কবি শামসুর রাহমানের ১৪তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

Looks like you've blocked notifications!
প্রয়াত কবি শামসুর রাহমান। ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি শামসুর রাহমান। ২০০৬ সালের আজকের এই দিনে (১৭ আগস্ট) চিকিৎসাধীন অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন তিনি। আজ শামসুর রাহমানের ১৪তম মৃত্যুবার্ষিকী।

শামসুর রাহমানের লেখা কবিতা আজও বাঙালির দুঃসময়ে সাহস ও প্রেরণা জোগায়। কবিতার চরণে চরণে উচ্চারিত হয় অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক চেতনার কথা। কাব্য রচনায় সৃষ্টি ও মননের দ্যুতিময় উপস্থাপনা তাঁকে দিয়েছে কবিতার বরপুত্রের উপাধি।

ঢাকার বনানী কবরস্থানে মায়ের কবরে শায়িত তিনি। কবির শেষ ইচ্ছানুযায়ী সেখানেই তাঁকে সমাহিত করা হয়। পঞ্চাশ দশকের শেষ দিকে মর্নিং নিউজে সাংবাদিকতার মাধ্যমে পেশাগত জীবনে প্রবেশ ঘটে তাঁর। এরপর ১৯৫৭ থেকে ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত রেডিও পাকিস্তানের অনুষ্ঠান প্রযোজক ছিলেন। এর মাঝে আবার ফিরে আসেন পুরোনো কর্মস্থল দৈনিক মর্নিং নিউজে। সেখানে ১৯৬০ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত সহযোগী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

শামসুর রাহমানের বাবা মুখলেসুর রহমান চৌধুরী ও মা আমেনা বেগম। ১৩ ভাইবোনের মধ্যে কবি ছিলেন চতুর্থ। পুরান ঢাকার পোগোজ ইংলিশ হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন ১৯৪৫ সালে। ১৯৪৭ সালে ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিষয়ে ভর্তি হন এবং তিন বছর নিয়মিত ক্লাসও করেন সেখানে। শেষ পর্যন্ত আর মূল পরীক্ষা দেননি। পাসকোর্সে বিএ পাস করে তিনি ইংরেজি সাহিত্যে এমএ (প্রিলিমিনারি) পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করলেও শেষ পর্বের পরীক্ষায় অংশ নেননি।

শামসুর রাহমানের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে’ প্রকাশিত হয় ১৯৬০ সালে। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘রৌদ্র করোটিতে’ (১৯৬৩), ‘বিধ্বস্ত নীলিমা’ (১৯৬৭), ‘নিরালোকে দিব্যরথ’ (১৯৬৮), ‘নিজ বাসভূমে’ (১৯৭০), ‘বন্দী শিবির থেকে’ (১৯৭২), ‘দুঃসময়ে মুখোমুখি’ (১৯৭৩), ‘ফিরিয়ে নাও ঘাতক কাটা’ (১৯৭৪), ‘আদিগন্ত নগ্ন পদধ্বনি’ (১৯৭৪), ‘এক ধরনের অহংকার’ (১৯৭৫), ‘আমি অনাহারী’ (১৯৭৬), ‘শূন্যতায় তুমি শোকসভা’ (১৯৭৭), ‘বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখে’ (১৯৭৭), ‘প্রতিদিন ঘরহীন ঘরে’ (১৯৭৮), ‘ইকারুসের আকাশ’ (১৯৮২), ‘মাতাল ঋত্বিক’ (১৯৮২), ‘উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে’ (১৯৮৩), ‘কবিতার সঙ্গে গেরস্থালি’ (১৯৮৩), ‘নায়কের ছায়া’ (১৯৮৩), ‘আমার কোনো তাড়া নেই’ (১৯৮৪), ‘যে অন্ধ সুন্দরী কাঁদে’ (১৯৮৪), ‘অস্ত্রে আমার বিশ্বাস নেই’ (১৯৮৫) ইত্যাদি।

উপন্যাসও লিখেছেন শামসুর রাহমান। ‘অক্টোপাস’ (১৯৮৩), ‘অদ্ভুত আঁধার এক’, (১৯৮৫), ‘নিয়ত মন্তাজ’ (১৯৮৫), ‘এলো সে অবেলায়’ (১৯৯৪) নামে তাঁর চারটি উপন্যাস রয়েছে। ‘স্মৃতির শহর’ ও ‘কালের ধুলোয়’ নামে দুটি আত্মস্মৃতিমূলক গ্রন্থও রয়েছে তাঁর।

সাহিত্যে অবদান রাখার জন্য পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার। এর মধ্যে রয়েছে আদমজী সাহিত্য পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, নাসির উদ্দিন স্বর্ণপদক, জীবনানন্দ পুরস্কার, আবুল মনসুর আহমেদ স্মৃতি পুরস্কার, মিতসুবিসি পুরস্কার (সাংবাদিকতার জন্য), স্বাধীনতা পদক, আনন্দ পুরস্কার। মৃত্যুবার্ষিকীতে কবিকে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছেন দেশবাসী।