নজরুলকে এখন ভীষণ প্রয়োজন : খিলখিল কাজী

Looks like you've blocked notifications!
অনলাইনে আলোচনায় অতিথিরা। ছবি : সংগৃহীত

‘এখন সারা বিশ্বে বেদনার হাহাকার। কাজী নজরুলকে এখন ভীষণ প্রয়োজন। কাজী নজরুল জীবনে কত সংগ্রাম করেছেন। জেলে গেছেন। মানবতার কথা তিনি বলেছেন। সাম্যের কথা উনার মতো কেউ এমন করে বলেননি।’

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে কথাগুলো বললেন কবির নাতনি, সংগীতশিল্পী খিলখিল কাজী। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করেন কাজী নজরুল ইসলামের কনিষ্ঠ পুত্রবধূ কল্যাণী কাজী।

গতকাল সোমবার কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনর সভাপতিত্বে  দুই দিনব্যাপী ‘আমিই নজরুল : আন্তর্জাতিক নজরুল উৎসব’-এর উদ্বোধন হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলা একাডেমির সভাপতি, বিশিষ্ট নজরুল গবেষক, জাতীয় অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম, বিশেষ অতিথি ভারতের আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ড. তপোধীর ভট্টাচার্য, কাজী নজরুলের নাতনি খিলখিল কাজী, ভারতের গবেষক ও লেখক অধ্যাপক সুমিতা চক্রবর্তী, কথাসাহিত্যিক মোহিত কামাল, বাংলাদেশ ইতিহাস অলিম্পিয়াড জাতীয় কমিটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আবেদা সুলতানা, পুবের কলম পত্রিকার সম্পাদক আহমদ হাসান ইমাম, মুক্ত আসরের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি আবু সাঈদ, উদার আকাশ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক ফারুক আহমেদ।

জাতীয় অধ্যাপক, নজরুল গবেষক ড. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘২২-২৩ বছরের একজন যুবক একটি কবিতা লিখেছে বিদ্রোহী নামে। সেই কবিতা বাংলা সাহিত্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল এবং অদ্যাবধি তা বিদ্যমান। সে কবিতা কেবল নজরুলের নয়, আমি বলব, বাংলা সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য কবিতা। প্রথম মহাযুদ্ধের পর বলশেভিক বিপ্লবের পর টি এস ইলিয়ট দি ওয়েস্টল্যান্ড কবিতা লিখেছিলেন, যেটি ইংরেজি কবিতার বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করে দিয়েছিল। তেমনই নজরুলের বিদ্রোহী এই কবিতার আগে রচিত। কবিতাটিও বাংলা কবিতার প্রচলিত ধারাকে বদলে দিয়েছে এবং রবীন্দ্রনাথের কবিতার আবহের বাইরে অনেকেই বেরিয়ে আসতে চেয়েছিলেন কিন্তু সফলকাম হননি, নজরুল তা হয়েছিলেন।’

আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপচার্য তপোধীর ভট্টাচার্য বলেন, ‘বাঙালির চিত্ত জাগরণকারী এক আশ্চর্য মানুষ তিনি। গাহি সাম্যের গান কথাটি বিচ্ছুরিত হচ্ছে নানাভাবে। বারবার নজরুল পড়ছি মানে নজরুল পুনঃপাঠ, আগের চেয়ে আরও বেশি করে জানা। নজরুলকে তো আর টুকরো করে আনা যায় না। আমরা কি নজরুলকে পূর্ণরূপে বুঝতে পেরেছি, না কি অন্ধের মতো আমিও একজন। তাই তাঁর পূর্ণরূপ বুঝতে নজরুল রচনাবলিসহ সবকিছু সঠিকভাবে পাঠ করা জরুরি।’

কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, ‘কাজী নজরুল ইসলাম মানুষের মানবিকতাকে, চেতনাবোধকে জাগ্রত করেছেন এবং দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করেছেন। গণমানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। মানুষ হিসেবে মানুষের মর্যাদাকে দেখেছেন। বাঁচার অধিকারের দিকটিকে ধর্মের সুন্দর জায়গার দিক থেকে দেখেছেন। এভাবে নজরুল আমাদের সামনে সাম্যবাদের চেতনা নিয়ে এসেছেন।’

ভারতের গবেষক ও লেখক অধ্যাপক সুমিতা চক্রবর্তী বলেন, ‘নজরুল ইসলাম আন্তর্জাতিক মনন। তাঁর বিদ্রোহী কবিতার লক্ষ্যবস্তু দুটি। এক অত্যাচারের খড়গকৃপাণ, দুই উৎপীড়িতের ক্রন্দন রোল। এই হচ্ছে সাম্যবাদের মূলকথা। তিনি যখন কামাল পাশা, আমানুল্লাহ, জগলুল পাশা এঁদের নিয়ে কবিতা লিখেছেন, তখন তিনি বিশ্বের স্বাধীনতা সংগ্রামী। বিশ্ব মানবতার স্বাধীনতার অনির্বাণ আকাঙ্ক্ষা ছিল তাঁর মধ্যে। ধর্মগ্রন্থ পাঠের জগতেও নজরুল ছিলেন আন্তর্জাতিক মনন। ঈশ্বরে বিশ্বাসী হয়েও মানবতায় ছিলেন অধিক বিশ্বাসী। তিনি বিশ্বাস করতেন মানুষকে মেরে মানবতাকে মারা যায় না। তিনি এমনই চিন্তাধারার অধিকারী একজন আন্তর্জাতিক মনন।’

পুবের কলম পত্রিকার সম্পাদক আহমেদ হাসান বলেন, ‘ধন্যবাদ বাংলাদেশকে যে আপনারা তাঁর ইচ্ছা মসজিদের পাশে আমার কবর দিও ভাই তা পূর্ণ করেছেন। তিনি শেষ জীবনে বাংলাদেশে যান, বাংলাদেশ তাঁকে যথাযথ সম্মান জানিয়েছে। এই কথাটা আমরা পশ্চিমবঙ্গবাসী কখনও ভুলব না এবং বাংলাদেশ সরকার ও জনগণ আমাদের ধন্যবাদের পাত্র।’

উদার আকাশ পত্রিকার সম্পাদক  ও প্রকাশক ফারুক আহমেদ বলেন, ‘ধূমকেতু পত্রিকায় কাজী নজরুল ইসলামই প্রথম পূর্ণাঙ্গ স্বরাজের কথা বলেছেন। সেই নজরুল ইসলাম আমাদের অবিভক্ত ভারতের সমস্ত মানুষের কাছে পূর্ণ স্বরাজের স্বপ্ন বপন করেছিলেন। তিনি এমনই একজন কবি, যাঁর জন্য তৎকালীন ভারতের সমস্ত মানুষ ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য মুক্তির সংগ্রামের সাহস সঞ্চয় করতে পেরেছিলেন। তিনি এভাবেই সাম্যবাদের গান গেয়েছেন।’

মুক্ত আসরের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি আবু সাঈদ বলেন, ‘আমিই নজরুল উৎসবের প্রতিপাদ্য সাম্যবাদী নজরুল। নজরুলের যে সাম্যবাদ চিন্তা তা বর্তমানে সারা বিশ্বের জন্যই জরুরি হয়ে পড়েছে। আমরা মনে করি এই চেতনা তরুণদের মাঝে লালন করা এবং সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া।’

আজ মঙ্গলবার রাত ৯টায় হবে সমাপনী অনুষ্ঠান। সমাপনী অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে থাকবেন কাজী নজরুল ইসলামের কনিষ্ঠ নাতনি অনিন্দিতা কাজী, কবি ও লেখক শামীম আজাদ, বাংলাদেশ ইতিহাস অলিম্পিয়াড জাতীয় কমিটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. এ কে এম শাহনাওয়াজ, ড. এমরান জাহান, ড. আবেদা সুলতানা, নুরুন আখতার, আহমেদ হেলাল, ডায়ালগ ইনের পরিচালক পিনাকী গাঙ্গুলী, মুক্ত আসরের সংস্কৃতিবিষয় সম্পাদক মনিরা পারভীনসহ প্রমুখ।

দুই দিনের এই আয়োজনে পাঁচটি দেশ থেকে ৩২ জন নজরুল গবেষক, শিক্ষাবিদ, শিল্পীরা অংশ নিচ্ছেন। ‘আমিই নজরুল : আন্তর্জাতিক নজরুল উৎসব’-এর সহযোগিতায় আছে বাংলাদেশ ইতিহাস অলিম্পিয়াড জাতীয় কমিটি, বইচারিতা, উদার আকাশ (ভারত), কাজী নজরুল ইসলাম ফাউন্ডেশন (নর্থ আমেরিকা) ও ডায়ালগ ইন (ভারত)।