মন্ত্রীর বিদায়ের পর চাপের মুখে নেতানিয়াহু
যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার একমাত্র মধ্যপন্থি সদস্য পদত্যাগ করায় ইসরায়েলের সরকার আরও চাপের মুখে পড়তে পারে৷ গাজায় সামরিক অভিযান ও হেজবুল্লাহর সঙ্গে সংঘাতের মাঝে নেতানিয়াহু নতুন সমস্যার মুখে পড়লেন৷
গাজায় চলমান সামরিক অভিযানকে কেন্দ্র করে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দেশে-বিদেশে প্রবল চাপের মুখে রয়েছেন৷ বিশেষ করে অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কারণে তার সরকারের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ছে৷ ২০২২ সালের ৭ অক্টোবর সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হামাসের নৃশংস হামলার পর জাতীয় ঐক্যের স্বার্থে বিরোধী নেতা বেনি গ্যান্টজ যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়ে নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক অবস্থান অনেকটা জোরালো করেছিলেন৷ কিন্তু রোববার তিনি পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী পদত্যাগ করলেন৷ উগ্র দক্ষিণপন্থি জোট সরকারের একমাত্র মধ্যপন্থি দলের প্রস্থান একাধিক সংকটের সময়ে ইসরায়েলে অস্থিরতা সৃষ্টি করবে বলে অনুমান করা হচ্ছে৷ এখনই সরকার পতনের আশঙ্কা না থাকলেও নেতানিয়াহুকে এবার জোটের কট্টরপন্থি সদস্যদের উপর আরো বেশি নির্ভর করতে হবে৷ ফলে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সহযোগী দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মনোমালিন্য আরও তীব্র হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ নেতানিয়াহু নিজের সরকারের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার স্বার্থে মার্কিন প্রশাসনের অনেক চাপ উপেক্ষা করার চেষ্টা করে চলেছেন৷
গাজায় বিতর্কিত সামরিক অভিযানের পাশাপাশি উত্তরে লেবানন সীমান্তের অপর প্রান্তে হেজবুল্লাহর সঙ্গে আরো তীব্র সংঘাতের আশঙ্কা ইসরায়েলে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে৷ গাজায় এক সেনা অভিযানে হামাসের কবল থেকে চার জন পণবন্দিকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা সম্ভব হলেও হামাসের কবলে এখনো অনেক পণবন্দি থেকে যাওয়ায় ইসরায়েলে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ চলছে৷
দেশের এমন সংকটের সময় মন্ত্রিসভা থেকে বিদায়ের কারণ ব্যাখ্যা করেছেন ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সাবেক কমান্ডার ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেনি গ্যান্টজ৷ ইসরায়েলের একাধিক সামরিক কর্মকর্তার মতো তিনিও গাজায় সামরিক অভিযানের সমাপ্তির পর কোনো রাজনৈতিক সমাধানসূত্রের পরিকল্পনার অভাবের সমালোচনা করে আসছিলেন৷ ৮ জুনের মধ্যে তিনি নেতানিয়াহুর কাছে এক রাজনৈতিক সমাধানসূত্রের খসড়া দাবি করেছিলেন৷ রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে গ্যান্টজ বলেন, ‘‘নেতানিয়াহু আমাদের প্রকৃত জয়ের দিকে এগোনোর পথে বাধা সৃষ্টি করছেন৷ তাই ভারাক্রান্ত মনে আমাদের মন্ত্রিসভা ত্যাগ করতে হচ্ছে৷”
উল্লেখ্য, নেতানিয়াহু সরকারের পতন ঘটলে গ্যান্টজই পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন বলে ইসরায়েলের রাজনৈতিক মহলে মনে করা হচ্ছে৷ তিনি নেতানিয়াহুর উদ্দেশ্যে চলতি বছরেই ইসরায়েলে সাধারণ নির্বাচনের ডাক দিয়েছেন৷
ইসরায়েলে এমন রাজনৈতিক অস্থিরতার মাঝেই আজ সোমবার (১০ জুন) সে দেশে আসছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন৷ তিনি গাজায় অস্ত্রবিরতির পরিকল্পনার জন্য চাপ সৃষ্টি করতে চলেছেন৷ নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক সংকট ও হামাসের নীরবতার কারণে সেই পরিকল্পনার ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিচ্ছে৷