বিশ্ব বাবা দিবস আজ
বাবা শাশ্বত, চির আপন। ভাষাভেদে হয়তো শব্দ বদলায়, স্থানভেদে বদলায় উচ্চারণও। কিন্তু বদলায় না রক্তের টান। আমেরিকায় যিনি ড্যাড, বাংলায় তিনি পিতা। ফারসিতে বাবা। সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য নিজের বর্তমানকে হাসিমুখে উৎসর্গ করা এই বাবাদের আজ আলাদাভাবে স্মরণ করার দিন। বাবার প্রতি সন্তানের চিরন্তন ভালোবাসার প্রকাশ প্রতিদিনই ঘটে। অবশ্য বাবার জন্য বিশেষ দিন হিসেবে প্রতিবছর বিশ্ব বাবা দিবস পালিত হয়ে আসছে। প্রতিবছর জুন মাসের তৃতীয় রোববার এই দিবস উদযাপন করা হয়। আজ ২১ জুন, রোববার বিশ্ব বাবা দিবস।
নিঃসন্দেহে বাবা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ উপহারগুলোর একটি। সন্তানের সব বায়নাই মায়ের কাছে। এটা চাই, ওটা দাও। মা এসব আবেদন-নিবেদন শোনেন। আর অনেকটা বাস্তবায়ন করেন বাবা। বাবা-মায়ের দিন-রাত পরিশ্রম, খাটুনি। এর সামান্যও নিজের জন্য নয়; বরং সন্তানের মুখে হাসি ফোটানোর সব চেষ্টা করেন তিনি। বাবাদের ভেঙে পড়তে নেই। কাঁদতে মানা। কারণ, বাবা কাঁদলে, বাবা ভেঙে পড়লে সন্তানদের আর আশা থাকে না। কবির ভাষায়, ‘ঝিনুক নীরবে সহো/ ঝিনুক নীরবে সহো,/ ঝিনুক নীরবে সহে যাও/ ভিতরে বিষের বালি, মুখ বুঁজে মুক্তা ফলাও!’ কবি আবুল হাসানের সেই ঝিনুকটিই যেন বাবা। সব কষ্ট একা বুকে বয়ে বেড়ান। সন্তানকে বুঝতে দেন না।
বিশ্ববিখ্যাত চলচ্চিত্র ‘লাইফ ইজ বিউটিফুল’-এর সেই বাবার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নির্মিত চলচ্চিত্রে খুঁজে পাওয়া যায় অসাধারণ এই বাবাকে। অভিনেতা রবার্তো বেনিনির তুলে ধরা চরিত্রটির নাম গুইডো। শিশুসন্তানের নাম যশোয়া। জার্মান সেনারা ট্রেনে করে কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে নিয়ে যায় পিতা-পুত্রকে। অসহনীয় যন্ত্রণার জীবন। যেকোনো মুহূর্তে মৃত্যু। কিন্তু ছেলেকে এ পরিস্থিতি এতটুকু বুঝতে দেননি বাবা। ছেলেকে তিনি বলার চেষ্টা করেন, এটা একটা খেলা। যে দ্রুত বেশি পয়েন্ট পাবে, তাকে সত্যিকারের একটি ট্যাঙ্ক উপহার দেওয়া হবে। বাবা ছেলেকে বলেন, সে যদি মায়ের কাছে যেতে চায়, খিদে পেলে খাওয়ার জন্য কান্না করে, আর ঘরে লক্ষ্মী ছেলের মতো লুকিয়ে না থাকে, তাহলে পয়েন্ট কাটা যাবে। এভাবে বাবা করুণ মৃত্যুর শিকার হলেও কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের আতঙ্ক থেকে সন্তানকে শতভাগ রক্ষা করেন।
বিশ্বের কয়েকটি দেশ ভিন্ন মাসের কয়েকটি ভিন্ন তারিখে বাবা দিবস পালন করলেও একটি বিশাল অংশ, যেমন : বাংলাদেশসহ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, চিলি, কলম্বিয়া, কোস্টারিকা, কিউবা, সাইপ্রাস, চেক প্রজাতন্ত্র, ফ্রান্স, গ্রিস, হংকং, ভারত, আয়ারল্যান্ড, জ্যামাইকা, জাপান, মালয়েশিয়া, মেক্সিকো, নেদারল্যান্ডস, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, সুইজারল্যান্ড, বাংলাদেশ, ভেনেজুয়েলা, জিম্বাবুয়েসহ আরো কিছু দেশে জুনের তৃতীয় রোববার এ বিশেষ দিন পালন হয়।
প্রসঙ্গত, ১৯০৮ সালের ৫ জুলাই আমেরিকার পশ্চিম ভার্জিনিয়ার ফেয়ারমন্টের এক গির্জায় সর্বপ্রথম বাবা দিবস উদযাপিত হয় বলে তথ্য পাওয়া যায়। পাশাপাশি সনোরা স্মার্ট ডড নামের ওয়াশিংটনের এক ভদ্রমহিলার মাথাতেও বাবা দিবসের চিন্তা আসে। ১৯০৯ সালে ভার্জিনিয়ার বাবা দিবসের কথা তিনি জানতেন না। ডড এই ধারণা পান গির্জার এক পুরোহিতের বক্তব্য থেকে। সেই পুরোহিত মাকে নিয়ে অনেক ভালো ভালো কথা বলছিলেন। তখনই তার মনে হয়, বাবাদের নিয়েও কিছু করা দরকার। পরে তিনি সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগে পরের বছর ১৯১০ সালের ১৯ জুন থেকে বাবা দিবস উদযাপন শুরু করেন। কালক্রমে এসেছে বাংলাদেশেও।