বাংলাদেশে বিক্ষোভ চলাকালে শিক্ষার্থীদের প্রতি মানবাধিকার লঙ্ঘনে জাতিসংঘের উদ্বেগ
কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে হাজারও তরুণ ও বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেপ্তারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেস। সেই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণের খবরেও তিনি উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল সোমবার (২৯ জুলাই) জাতিসংঘ মহাসচিবের দেওয়া বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়। জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক তার কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে বিবৃতিটি পড়ে শোনানো হয়। পরে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। গতকাল সোমবার দেশটিতে নতুন করে শিক্ষার্থী বিক্ষোভ শুরুর বিষয়ে তিনি অবগত। তিনি সবাইকে শান্ত ও সংযত থাকতে তাঁর আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন। শিক্ষার্থী আন্দোলন ঘিরে হাজারও তরুণ ও রাজনৈতিক বিরোধীদের গণগ্রেপ্তারের খবরে তিনি উদ্বিগ্ন।
যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকারের প্রতি গুরুত্বারোপ করছেন জাতিসংঘ মহাসচিব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণের খবরেও তিনি উদ্বিগ্ন। সহিংসতার সব ঘটনা অবিলম্বে স্বচ্ছ-নিরপেক্ষভাবে তদন্তসহ দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনতে তিনি তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকা ও নিউইয়র্ক উভয় স্থানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে উদ্বেগ জানানো অব্যাহত রাখবে বিশ্ব সংস্থাটি। জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশনে সেনা পাঠানোর ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানীয় দেশ হিসেবে তারা বাংলাদেশকে মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা এবং তা সমুন্নত রাখার বিষয়টি মনে করিয়ে দিচ্ছে। জাতিসংঘের লোগো-সংবলিত যানবাহন আর বাংলাদেশে মোতায়েন করা হবে না বলে দেশটির কর্তৃপক্ষ জাতিসংঘকে জানিয়েছে। তারা বিষয়টি আবার মনে করিয়ে দিচ্ছে, পুনরাবৃত্তি করছে, জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশনে নির্ধারিত দায়িত্ব পালনকালেই শুধু বিশ্ব সংস্থাটির লোগো–সংবলিত যানবাহন ব্যবহার করবে সেনা-পুলিশ পাঠানো দেশগুলো।
এক সাংবাদিকের প্রশ্নে ডুজারিক বলেন, সহিংসতার সব ঘটনা সঠিক, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করা প্রয়োজন। যারা সহিংসতার জন্য দায়ী, তাদের প্রত্যেককে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। একই সাংবাদিকের আরেক প্রশ্নে বলেন, সেনা মোতায়েনের পর ঢাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি সম্পদের ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞের খবর বেরিয়ে আসছে। এমন ভয়াবহ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে জাতিসংঘ কি বাংলাদেশকে সাহায্য করবে? জবাবে ডুজারিক বলেন, সংকটকালে সংলাপের বিষয়ে যেকোনো দেশকে সাহায্য করতে জাতিসংঘ সব সময় প্রস্তুত। বিশ্বের কোথাও বিক্ষোভকালে জানমালের ক্ষয়ক্ষতিতে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কোনো প্রকল্পে জাতিসংঘ যুক্ত নয়।
অপর এক সাংবাদিকের প্রশ্নে ডুজারিক বলেন, একই ব্যক্তিরা জাতিসংঘের পতাকা বহন করে অন্যান্য দেশে শান্তিরক্ষায় গেলে তখন কি বিশ্বসংস্থাটির মহাসচিব স্বস্তিবোধ করবেন? জবাবে ডুজারিক বলেন, ‘আমরা পরিষ্কারভাবে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশি সেনাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, যাঁরা শান্তিরক্ষা মিশনে মোতায়েন রয়েছেন, তাঁদের মানবাধিকার সমুন্নত ও এর প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে।’
মুশফিক নামে আরেক সাংবাদিক বলেন, পদক্ষেপ নিতে জাতিসংঘ মহাসচিবের কেমন প্রমাণ প্রয়োজন, যখন তিনি বলেছেন, তার কার্যালয় তদন্তে সহায়তা দিতে প্রস্তুত। যেখানে মানবাধিকার গোষ্ঠী, আন্তর্জাতিক শিক্ষাবিদ ও নোবেলজয়ীরা জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ চাইছেন। এর উত্তরে ডুজারিক বলেন, জাতিসংঘ মহাসচিব সব সময় তার ম্যান্ডেটের আওতায় সহায়তা দিতে প্রস্তুত।