বিচারে সমর্থন আছে, তবে স্বচ্ছতা চায় যুক্তরাষ্ট্র
একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা নৃশংসতা চালিয়েছে, তাদের বিচারের মুখোমুখি করার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন রয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে একই সঙ্গে বলেছে, এটা (বিচার) করতে হলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) বিচার অবশ্যই সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ এবং আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী হতে হবে, যেগুলো অনুসমর্থনের মাধ্যমে বাংলাদেশ মেনে চলতে সম্মত হয়েছে। যার মধ্যে নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার-সংক্রান্ত চুক্তিও রয়েছে।
গতকাল ওয়াশিংটন ডিসিতে স্থানীয় সময় শনিবার মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত মুখপাত্র মেরি হার্ফ এক ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান। তিনি বলেন, ‘মৃত্যুদণ্ডের বিধান থাকা দেশগুলোকে এই শাস্তি কার্যকর করতে হবে সতর্কতার সঙ্গে, বিচারপ্রক্রিয়া হবে উচ্চ মানসম্পন্ন এবং সুষ্ঠু বিচারের নিশ্চয়তা দিতে হবে। চিফ প্রসিকিউটর বনাম মুহাম্মদ কামারুজ্জামান মামলায় দেওয়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সিদ্ধান্তের প্রতি আমাদের অত্যন্ত শ্রদ্ধা রয়েছে এবং এই রায়ে বিচার বিভাগ যে কঠোরতা দেখিয়েছে, তা আমরা লক্ষ করেছি। আমরা বিশ্বাস করি, মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকর করার আগে অতি সতর্কতা ও সাবধানতাসহকারে পদক্ষেপ নিলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অবাধ ও স্থায়ী সমর্থন অর্জন করা যেতে পারে।’
যুক্তরাষ্ট্র যে সময়ে এ বক্তব্য দেয়, সে সময় বাংলাদেশে কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর করা হচ্ছিল। ভারপ্রাপ্ত মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা আইসিটি প্রক্রিয়ার অগ্রগতি লক্ষ করেছি, তবে এসব প্রক্রিয়ায় আরো উন্নতি হলে তা অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা মেনে চলতে সহায়ক হবে। এসব বাধ্যবাধকতা যতক্ষণ না ধারাবাহিকভাবে মেনে চলা সম্ভব হচ্ছে, ততক্ষণ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর না করাই সবচেয়ে ভালো। কারণ, মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়ে গেলে তা পরিবর্তন করা সম্ভব হয়।’
গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ১০টায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
২০১৩ সালের ৯ মে মানবতাবিরোধী অপরাধে কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ গত বছরের ৩ নভেম্বর তাঁর মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন। চলতি বছর গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়। এর পর ১৯ ফেব্রুয়ারি কামারুজ্জামানের মৃত্যু পরোয়ানা কারাগারে পৌঁছায়। ৫ মার্চ আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় কামারুজ্জামানের পক্ষে রিভিউ আবেদন করা হয়।
২০১০ সালের ২৯ জুলাই কামারুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করা হয়। ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ২ আগস্ট তাঁকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। সেই থেকে তিনি কারাগারে ছিলেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটসহ মানবতাবিরোধী সাতটি অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ২০১২ সালের ৪ জুন কামারুজ্জামানের বিচার শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে পাঁচটি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দুটিতে মৃত্যুদণ্ড, দুটিতে যাবজ্জীবন ও একটিতে ১০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।