বইমেলায় কথাসাহিত্যিক অরুণ কুমার বিশ্বাসের ৪ বই

Looks like you've blocked notifications!

ভৌতিক ও রম্য লেখায় ইতোমধ্যে একটি নিজস্ব ধারা তৈরি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যে পড়ুয়া কথাসাহিত্যিক অরুণ কুমার বিশ্বাস। মূলত ডিটেকটিভ ও অ্যাডভেঞ্চার লিখে অভ্যস্ত। লেখালেখির শুরুটা পদ্য দিয়ে হলেও এখন তিনি গদ্য লিখছেন। তার গোয়েন্দা চরিত্র অলোকেশ রয় একের পর এক রহস্য উদঘাটন করে চলেছে।

রহস্য পত্রিকার নিয়মিত লেখক অরুণ কুমার বিশ্বাস জাতীয় বিভিন্ন দৈনিকে নিয়মিত কলাম ও রম্য লিখে নিজের একটি পাঠকশ্রেণি তৈরি করেছেন। শতাধিক বইয়ের লেখক অরুণ কুমার বিশ্বাসের এবারের বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে চারটি বই।

গল্পে গল্পে গোয়েন্দাগিরি

গোয়েন্দাগল্প পড়তে কে না ভালোবাসে! পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স প্রকাশিত ‘গল্পে গল্পে গোয়েন্দাগিরি’ এমন একটি কিশোর মননোপযোগী বই যেখানে স্কুল-কলেজপড়ুয়া ছেলেমেয়েরা মগজ খাটানোর প্রচুর সুযোগ পাবে। ছোট্ট একটা ভুল তথ্যের কারণে মেজদারোগা নরেশ যেমন ওসি সাহেবের কাছে প্রচণ্ড ঝাড় খায়, তেমনি সামান্য একটা আংটির দাগ দেখে কী করে আসল অপরাধীকে পাকড়াও করা যায়, সেই শিক্ষা এখানে রয়েছে। গোয়েন্দাগল্প পড়ে শুধু যে তথ্য বা জ্ঞানার্জন করা সম্ভব এমন তো নয়, বরং রহস্যঘন এসব আখ্যান পড়তে পড়তে পাঠক নিজেই কখন যে পাক্কা অনুসন্ধানী হয়ে ওঠে তা বুঝতেই পারে না! 

তার মানেই এই নয়, বয়সের ভারে ন্যূব্জ ও অভিজ্ঞ ফোকলা দাদুরা ‘গল্পে গল্পে গোয়েন্দাগিরি’ পড়তে পারবেন না। বরং বলা যায় গোয়েন্দাগল্প পাঠের বিস্তার সর্বত্র এবং সর্বজনীন। কে যে এর পাঠক নন তা নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন!

এখানে গল্পগুলো ধাঁধার মতো করে সাজানো হয়েছে। নাতিদীর্ঘ জটিল সব ধাঁধা রহস্যময়তায় ঘেরা, সেখানে ডিটেকটিভ অলোকেশ রয় যেমন আছেন, তেমনি কোথাও বা আছে কিশোর গোয়েন্দা গুবলু। প্রতিটি গল্পের শেষে একটি করে জিজ্ঞাসা আছে, আর বইয়ের একেবারে শেষপাতে রয়েছে সেসব রহস্যের সঠিক ও যুতসই উত্তর, যা কিনা একজন দুঁদে গোয়েন্দাই সলভ করতে পারে।

গুপ্তি

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স প্রকাশিত গুপ্তিও একটি ডিটেকটিভ গ্রন্থ। ডিটেকটিভ অলোকেশ রয়। একজন চৌকস প্রাইভেট গোয়েন্দা, সাবেক সরকারি কর্তা ও সত্যান্বেষী মানুষ। কথায় বলে, ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে। ঠিক তাই। অলোকেশ বেড়াতে গেলেন বান্দরবান হিল রিসোর্টে। সেখানেও খুনের ঘটনা। গুপ্তির গোপন চেম্বারে মারণাস্ত্র লুকিয়ে রেখেছে বর্ষীয়ান খুনি। কালোকফির সূত্র ধরে একজন জঘন্য খুনিকে ধরে ফেলেন ডিটেকটিভ অলোকেশ। একটা ভাঙা চশমার সূত্র ধরে বেড়া থানাপুলিশ খুঁজে পায় কামুক খুনি রুবেলকে। আবার বাপ-মা তুলে গাল দেওয়ায় দুই ছাত্র মিলে মেরে ফেলে তাদের অংকের শিক্ষক জুটনকে। ক্লুলেস কেস যাকে বলে। কিন্তু সেই মগজ খাটিয়েই তাকে ধরে ফেললেন অলোকেশ রয়। এমন আরো অনেক জটিল কেসের সহজ সমাধান নিয়ে এবারের ডিটেকটিভ গল্পগ্রন্থ ‘গুপ্তি’।       

