উত্তর গাজায় কার্যক্রম চালানোর মতো কোনো হাসপাতাল নেই : ডব্লিউএইচও
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলে কার্যক্রম চালানোর মতো কোনো হাসপাতাল অবশিষ্ট নেই বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। আজ বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) জাতিসংঘের বিশেষ সংস্থাটি বলছে, সেখানকার অবস্থা ভয়াবহ। খাবার পানি ও খাদ্যের জন্য রোগীরা কাতর হয়ে পড়েছে। খবর এএফপির।
ডব্লিউএইচও বলছে, উত্তর গাজার আল-শিফা ও আল-আহলি হাসপাতাল ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফিলিস্তিনের ডব্লিউএইচওর প্রতিনিধি রিচার্ড পিপেরকর্ন বলেন, ‘পরিদর্শনের সময় হাসপাতালের কর্মীরা বলার মতো কোনো ভাষা খুঁজে পাইনি। বিপর্যয়কর পরিস্থিতি সম্পর্কে বলার মতো কোনো শব্দ খুঁজে পাচ্ছিল না তারা।
গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক মহল থেকে বেশ চাপে রয়েছে ইসরায়েল। ঠিক সে সময়েই ডব্লিউএইচও থেকে এই মন্তব্য এলো।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাস। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, হামাসের হামলায় অন্তত এক হাজার ১৪০ জন নিহত হয়। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই ছিলেন বেসামরিক নাগরিক। এ ছাড়া ২৫০ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যায় সশস্ত্র সংগঠনটি।
প্রতিশোধ নিতে ফিলিস্তিনের হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজা ও পশ্চিম তীরে ক্রমাগতভাবে পাল্টা হামলা চালায় ইসরায়েল। হামাস নিয়ন্ত্রণাধীন গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ইসরায়েলি বাহিনীর আকাশ, নৌ ও স্থলপথে চালানো হামলায় ফিলিস্তিনে অন্তত ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। যার মধ্যে ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু।
এএফপি জানিয়েছে, উত্তর গাজার বৃহৎ হাসপাতাল আল-শিফাকে রক্তগঙ্গা বলে আখ্যা দিয়েছিল ডব্লিউএইচও। গত মাসে ইসরায়েলি বাহিনী হাসপাতালটিতে অভিযান চালায়। তাদের বোমা হামলায় হাসপাতালটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়ে গেছে। আল-শিফার কার্যক্রম বন্ধের পর উত্তর গাজায় অস্ত্রোপচারের জন্য একমাত্র হাসপাতাল ছিল আল-আহলি। তবে, ইসরায়েলি বাহিনীর জন্য গত মঙ্গলবার থেকে হাসপাতালটির কার্যক্রম চালানো অসম্ভব বলে জানিয়েছে হাসপাতালটির পরিচালক।
জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে ভার্চ্যুয়ালিভাবে যুক্ত হয়ে পিপেরকর্ন বলেন, মাত্র দুদিন আগে আল-আহলি হাসপাতাল জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন এমন রোগীতে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। জ্বালানি, বিদ্যুৎ, মেডিকেল সরঞ্জাম ও স্বাস্থ্যকর্মী সেখানে নেই। অস্ত্রোপচারের কোনো রুমও নেই। সম্পূর্ণভাবে কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে হাসপাতালটির।
গাজা উপত্যকায় মোট ৩৬টি হাসপাতাল রয়েছে। এর মধ্যে সীমিত আকারে কার্যক্রম চালাতে পারছে ৯টি হাসপাতাল, যেগুলো দক্ষিণ গাজায় অবস্থিত। আন্তর্জাতিক মানবিক আইন অনুযায়ী, যুদ্ধের সময়ও হাসপাতাল সুরক্ষিত থাকবে। তবে, ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরুর পর থেকে অনবরত গাজার হাসপাতালগুলোতে হামলা চালানো হচ্ছে।
ইসরায়েলের অভিযোগ, হাসপাতালকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে হামাস। এমনকি, হাসপাতালের নিচে হামাসের সুড়ঙ্গ রয়েছে। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে পিপেরকর্ন বলেন, ‘আমরা ভূগর্ভস্থে কোনো কিছু দেখিনি।’