সুদানে প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেস পুনর্দখল করেছে সেনাবাহিনী

সুদানের রাজধানী খার্তুমের প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেস পুনর্দখল করেছে দেশটির সেনাবাহিনী ও তাদের সমর্থকরা। আজ শুক্রবার (২১ মার্চ) এ উপলক্ষে তারা দেশজুড়ে উদযাপন করেছে। খবর আল-জাজিরার।
গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া পাল্টা অভিযানের পর এই বিজয় সেনাবাহিনীর জন্য প্রতীকী জয় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
যদিও আরএসএফ এখনও খার্তুমের দক্ষিণ অংশে কিছু এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে, তবে তারা গত বছরের এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধের পর রাজধানীর বেশিরভাগ এলাকা হাতছাড়া করেছে।
এই ঘটনাটি এমন এক সময় ঘটলো যখন আরএসএফ নেতা মোহাম্মদ হামদান ‘হেমেদতি’ দাগালো তার বাহিনীর প্রতি প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেস ছেড়ে না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
খার্তুমে সেনাবাহিনীর উপস্থিতিকে সাধারণ মানুষ স্বাগত জানালেও কিছু রিপোর্টে বলা হয়েছে, সেনা-সমর্থিত মিলিশিয়ারা আরএসএফ প্রত্যাহারের পর মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের (ওএইচসিএইচআর) সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফ ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত শুধুমাত্র খার্তুমেই অন্তত ১০ হাজার মানুষকে আটক করেছে।
স্থানীয় সুদানি যুবক ইউসুফ বলেন, ‘আরএসএফ যে এলাকাগুলো নিয়ন্ত্রণ করে, সেখানে মানুষ হত্যা, নারী ধর্ষণ ও অমানবিক কার্যকলাপ চালায়। কিন্তু সেনাবাহিনী আসার পর সবাই নিরাপদ মনে করে, এমনকি শিশুরাও আনন্দিত হয়।’

বিশ্লেষকদের মতে, সেনাবাহিনীর এই অগ্রগতি সুদানের বিভক্তির ইঙ্গিত দিতে পারে।
আরএসএফ ইতোমধ্যে একটি সরকার গঠন করেছে এবং দারফুরের পাঁচটি অঞ্চলের মধ্যে চারটির নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে রয়েছে।
সম্প্রতি আরএসএফ উত্তর দারফুরের কৌশলগত মরু শহর আল-মালিহা দখল করেছে, যেখানে সেনাবাহিনী ও তাদের মিত্ররা কিছুটা প্রভাব বজায় রেখেছিল।
তবে আরএসএফ এখনও উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের দখল নিতে ব্যর্থ হয়েছে, যেখানে সেনাবাহিনী একটি শক্তিশালী ঘাঁটি গড়ে তুলেছে।
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সুদান বিষয়ক বিশেষজ্ঞ শরথ শ্রীনিবাসান বলেন, ‘সুদান এখন লিবিয়ার মতো দ্বিধাবিভক্ত হতে পারে। এল-ফাশের ছাড়া আরএসএফের পক্ষে একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র দাবি করা কঠিন হবে।’
সুদানের সেনাবাহিনী বরাবরই আরএসএফ-এর সঙ্গে শান্তি আলোচনায় যেতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে এবং বলছে, তারা পুরো দেশ পুনর্দখল করতে চায়।
অন্যদিকে, কূটনৈতিক প্রচেষ্টার আড়ালে সামরিক অভিযান বাড়িয়েছে আরএসএফ।
গত বছর জানুয়ারিতে হেমেদতি তথাকথিত শান্তিবাদী জোট ‘তাকাদ্দুম’-এর সঙ্গে একটি ‘ঘোষণাপত্র’ স্বাক্ষর করেন। এরপর তিনি আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, কিন্তু তার বাহিনী তখনও সুদানের জাজিরা রাজ্যে ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছিল।
উভয় পক্ষই যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছে, যা সুদানের পশ্চিমাঞ্চল, বিশেষ করে কর্দোফান ও দারফুরে সংঘাত আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
সাম্প্রতিক দিনগুলোতে সুদানে বিপুল পরিমাণ আধুনিক অস্ত্র প্রবেশ করেছে, যা সংঘর্ষকে আরও ভয়াবহ করে তুলতে পারে।
সেনাবাহিনী প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেস পুনর্দখল উদযাপন করার কিছুক্ষণ পরেই একটি ড্রোন হামলায় তিনজন সাংবাদিক নিহত হন, যা সংঘাতের ভয়াবহতা আরও প্রকাশ করে।