ইস্তাম্বুলের মেয়র ইমামোগলুকে কারাগারে পাঠালেন আদালত

দুর্নীতির অভিযোগে বিচারের জন্য ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দিয়েছেন তুরস্কের একটি আদালত। তাকে আটকের পর থেকে কয়েকদিন ধরে দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ হচ্ছে। খবর আলজাজিরার।
আজ রোববার আদালত জানিয়েছে, দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তের অংশ হিসেবে ইমামোগলু এবং কমপক্ষে ২০ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ইস্তাম্বুলের আদালত ৫৩ বছর বয়সী কারাগারে থাকা মেয়রের বিরুদ্ধে ‘সন্ত্রাসবাদের’ অভিযোগ চাপাননি।
আদালত বলেন, ‘যদিও মেয়র একরেম ইমামোগলুর বিরুদ্ধে একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠনকে সহায়তা করার জোরালো সন্দেহ রয়েছে। যেহেতু ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তাকে আর্থিক অপরাধের জন্য গ্রেপ্তার করা হবে, তাই এই পর্যায়ে (নতুন করে তাকে গ্রেপ্তার) প্রয়োজনীয় বলে মনে করা হচ্ছে না।’
ইস্তাম্বুল থেকে আলজাজিরার সংবাদকর্মী সিনেম কোসেওগলু জানান, আরও বেশ কয়েকজনকে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল, তাদের বিচারধীন অবস্থায় মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কোসেওগলু আরও বলেন, যেহেতু ইমামোগলুর বিরুদ্ধে ‘সন্ত্রাসবাদের’ অভিযোগ আনা হয়নি, তাই আদালত ইস্তাম্বুল নগরীতেও কোনো সরকারি ট্রাস্টি নিয়োগ করতে পারবে না। মেয়র নগর পরিষদের ভেতর থেকেই নির্বাচিত হবেন। এটি প্রধান বিরোধী দলের (রিপাবলিকান পিপলস পার্টি-সিএইচপি) জন্য সুখবর, যারা নগর পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠ।
আদালতের আদেশের প্রতিক্রিয়ায় মেয়র ইমামোগলু বলেন, তিনি মাথানত করবেন না। ইস্তাম্বুলের মেয়র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে লেখেন, ‘আমরা হাতে হাত রেখে আমাদের গণতন্ত্রের ওপর এই আঘাত, এই কালো দাগ উপড়ে ফেলব। আমি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছি, আমি মাথানত করব না।’
সিএইচপি নেতা ওজগুর ওজেল সাংবাদিকদের বলেন, দলটি আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবে। তিনি বলেন, ইস্তাম্বুল নগর পরিষদ এখন ইমামোগলুর রায়ের অপেক্ষায় থাকাকালীন সময়ের জন্য ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে নিজেদের কাউকে নির্বাচন করবে।
প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী এবং একজন গুরুত্বপূর্ণ বিরোধী নেতা মেয়র ইমামোগলুকে গত বুধবার (১৯ মার্চ) দুর্নীতি ও সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে সরকার আটক করেছে।
ইমামোগলু সব অভিযোগ অস্বীকার করে এগুলোকে ‘কালিমা লেপনের’ প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। ইমামোগলুর মিত্র আঙ্কারার মেয়র মনসুর ইয়াভাস সাংবাদিকদের বলেন, কারাগারে পাঠানো বিচার ব্যবস্থার জন্য কলঙ্কজনক।
বিরোধী দল, ইউরোপীয় নেতা এবং হাজার হাজার বিক্ষোভকারী মেয়র ইমামোগলুর বিরুদ্ধে নেওয়া পদক্ষেপকে ‘রাজনৈতিক’ বলে সমালোচনা করেছে। এরপরও আদালত ইমামোগলুকে বিচার-পূর্ব আটক অবস্থায় রাখার সিদ্ধান্ত নিলেন। মামলাগুলো রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে যে অভিযোগ রয়েছে, তা অস্বীকার করেছে সরকার।

গতকাল শনিবার প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান সিএইচপির নেতৃত্বকে তাদের দলকে অর্থের কাছে অন্ধ হয়ে মুষ্টিমেয় নগর পরিষদের ডাকাতদের মুক্তি দেওয়ার যন্ত্রে পরিণত করার অভিযোগ করেছেন। তিনি আরও অভিযোগ করেন, তারা জনসাধারণের শান্তি বিঘ্নিত করতে এবং জাতিকে মেরুকরণের জন্য সবকিছু করছে।
এদিকে, আরও বিক্ষোভের আশঙ্কায় গতকাল শনিবার সন্ধ্যা থেকে ইস্তাম্বুলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোর করা হয়েছে। আলজাজিরার সংবাদকর্মী জানান, ২৬ মার্চ পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও গত রাতে ইস্তাম্বুল, আঙ্কারাসহ প্রায় ৫০টি শহরে বিক্ষোভ হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার রাতে ইস্তাম্বুলে কমপক্ষে তিন লাখ মানুষ বিক্ষোভ করেছে। তবে বিরোধীরা দাবি করেছে, এই সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। বিরোধীদের দাবি করা সংখ্যাটি আলজাজিরা যাচাই করতে পারেনি।