের প্রথম অস্তিত্ব ধরা পড়ে আফ্রিকায়। তবে সম্প্রতি ব্রাজিলে এর সংক্রমণ ধরা পড়ে। এ ছাড়া পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে সম্প্রতি যাঁরা আফ্রিকা ভ্রমণ করেছেন, তাঁদের অনেকেই এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
সম্প্রতি উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা এবং আফ্রিকার বেশ কিছু দেশে জিকা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে চরম উদ্বেগে রয়েছে দেশগুলো।
ব্রাজিলে জিকা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে আগের চেয়ে অনেক ব্যাপক আকারে। গর্ভবতী অবস্থায় যেসব নারী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন, তাঁদের সন্তান জন্মাচ্ছে শারীরিক বিকৃতি নিয়ে। ভাইরাস আক্রান্ত শিশুর মাথা অস্বাভাবিকভাবে ছোট আকৃতির হচ্ছে।
সাম্প্রতিক একটি জরিপে দেখা যায়, এ ধরনের বিকৃতি নিয়ে জন্মানো শিশুদের মাত্রা আগের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছরের অক্টোবর মাসের থেকে এ পর্যন্ত তিন হাজার ৮৯৩টি শিশু মাইক্রোসেফালির (অস্বাভাবিক ছোট মাথা নিয়ে জন্মগ্রহণ) শিকার হয়েছেন। কিন্তু গত সপ্তাহ থেকে এর মাত্রা আরো বেড়েছে।
আফ্রিকার দেশ এল সালভাদরে গর্ভধারণের উপযুক্ত এমন নারীদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, তাঁরা যেন ২০১৮ সালের পর গর্ভধারণ করেন। জিকা ভাইরাসে সংক্রমিত মায়েদের সন্তান গর্ভাবস্থায় মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এ থেকে সুরক্ষা পেতে এমন পরামর্শ দিয়েছেন দেশটির স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।
আশঙ্কা করা হচ্ছে, এল সালভাদরে ৯৬ শতাংশ গর্ভবতী নারী জিকা ভাইরাসে সংক্রমিত। তবে ভূমিষ্ঠ হওয়া নবজাতকদের মধ্যে জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ খুবই কম। সাধারণ জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত শিশুদের মাথা ছোট বা অস্বাভাবিক হয়। এই রোগকে বলা হয় মাইক্রোসেফালি।
জিকা ভাইরাস সংক্রমণের দিক থেকে ব্রাজিল সবার ওপরে। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে কলম্বিয়া। জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে নবজাতকদের রক্ষা করতে কলম্বিয়া সরকার ছয় থেকে আট মাস পরে নারীদের গর্ভধারণের পরামর্শ দিয়েছে।
এয়েডেস এয়েজিপটি নামের একটি মশার কামড়ে জিকা ভাইরাস ছড়ায়। এই মশাটি একই সঙ্গে ডেঙ্গু এবং চিকুংগানিয়া রোগের ভাইরাসও ছড়ায়। মশাবাহিত জিকা ভাইরাস প্রতিরোধে এখন পর্যন্ত কোনো ওষুধ বা প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি।