পর্দা উঠল ঢাকা আর্ট সামিটের

Looks like you've blocked notifications!

‘মুভমেন্ট বা সঞ্চারণ’ প্রতিপাদ্য দিয়ে শুরু হলো ঢাকা আর্ট সামিটের পঞ্চম সংস্করণ। এক ছাদের নিচে বিশ্বের নানা প্রান্তের নানা মেজাজ ও শিল্পের বহুমাত্রিক কাজ দেখার বিরল সুযোগ করে দিতে ২০১২ সাল থেকে এই সামিটের আয়োজন করে আসছে সামদানী আর্ট ফাউন্ডেশন ও শিল্পকলা একাডেমি। চারবারের সফল আয়োজনের পর এবার বসল পঞ্চম আসর।

গতকাল শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) পর্দা উঠল বহুল আলোচিত ঢাকা আর্ট সামিটের পঞ্চম সংস্করণের। নয় দিনের এ শিল্পকলার আসরে অংশ নিচ্ছেন বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের ৫০০-এর অধিক চিত্রশিল্পী-ভাস্কর, কিউরেটর, শিল্প-সমালোচক, আর্ট প্রফেশনাল, শিল্প-সংগ্রাহক ও স্থপতি।

এই শিল্প সম্মেলনে এশীয় চিত্রকলার বেশ কয়েকজন প্রখ্যাত চিত্রশিল্পীর শিল্পকর্ম দেখার যেমন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি রয়েছে শিল্পীর সঙ্গে শিল্পবোদ্ধা কিংবা শিল্পরসিকের সঙ্গে শিল্পীর জানাশোনার সুযোগ।

শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে প্রধান অতিথি হিসেবে আর্ট সামিটের উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। বক্তব্য রাখেন ঢাকা আর্ট সামিটের চেয়ারম্যান ফারুক সোবহান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সামদানী আর্ট ফাউন্ডেশনের কো ফাউন্ডার ও পরিচালক নাদিয়া সামদানী। সভাপতিত্ব করেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, ‘চিত্রকলায় পৃথিবী বিখ্যাত শিল্পীদের কাজ ও বাংলাদেশী শিল্পীদের কাজ একই ছাদের নিচে প্রদর্শনের এই আয়োজন নিশ্চয়ই প্রশংসার দাবি  রাখে।’

নাদিয়া সামদানী বলেন, ‘ঢাকা আর্ট সামিটের এটি পঞ্চম আয়োজন, বিভিন্ন রকম পরীক্ষণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সাথে যৌথভাবে প্রতি দুই বছর পরপর এই আয়োজনটি করা হয়ে থাকে। এবারের ঢাকা আর্ট সামিটের থিম হচ্ছে সঞ্চারণ বা সিসমিক মুভমেন্টস। এবার বিভিন্ন মুভমেন্ট নিয়ে কাজ করা পৃথিবী-বিখ্যাত চিত্রশিল্পীদের চিত্রকর্ম প্রদর্শিত হচ্ছে।’

এক লাখ ২০ হাজার বর্গফুট আয়তনের শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা ভবনজুড়ে এই সামিটের আয়োজন করা হয়েছে। বৈচিত্র্যময় শিল্প ও শিল্পকর্মের সাজানো প্রদর্শনী উপভোগ করতে প্রথম দিন থেকে দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল লক্ষ করার মতো। বিশেষ করে সামিটের অংশ হিসেবে জাতীয় চিত্রশালা ভবন-সংলগ্ন স্থাপন করা স্কাল্পচার গার্ডেন ঘিরে ছিল দর্শনার্থীর ভিড়।

সামিটের অংশ হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে সাজানো হয়েছে একটি বিশেষ প্রদর্শনী। একাডেমির জাতীয় চিত্রশালার প্রথম তলায় চলছে ‘লাইটিং দ্য ফায়ার অব ফ্রিডম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ শিরোনামে সেই প্রদর্শনীর। এই প্রদর্শনীর সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি।

এবারও দেওয়া হবে সামদানী আর্ট অ্যাওয়ার্ড। এর অংশীদারত্বে আছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ডেলফিনা ফাউন্ডেশন। তারা দীর্ঘদিন ধরে শিল্প বিনিময়ের দিকে সুনজর রেখে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে মিডল ইস্ট, উত্তর আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়ায়। এই দ্বিবার্ষিক সামদানী আর্ট অ্যাওয়ার্ড পাবেন বাংলাদেশের ২২ থেকে ৪০ বছর বয়সী উদীয়মান ও প্রতিভাবান শিল্পী।

সামদানী আর্ট অ্যাওয়ার্ডের আর্ন্তজাতিক জুরিবোর্ড প্রধানের দায়িত্ব পালন করবেন ডেলফিনা ফাউন্ডেশনের পরিচালক এরন সেজার।

সামিটে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশের ১২টি আর্টিস্ট গ্রুপ। গ্রুপগুলোর মধ্যে রয়েছে—আর্টপ্রো, ব্যাক আর্ট, চারুপীঠ, আকালিকো, গিদরি বাউলি, হিলস আর্টিস্ট গ্রুপ, যথাশিল্প, সাঁকো, শনি মঙ্গল আড্ডা অন্যতম।

সুইজারল্যান্ডের বিশিষ্ট গ্যালারি ডিজাইনার দিয়ে সাজানো হয়েছে এবারের সামিট। পরিবেশবান্ধব এই আয়োজন অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে প্লাস্টিকমুক্ত সাজসজ্জা। কোনো কিছুতেই প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়নি। এমনকি বসার আসন পর্যন্ত। পরিবেশসম্মত কাগজ, বাঁশ, বেত ও কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে। এমনকি প্রদর্শনীতে এয়ারকন্ডিশনের ব্যবহার হচ্ছে না।

প্রদর্শনী সবার জন্য উন্মুক্ত। সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টার মধ্যে যে কেউ প্রদর্শনী ঘুরে দেখতে পারবেন। প্রদর্শনী ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত খোলা থাকবে।