পশ্চিমবঙ্গে কণ্ঠশিল্পী মমতাজের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
বাংলাদেশের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগমের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের একটি আদালত। অগ্রিম টাকা নিয়ে গানের অনুষ্ঠানে অংশ না নেওয়ায় বিশ্বাসভঙ্গ, প্রতারণাসহ একাধিক অভিযোগের মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
বাংলাদেশের কণ্ঠশিল্পী ও সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের বিরুদ্ধে গত বুধবার (৯ আগস্ট) পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুর আদালত এ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ১৪ বছর আগের এ মামলায় মমতাজ বেগমের বিরুদ্ধে চতুর্থবারের মতো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলো।
১৪ বছর আগে পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিয়মিত অংশ নিতেন কণ্ঠশিল্পী মমতাজ। ২০০৪ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার জন্য সেখানকার শক্তিশঙ্কর বাগচী নামে এক ইভেন্ট অর্গানাইজারের সঙ্গে গায়িকার লিখিত চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুরের একটি অনুষ্ঠানে প্রধান শিল্পী হিসেবে মমতাজকে প্রায় ১৪ লাখ রুপির বিনিময়ে বায়না করেছিলেন উদ্যোক্তারা। ওই অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের অভিযোগ, টাকা নেওয়ার পরও অনুষ্ঠানে হাজির হননি গায়িকা। যার ফলে শ্রোতারা বিক্ষোভের জেরে অনুষ্ঠানস্থলে ভাঙচুর করেন। চরম হেনস্তার মুখে পড়তে হয় অনুষ্ঠানের আয়োজক শক্তিশঙ্কর বাগচীকে। এ ঘটনার পরে মমতাজ টাকা ফেরত দিতেও অস্বীকার করেন বলে অভিযোগ ওঠে। এরপর চুক্তিভঙ্গের অভিযোগ নিয়ে স্থানীয় থানার দ্বারস্থ হন শক্তিশঙ্কর। কিন্তু, থানা অভিযোগ গ্রহণ করতে অস্বীকার করে। এরপর বাধ্য হয়ে বহরমপুর আদালতের দ্বারস্থ হন শক্তিশঙ্কর বাগচী।
মমতাজের বিরুদ্ধে বিশ্বাসভঙ্গ, প্রতারণাসহ একাধিক ধারায় মামলা করেন। সেই সূত্রে ২০০৯ সালে মমতাজের বিরুদ্ধে সমন জারি করে আদালত। পরে সমন কার্যকর না করায় তার বিরুদ্ধে জারি হয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। এরপর নিম্ন আদালত থেকে আগাম জামিন নিয়ে আসেন গায়িকা। পরে নিম্ন আদালতের নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন শক্তিশঙ্কর বাগচী। ২০১০ সালে নিম্ন আদালতের নির্দেশ খারিজ করে মমতাজের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রাখে কলকাতা হাইকোর্ট। তবে, মামলায় সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনবার আগাম জামিন পেয়েছেন গায়িকা। সর্বশেষ গত ৯ আগস্ট ফের আদালতে হাজিরা এড়িয়ে যান গায়িকা। গায়িকার পক্ষ থেকে জানানো হয়, তিনি এই মুহূর্তে কনসার্টের কারণে কানাডায় অবস্থান করছেন। তাই, আদালতে তিনি উপস্থিত থাকতে পারবেন না। এ অবস্থায় আগাম নোটিশ থাকা সত্ত্বেও আদালতে গায়িকা হাজির না হওয়ায় ফের তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
মামলার বাদী শক্তিশঙ্কর বাগচী বলেন, ‘আসামি বাংলাদেশের যথেষ্ট প্রভাবশালী ব্যক্তি। ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তার সঙ্গে আমার চুক্তি হয়েছিল। বিনিময়ে তিনি ১৪ লাখ রুপি নিয়েছিলেন আমার থেকে। এরপর তিনি শো করেননি, যার জন্য আমাকে বড়সড় আর্থিক ক্ষতি ছাড়াও হেনস্তার মুখে পড়তে হয়েছিল। আমি এই ঘটনার পর বারবার ঢাকায় যাই। তাকে অনুরোধ করি, আমার অনুষ্ঠান করে দেওয়ার জন্য। তাকে আমি বহুবার ফোন করেছি। ফোন কলের ডিটেলস আমি আদালতে পেশ করেছি। এরপর আদালত তার বিরুদ্ধে সমন জারি করেছিল। কিন্তু, তিনি আমাকে চেনেন না বলে সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন। তার বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি হলে তিনি মামলায় সহযোগিতা করবেন বলে আগাম জামিন নেন। কিন্তু, তিনি কোনো সহযোগিতা করছেন না। তিনি কলকাতায় আসেন এবং শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের নেতানেত্রীদের অনুষ্ঠান করেন। আমার অনুষ্ঠান করতে তার সময় হয় না। যেহেতু তিনি প্রভাবশালী, তাই তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকলেও পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে না।’