যমজ শিশুর দুই পিতা!
যে সত্যটা বের হয়েছিল, তা যেনতেন নয়। কঠিন সত্য। বাস্তবে তো বটেই চিকিৎসা বিজ্ঞানেও। যমজ সন্তানের পিতৃত্বের স্বীকৃতি চেয়েছিলেন এক নারী। আদালতে দাবি তুলেছিলেন, জনৈক ব্যক্তি তাঁর যমজ সন্তানের পিতা, সেই স্বীকৃতি দেওয়া হোক।
তবে আদালত দিলেন এক ব্যতিক্রমী আদেশ। বললেন, ওই নারী যে ব্যক্তিকে তাঁর যমজ সন্তানের পিতা বলে দাবি করেছেন, ওই ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে যমজের একটি শিশুর পিতা!
ঘটনাটি ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সির পাসাইক কাউন্টিতে। পাসাইকের স্টেট সুপিরিয়র কোর্টের বিচারক সোহাইল মোহাম্মদ দেখতে পান, ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর মধ্যকার মিথস্ক্রিয়া চিকিৎসা বিজ্ঞানে এক বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে ‘দ্য নিউজার্সি ল জার্নাল’-এ একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, আদালতের আদেশে আরো বলা হয়, ওই নারীর যমজ সন্তানের অন্যটি তিনি গর্ভে ধারণ করেছিলেন গোপন এক অভিসারে। আর সেই অভিসারের এক সপ্তাহের মধ্যে তিনি সেই লোকের সাথে মিলিত হন, যাকে সন্তানের বাবা হিসেবে দাবি করেছেন।
আদালতের নথিতে ওই নারীকে চিহ্নত করা হয়েছে ‘টিএম’ নামে। আর বাবাকে উল্লেখ করা হয়েছে ‘এএস’ নামে। আদালত আদেশে বলেন, ডিএনএ পরীক্ষায় যমজ শিশু দুটির একটি এএসের বলে প্রমাণিত হয়েছে। তাই সেই সন্তানের পালনপোষণের জন্য তাঁকে অর্থ দিতে হবে।
দ্য ল জার্নাল জানায়, কিছুদিন আগে এএস নামের ওই ব্যক্তিকে যমজ সন্তানের বাবা উল্লেখ করে টিএম পাসাইক কাউন্টি বোর্ড অব সোশ্যাল সার্ভিসে সুবিধা পাওয়ার জন্য আবেদন করেন। বোর্ড তখন সুবিধা দেওয়ার পরিবর্তে আদালতের শরণাপন্ন হয় শিশু দুটির পিতৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য। এর পরই মামলাটির সূত্রপাত। আদালত পরীক্ষার আদেশ দেন। গত নভেম্বরে তার ফল পাওয়া যায়।
যমজ শিশু দুটির জন্ম হয় ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে। পরে ওই নারীও স্বীকার করেন, তাঁর রোমান্টিক পার্টনার এএসের সাথে মিলিত হওয়ার সপ্তাহখানেক আগে অন্য এক ব্যক্তির সাথেও তিনি যৌনক্রিয়া করেছিলেন।
ডিএনএ পরীক্ষা করা হয় ল্যাবরেটরি করপোরেশন অব আমেরিকার আইডেনটিটি টেস্টিং ডিভিশনের পরীক্ষাগারে। আদালত পরীক্ষার ফল এবং পরীক্ষাগারে পরিচালকের সাক্ষ্য মেনে নিয়েছেন।
পরিচালক ড. উরজিংগার বলেন, এটি একটি বিরল ঘটনা। ওই নারী রজঃস্রাবের একই চক্রের মধ্যেই ভিন্ন ভিন্ন পুরুষের মাধ্যমে গর্ভধারণ করেছেন।
ম্যানহাটনের লেনক্স হিল হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ জেনিফার উ ঘটনাটিকে ‘সুপারফেকানডেশন’ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এটা বেশ বিরল ঘটনা। শুক্রাণু পাঁচদিন পর্যন্ত সক্ষম থাকতে পারে। সুতরাং ওই মা যদি এক পুরুষের মাধ্যমে গর্ভধারণ করার পর আবার অন্য কারো সাথে যৌনক্রিয়া করেন, আর সবটাই যদি হয় এক সপ্তাহের কম সময়ের মধ্যে, তাহলে এক পুরুষের শুক্রাণু একটি ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করতে পারে, অন্য পুরুষের শুক্রাণু অন্য একটি ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করতে পারে।