বন্ধুত্ব টেকেনি মোদির, ভারতের ওপর শতভাগ শুল্ক আরোপ করছেন ট্রাম্প?

বিশ্বমোড়ল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলে থাকেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির তাঁর বন্ধু। ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপিনেতা মোদি, তাঁর নেতাকর্মী ও সমর্থকেরাও প্রায়ই তুলে ধরেন সে গল্প। সে হিসাবে প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা তাদের একটু বেশিই বলে মনে হয়। যদিও তা ধোপে টেকেনি এবার। পণ্যের ওপর শুল্ক বসাতে তিল পরিমাণ ছাড় দেননি ট্রাম্প। ভারতের ‘অত্যন্ত অন্যায়’ শুল্ক নীতিরও কড়া সমালোচনা করে দেশটির পণ্যের ওপর ‘প্রতিশোধমূলক’ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
গত ৫ মার্চ কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনের ভাষণে ভারতের শুল্ক নীতির কড়া সমালোচনা করে ট্রাম্প বলেন, এই নীতি ‘অত্যন্ত অন্যায়’ নীতি। একপর্যায়ে ২ এপ্রিল থেকে ভারতীয় পণ্যের ওপর শতভাগ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন তিনি। ‘শুল্কমুক্তি দিবস’ (লিবারেশন ডে ট্যারিফ) পরিকল্পনা অনুযায়ী এ শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারোলাইন লেভিট এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে শতভাগ শুল্ক আরোপের কথা বলা হয়েছে। ওই প্রতিবেদন অনুসারে, হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারোলাইন লেভিট জানিয়েছেন, ট্রাম্পের নতুন নীতির আওতায় ভারতের পাশাপাশি অন্যান্য দেশগুলো মার্কিন পণ্যের ওপর যে হারে শুল্ক আরোপ করবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও সেই একই হারে তাদের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করবে।
রিসিপ্রোক্যাল ট্যারিফ বা পাল্টাপাল্টি শুল্কের ক্ষেত্রে কাউকে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না জানিয়ে ক্যারোলাইন লেভিট বলেন, ‘অন্যায্য বাণিজ্য রীতিনীতি’ বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। তিনি বলেন, ভারত যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করে রেখেছে।
তার বক্তব্য অনুয়ায়ী—ভারতীয় পণ্য আমদানির ক্ষেত্রেও এখন যুক্তরাষ্ট্র শতভাগ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করবে। এই বিষয়ে ট্রাম্প দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—ভারতের ওপর শুল্ক আরোপের এই ঘোষণা এমন সময়ে এসেছে যখন ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের ওপর আগামী ২ এপ্রিল (বুধবার) পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এই বিষয়ে ক্যারোলাইন লেভিট বলেন, ‘আগামীকাল (বুধবার) শুল্ক ঘোষণার সময় দেশভিত্তিক এবং সেক্টরভিত্তিক শুল্কও আরোপের ঘোষণা আসতে পারে। ট্রাম্প যখন এই ঘোষণা করবেন তখন আমি বিষয়টি তার ওপর ছেড়ে দেব। তিনি এগুলো বাস্তবায়নে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।’
ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ভারত, জাপান এবং কানাডার আরোপিত বিশাল শুল্কের একটি তালিকা হাতে ধরে হোয়াইট হাউসের প্রেস মুখপাত্র বলেন, ‘আপনারা যদি আমাদের বিদ্যমান অন্যায় বাণিজ্য রীতিনীতির দিকে তাকান—তাহলে দেখবেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন আমেরিকান দুগ্ধজাত পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। আমেরিকান চালের ওপর জাপানের ৭০০ শতাংশ শুল্ক রয়েছে। ভারতে আমেরিকান কৃষিপণ্যের ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক রয়েছে। কানাডায় আমেরিকান মাখন এবং আমেরিকান পনিরের ওপর প্রায় ৩০০ শতাংশ শুল্ক রয়েছে।’
‘এর ফলে আমেরিকান পণ্য এই বাজারগুলোতে আমদানি করা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছে। গত কয়েক দশকে অনেক আমেরিকান ব্যবসা এবং কাজ হারিয়েছেন।’যোগ করেন লেভিট।

বিভিন্ন দেশ প্রায় সময়ই তাদের অর্থনীতির জন্য অত্যাবশ্যকীয় শিল্প বা খাতকে সুরক্ষার জন্য বিদেশি পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পারস্পরিক শুল্কের লক্ষ্য হলো নির্দিষ্ট পণ্যের ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশের উচ্চ শুল্ক হারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ শুল্ক ধার্য করা। এছাড়া অ-শুল্ক বাধাগুলোর ক্ষতিপূরণ করা, যা মার্কিন রপ্তানিকে ক্ষতিগ্রস্থ করে।
ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তি দিয়েছে, শুল্কের এই বৈষম্য আমেরিকানদের প্রতি অন্যায় এবং এটি তাদের দেশীয় কোম্পানি ও শ্রমিকদের ক্ষতি করছে।
ক্যারোলাইন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, ট্রাম্পের নতুন শুল্ক আমেরিকার বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ‘ঐতিহাসিক পরিবর্তন’ আনবে। তিনি আরও বলেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত, এই দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরে আমাদের দেশকে ঠকিয়ে আসছে...এবং তারা আমেরিকান কর্মীদের প্রতি তাদের ঘৃণাকে স্পষ্ট করে তুলেছে।’
ট্রাম্পের শুল্ক বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের পর আন্তর্জাতিক মহলে প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। মেক্সিকো, কানাডা ও চীনের পণ্যের ওপর ইতোমধ্যে তার প্রশাসন ব্যাপক শুল্ক আরোপ করেছে, যা নিয়ে বিভিন্ন দেশের পক্ষ থেকে কড়া সমালোচনা এসেছে। তবে এসব সমালোচনা উপেক্ষা করে তার সিদ্ধান্তে অনড় ট্রাম্প।