গহিন সুড়ঙ্গে বিপদ

কুয়ালালামপুর বাতুগুহায় হিমানি নকল বাঘের গর্জন শোনার পর হিসহিসিয়ে বলল, ডিএসপি, গেট রেডি। এক্ষুনি লালচোখ বাঘ আসবে। শুধু বাঘ নয়, বাঘের পেছনে মানুষ। সত্যি সত্যি তাই হল। গুহার ছাদের ফোকল গলে ছিটকে আসা চাঁদের আলোয় বাঘের অস্তিত্ব ক্রমশ স্পষ্ট হয়। ‘ডিএসপি, শুট হিম। প্লিজ, শুট হিম রাইট নাউ’। হিমানি নির্দেশের মতো করে বলল।

সাথে সাথে ইতালিয়ান বেরেটা অটোমেটিক পিস্তল কক্ করে ক্ষিপ্র হাতে ট্রিগার টানলেন কুশারি। কিন্তু একটু বোধ হয় দেরি হয়ে গেল। বাঘ আজ সত্যি সত্যি লাফিয়ে নামলো। এবং তারপর ....!

সে এক লোমহর্ষক রক্তারক্তি কাণ্ড। হিমানির হিসেবে একটু ভুল ছিল। ওটা আসলে আসল বাঘ নয়, বাঘের ডামি। গুড়ুম! গুড়–ম! বাতুগুহার ভিতরে অতীন্দ্রিয় নৈঃশব্দ নিমিষে কাচের কাপ-পিরিচের মতো ভেঙে খানখান হয়ে গেল। বাঘ দুটো ওদের গায়ে পড়া মাত্র হুটোপুটি শুরু হয়ে যায়। সাথে মর্মভেদী আর্তচিৎকার। যেন সত্যি সত্যি বাঘে ধরেছে কাউন্টার-টেররিজম ইউনিটের চৌকস পুলিশ বাহিনীকে। এমনই গল্প নিয়ে বইটি প্রকাশ করেছে বাংলাপ্রকাশ।

হরিয়ানায় হট্টগোল

হরিয়ানার কাছে ছোট্ট শহর গুরগাঁও। সেখানেই ফেসবুক মারফত হিমু আর অনীশের সাথে দেখা হয় চৌকস মেয়ে রাশমণি ওরফে রাশুর। রায়গড় জঙ্গলের ভেতর ভারটগ হাভেলি ঘিরে তৈরি হয় জমজমাট রহস্য। মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সময় বা তারও আগে নির্মিত এই আলিশান হাভেলি মেলা হাতঘুরে আসে ব্রিটিশ সাহেব ভারটগের কাছে। সেই ভারটগ হাভেলি ঘিরে একের পর এক ঘটতে থাকে ভয়ঙ্কর সব কাণ্ড। মধ্যরাতে জানালার কার্নিশে কটমট করে তাকায় কালোপাড় লালশাড়ি জড়ানো ছায়ামানবী। রহস্য ঘাঁটতে গিয়ে আচমকা মারা পড়ে নির্দোষ দারোয়ান জগদীশ। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট বলে, জগাদাকে নাকি শ্বাসরোধ করে মারা হয়েছে। গলায় তার শাড়ির আঁচলের দাগ ছিল।

রাশুর নেতৃত্বে রাতের অন্ধকারে হাভেলিতে হানা দেয় হিমু ও অনীশ। মাঝরাতে অকারণ পিয়ানো বেজে ওঠার রহস্য খুঁজতে না খুঁজতেই ছায়ামানবীর আক্রমণের শিকার হয় ওরা। রাশু আর হিমু পালিয়ে বাঁচে, ধরা খায় বেচারা অনীশ। তারপর....? টান টান উত্তেজনা নিয়ে গল্পের কাহিনী জানতে হলে পড়তে হবে অনিন্দ্যপ্রকাশ প্রকাশিত এই বইটি।