আল-জাজিরার সাংবাদিক যুক্তরাষ্ট্রের ‘সন্দেহভাজন সন্ত্রাসী’
কাতারভিত্তিক স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল আল-জাজিরার পাকিস্তান শাখার ব্যুরোপ্রধান আহমাদ মুয়াফফাক জেইদানকে সন্দেহভাজন সন্ত্রাসী হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছিল মার্কিন সরকার।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার (এনএসএ) সাবেক চুক্তিভিত্তিক কর্মী এডওয়ার্ড স্নোডেনের সরবরাহকৃত নথিপত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে এ বিষয়ে শুক্রবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দ্য টেলিগ্রাফ।
স্নোডেনের দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে পত্রিকাটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে কর্মরত আল-জাজিরার ব্যুরোপ্রধান আহমাদ মুয়াফফাক জেইদানকে আল-কায়েদার সদস্য হিসেবে সন্দেহ করত যুক্তরাষ্ট্র।
স্নোডেনের তথ্যের বরাত দিয়ে টেলিগ্রাফ আরো জানায়, এ সন্দেহে মার্কিন গোয়েন্দারা ২০১৩ সালে জেইদানকে এনএসএর গোয়েন্দা কর্মসূচি স্কাইনেটের আওতায় সন্দেহভাজন সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত করে এবং তাঁর ওপর নিয়মিত নজরদারি চালায়। এনএসএর নথিতে তাঁকে আল-কায়েদা ও মুসলিম ব্রাদারহুড উভয়ের সদস্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
নথিতে আরো উল্লেখ আছে, পাকিস্তানের প্রভাবশালী এ সাংবাদিক খুব সহজেই আল-কায়েদার সাবেক নেতা ওসামা বিন লাদেনসহ আল-কায়েদা ও তালেবান নেতাদের কাছে যেতে পারেন। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে তিনি নিয়মিত আফগানিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্য সফর করতেন বলেও উল্লেখ করা আছে।
২০১১ সালে আল-জাজিরা বিন লাদেন ও তালেবান নেতাদের ওপর একটি ডকুমেন্টারি প্রকাশ করে, যা তৈরির পেছনে প্রধান ভূমিকা রাখেন জাইদান।
টেলিগ্রাফের রিপোর্ট আরো বলা হয়েছে, স্কাইনেটের আওতায় জেইদানের ওপর দীর্ঘদিন ধরে নজরদারি করা হয়। এ জন্য মোবাইলের কল রেকর্ড থেকে শুরু করে সন্দেহভাজন তৎপরতা চিহ্নিত করতে তাঁর ওপর নিয়মিত নজরদারির চেষ্টা করেছেন মার্কিন গোয়েন্দারা।
তবে আল-কায়েদার সঙ্গে যেকোনো ধরনের সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেছেন জেইদান। টেলিগ্রাফকে তিনি জানিয়েছেন, পেশাগত প্রয়োজনেই তিনি পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে কাজ করেছেন এবং একই কারণে তিনি দুই দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব এমনকি অনেক আল-কায়েদা নেতারও সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, স্কাইনেট একটি অযৌক্তিক কর্মসূচি এবং তা মোটেই প্রশ্নের ঊর্ধ্বে নয়।
এদিকে নিউইয়র্ক-ভিত্তিক সংস্থা কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে) নামের একটি সংগঠন সংবাদকর্মীদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ আনার ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে।
সংস্থাটির এশিয়া কর্মসূচির সমন্বয়ক বব ডিয়েটজ বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ ঝুঁকির প্রমাণ হিসেবে একজন সম্মানিত সাংবাদিকের বৈধ সংবাদ সংগ্রহের কাজের ওপর রং চড়িয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে। এ ধরনের তৎপরতা গণমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ কাজকে নিরুৎসাহিত করবে। এটা পাকিস্তানের মতো দেশের জন্য বিশেষভাবে ক্ষতিকর। যেখানে সাংবাদিকরা তাঁদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য নিয়মিত তালেবান ও অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনের নেতাদের নিয়মিত সাক্ষাৎকার নিয়ে থাকেন।’